ডিজিটাল রেল যোগাযোগ বাস্তবায়নের পথে বাধা by আমিনুল ইসলাম দীদার

ন্ত্রিসভায় সম্প্র্রতি রদবদলের মধ্য দিয়ে রেলমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। দায়িত্ব নিয়েই তিনি ঘোষণা দিয়েছেন,'সারা বিশ্বে রেলপথ লাভজনক। কিন্তু বাংলাদেশে রেলপথ হচ্ছে লোকসানের খাত। রেলের লোকসানের পেছনের কালো বেড়ালকে খুঁজে বের করব।' তাঁর এই সাহসী উদ্যোগের ঘোষণাকে স্বাগত জানাই। এত দিন আমরা শুধু যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনাই দেখেছি। এখন সেই যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে রেলওয়েকে


আলাদা করা হয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে বর্তমান রেলমন্ত্রীর সাহসী ঘোষণার পর অন্তত রেল যোগাযোগে আমাদের প্রত্যাশা বেড়েছে অনেক। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, রেলওয়ের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করায় সেই প্রত্যাশা বাস্তবায়নের পথ অনেকটাই সহজ হবে। রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমস্যা অনেক। প্রথম সমস্যা হলো সময়। সময়মতো ট্রেন যাত্রাস্থলে না পেঁৗছানোটাই একটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। তাই সাধারণ যাত্রীরাও এই অনিয়মটিকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। এর পরিবর্তন অবশ্যই দরকার। প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, রেলওয়ের ইঞ্জিন সংকটের কারণেই এ সমস্যাটা প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। ডিজিটাল রেল যোগাযোগের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ট্রেন সঠিক সময়ে স্টেশন থেকে ছাড়া ও পেঁৗছানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় দেখা যায়, একটি স্থানের সঙ্গে অন্য একটি জায়গার সরাসরি রেল সংযোগ লাইন না থাকায় যাত্রাপথে ট্রেন পরিবর্তনের দরকার হয়। এতে সময় নষ্ট হয় বেশি। অভিযোগ রয়েছে, রেললাইনের দুরবস্থার কারণেও রেল চলাচলে সময় লাগে বেশি। এ ক্ষেত্রে রেললাইন সংস্কারের ঘোষণা অত্যন্ত কার্যকরী পদক্ষেপ। রেললাইন সংস্কারের পর ডিজিটাল প্রযুক্তির সফল প্রয়োগের মাধ্যমে রেলক্রসিংয়ের সময় কমিয়ে আনা সম্ভব। রেলের যাত্রীসেবার মান খুবই নিম্ন। সেবার মান উন্নয়নের জন্য প্রথমেই আসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি। রেলের প্লাটফর্ম, স্টেশনের কাউন্টার, যাত্রীদের বসার স্থান সবই নোংরা থাকতে দেখা যায়। স্টেশনের টয়লেটের পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থাও খুবই নাজুক। অথচ ট্রেনের জন্য যাত্রীদের স্টেশনেই অপেক্ষা করতে হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে যারা নিয়োজিত, সেসব ব্যক্তির দায়িত্বে অবহেলাই এর জন্য দায়ী। সমস্যা আরো আছে অনেক এবং ডিজিটাল রেল যোগাযোগ বাস্তবায়নের পথে এসবই বড় অন্তরায়। অভিযোগ আছে, রেল খাতে বছরে লোকসান ৫০০ কোটি টাকারও বেশি। এর মূল কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে দুর্নীতি। রেলের দুর্নীতির ক্ষেত্র অনেক। রেলের তেল চুরি খুবই আলোচিত একটি বিষয়। অনেক সময় দেখা যায়, ট্রেন চলাকালে হঠাৎ করেই মাঝপথে নির্জন ও জঙ্গলাকীর্ণ স্থানে ট্রেন থামিয়ে দেওয়া হয়। এসব স্থানেই অবৈধ মালামাল লোড-আনলোডের কাজ হয়। এও অভিযোগ আছে, এসব মালামাল পরিবহন ও বিক্রয় কাজের সঙ্গে সিন্ডিকেট চক্র জড়িত, যারা দেশের ভেতরে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। ডিজিটাল রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতকে উদাহরণ হিসেবে নিতে পারে। ভারত পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম রেলপথধারী দেশ। সে দেশের সাবেক রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই ভারতের ৫০টি স্টেশনকে আন্তর্জাতিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন বিশ্বমানের স্টেশনে পরিণত করেন। এ ছাড়া ৩৭৫টি স্টেশনকে আদর্শ স্টেশন হিসেবে ঘোষণা করেন। গুরুত্বপূর্ণ যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য বাজার, ফুড-স্টল, রেস্তোরাঁ, বইয়ের স্টল, দোকানসহ সব কিছুই আছে, যার অধিকাংশই পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে পরিণত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ভারতকে অনুসরণ করতে পারে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে রেলের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব এবং সেগুলো হবে লাভজনক। দীর্ঘদিন যাবৎ ট্রেনের টিকিটের মূল্য স্থির রাখা আছে। যাত্রীসেবার মান বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনের টিকিটের মূল্যও বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এতে লোকসানের পরিমাণ কমে যাবে। রেলের জন্য মোবাইলে টিকিট করার পদ্ধতি চালু হলেও এখানেও দুর্নীতির পরিচয় মেলে। এ ক্ষেত্রে ই-টিকিট চালুর ঘোষণাটি যাতে ফলপ্রসূ হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। রেলে মালামাল পরিবহন খরচ অপেক্ষাকৃত কম। তার পরও রেলে কনটেইনারে পণ্য পরিবহন দিন দিন কমে যাচ্ছে। এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে। নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আধুনিকায়নের সঙ্গে সঙ্গে রেলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং দক্ষ লোকবল নিয়োগ করতে হবে। রেলের উন্নয়ন শুধু যে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি ঘটাবে তা নয়, এর সঙ্গে অর্থনৈতিক গতিশীলতার বিষয়টিও সম্পৃক্ত। ডিজিটাল রেল যোগাযোগ বাস্তবায়ন হলে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক চিত্রই বদলে যাবে। দ্রুতগতির রেলসেবা এখন সময়ের দাবি, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে এর কোনো বিকল্প নেই।
লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
aminul.didar@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.