গণতন্ত্র হত্যা দিবসে ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশ- একদলীয় নির্বাচনের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেছেন, শেখ হাসিনার সরকার কেয়ামত পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার জন্য একদলীয় নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে।
দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে সরকারের এ ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে। গতকাল গণতন্ত্র হত্যা দিবসে রাজধানীর নয়া পল্টনে ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে (২৫ জানুয়ারি) শেখ মুজিব সরকার গণতন্ত্র হত্যা করে একদলীয় বাকশাল গঠন করেন। এ কারণে দিনটিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। তরিকুল ইসলাম বলেন, লাখো শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্র শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি হত্যা করেছিলেন। আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্যই তিনি ১১ মিনিটের মধ্যে গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল কায়েম করেন। বর্তমান সরকারও কেয়ামত পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার জন্য একদলীয় নির্বাচনের ষড়যন্ত্র করছে। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা একদলীয় নির্বাচন করতে পারবেন না। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ছাড়া নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। জনগণের তীব্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একদলীয় নির্বাচনের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে। সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র গণ-অভ্যুত্থান সংঘটনের লক্ষ্যে তিনি ১৮ দলীয় জোটের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধভাবে শপথ গ্রহণের আহ্বান জানান।

তরিকুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের কাছে প্রবীণ সাংবাদিক এ বি এম মূসা, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী, রাজনীতিক ড. কামাল হোসেন, অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসসহ দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী সবাই খারাপ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সালফিউরিক এসিড কারো ওপর ছিটালে তিনি সরকারের দৃষ্টিতে ভালো লোক, না হলে তিনি খারাপ বিবেচিত হন। সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, শেখ মুজিবের সময় ১৬ বছরের বাসন্তী জাল পরে লজ্জা নিবারণ করতে বাধ্য হয়েছিল। শেখ মুজিব বলেছিলেন, আমি পেয়েছি চোরের খনি।বিএনপি নেতা বলেন, সেই চোরের খনি আজ শেয়ারবাজার, কুইক রেন্টাল, হলমার্ক ও ডেসটিনির মাধ্যমে দেশের মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, শেখ মুজিবের আমলের মতো আজো বিরোধীদলীয় নেতাদের বাড়িঘর থেকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতারা এখন বিরোধী দলের নেতাদের ‘ইলিয়াস আলীর সাথে দেখা করিয়ে দেয়া হবে’ বলে হুমকি দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, এ সরকার ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ বহু মানুষকে গুম করেছে। আরো বহু নেতাকে গুম করার জন্য তালিকা তৈরি করেছে। কিন্তু এভাবে গুম করে শেখ মুজিবও টিকতে পারেননি, এ সরকারও টিকতে পারবে না।

জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এ দেশের মানুষ পায় রক্ষীবাহিনীর গুম, অত্যাচার, খুন ও ধর্ষণ। আজো প্রতিনিয়ত মানুষ গুম হচ্ছে, খুন হচ্ছে। তিনি বলেন, শত অত্যাচার হলেও ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা রাজপথে থেকে তীব্র গণ-আন্দোলন গড়ে তুলে এ সরকারের পতন ঘটাবে। নব্যবাকশালী এ সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র মুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ নেতাদের গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের কারাগার থেকে মুক্ত করে আনা হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে এতে আরো অংশ নেন, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আ: লতিফ নেজামী, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান,  এনপিপি সভাপতি শেখ শওকত হোসেন নিলু, বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, ফজলুল হক মিলন, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবকদল সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল প্রমুখ। সাদেক হোসেন খোকা বলেন, র‌্যাব-পুলিশের পোশাকে এখন গুম ও খুন করা হচ্ছে। তিনি পুলিশ সদস্যদের সরকারের অনৈতিক কাজে সহযোগিতা না করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিশ্বজিৎ হত্যাসহ সব ঘটনারই বিচার হবে, কাউকে রেহাই দেয়া হবে না। তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচন কেউ মানবে না : হান্নান শাহ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রি. জে. (অব:) আ স ম হান্নান শাহ বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচন এ দেশে বা বাইরের কেউ মানবে না। তিনি সরকারকে অবিলম্বে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা পুনঃসংযোজনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই দাবি না মানলে রাজপথের আন্দোলন আরো তীব্রতর হবে। গতকাল রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপির সহসমাজসেবা সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক সাহাবুদ্দিন আহমেদের উদ্যোগে ওই এলাকায় দুস্থ দরিদ্রদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.