পুলিশের লাঠিপেটায় তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির ঘেরাও কর্মসূচি পণ্ড

পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ও লাঠিপেটা করে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পণ্ড করে দিয়েছে। এর প্রতিবাদে আগামী ২ জানুয়ারি সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে জাতীয় কমিটি। বিদ্যুতের দাম কমানো, রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র নবায়ন-মেরামত ও সম্প্রসারণ করে সংকট নিরসন এবং রেন্টাল, কুইক রেন্টালসহ জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার জ্বালানি


মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দিয়েছিল এই কমিটি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন কমিটির নেতা-কর্মীরা। সেখানে ঘেরাও-পূর্ব সমাবেশে বক্তারা বলেন, কতিপয় গোষ্ঠীকে ব্যবসা পাইয়ে দিতে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি করে দেশকে ঋণগ্রস্ত ও জনগণকে বিপদগ্রস্ত করা হয়েছে। এ কারণে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গোষ্ঠীর মুনাফা ও লুণ্ঠনের রাস্তা তৈরি করতে বারবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে।
জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের সমালোচনা করে বলেন, ‘এই পদ্ধতির ফলে ব্যক্তিবিশেষের পকেটে কুইক মানি আসার সুযোগ হয়েছে।’
কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, বিদ্যুৎসংকটের সাময়িক সমাধান হিসেবে কুইক রেন্টাল পদ্ধতির প্রচলন অর্থনীতির ওপর চাপ ফেলছে। আর এর ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
সমাবেশ শেষে জাতীয় কমিটির নেতারা পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী, মিছিল নিয়ে গুলিস্তান-পল্টন হয়ে পুনরায় প্রেসক্লাবের পাশ দিয়ে সচিবালয়ের দিকে এগোতে চাইলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। এরপর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে এবং দুই দফায় কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এতে ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক মলয় সরকার আহত হন। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি কমিটির সদস্য এবং সিপিবির নেতা রুহিন হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ হঠাৎ বাধা দিয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই তারা টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এতে মলয়, মাসুদ, আনোয়ার, ইউসুফ, হাসান, আপন, সুমনাসহ ২৫ জন আহত হয়েছেন।’
পুলিশের বাধার পর প্রেসক্লাবের সামনে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন তেল-গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, কর্মসূচিতে বাধার প্রতিবাদে ২ জানুয়ারি বিক্ষোভ করা হবে। এ ছাড়া ১৭ জানুয়ারি দেশের সব বিদ্যুৎ কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ হবে।
এদিকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণসংহতি আন্দোলন, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট পৃথক বিবৃতিতে জাতীয় কমিটির মিছিলে পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বাসদ ও গণসংহতি আন্দোলন আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট আগামীকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ মিছিল করার কর্মসূচি দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.