দেশের গণতন্ত্র ক্রমেই বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে- রাজনীতির নামে সিন্ডিকেট গঠন করে রাষ্ট্রের টাকা লুটপাট চলছেঃ ফরহাদ মজহার

বাংলাদেশের গণতন্ত্র ক্রমেই বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেছেন, ‘এ অবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখ ও লজ্জাজনক ব্যাপার। কারণ সঠিক গণতন্ত্র ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। আর গণতন্ত্র কোনো কারণে বিপন্ন হলে সেটা হবে স্বাধীনতার চেতনার ওপর সবচেয়ে বড় আঘাত।’ গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস কাবে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড পিস স্টাডিজ (সিএসপিএস) আয়োজিত ‘সমকালীন বাংলাদেশের রাজনীতি-প্রধান সঙ্কট এবং উত্তরণ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। সংগঠনের চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব শাহ আব্দুল হান্নানের সঞ্চালনায় জাতীয় প্রেস কাবে এ অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড.পিয়াস করিম, কলামিস্ট সাদেক খান, সাবেক সচিব ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার হায়দার আলী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, সাবেক সচিব এস এম জাহরুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট ফেরদৌস আক্তার ওয়াহীদা প্রমুখ। গোলটেবিল  বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হাসান মোহাম্মদ। এ ছাড়া বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিরাও তাদের মতামত তুলে ধরেন।

ড. আকবর আলি খান বলেন, বাংলাদেশের আজকে প্রধান সমস্যা হচ্ছে গণতন্ত্রের সমস্যা। সঠিক গণতন্ত্রের জন্য শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন। কিন্তু এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চা নেই। সে জন্য অরাজনৈতিক শক্তিগুলো গণতন্ত্রের যতটা ক্ষতি করেছে রাজনৈতিক দলগুলোও কোনো অংশেই কম করেনি।

দেশের শাসনমতা এককেন্দ্রিক হয়ে আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা আমাদের বড় ব্যর্থতা। তাই গণতন্ত্রের সঠিক চর্চার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা বাড়ানো উচিত।

দেশে সুশাসনের অভাব রয়েছে মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, এ কারণে জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এ উপদেষ্টা বলেন, ‘স্বল্প মেয়াদে নির্বাচন নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে। এ জন্য আমি ইতঃপূর্বে চারটি ফর্মুলা দিয়েছিলাম। যার নাম দিয়েছিলাম ‘নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকার’। আর সেটি শাসনতন্ত্র পরিবর্তন করেও হতে পারে অথবা না করেও হতে পারে। এতে আইনগত কোনো বাধা নেই। কারণ, আইন মানুষের জন্য, মানুষ আইনের জন্য নয়। তবে এর প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার সদিচ্ছার অভাব। আর দলগুলো সদিচ্ছা না দেখালে দেশের আপামর জনগণকেই চাপ সৃষ্টি করতে হবে। বাইরের কোনো রাষ্ট্র চাপ দিয়ে তা পারবে না।’

নির্বাচনকালীন একটি গ্রহণযোগ্য সরকারব্যবস্থা প্রণয়ন করতে পারলেই দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন আকবর আলি।

ফরহাদ মজহার বলেন, ‘সংবিধানে বর্তমান সংশোধনীর ফলে বাংলাদেশ বলে আদৌ কোনো দেশ আছে কিনা আমার সন্দেহ আছে।’ তিনি বলেন, নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র নয়। রাষ্ট্র যখন নাগরিকদের অধিকার ুণœ করে তখন তাদের সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে উৎখাত করাই হলো গণতন্ত্র।’ বর্তমান রাজনীতি আসলে রাজনীতি নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, রাজনীতির নামে একটা সিন্ডিকেট গঠন করে রাষ্ট্রের টাকা লুটপাট চলছে। এদেরকে উৎখাত করতে না পারলে সঠিক গণতন্ত্র কায়েম হবে না।

তিনি আরো বলেন, সংসদের সার্বভৌমত্ব মানে সাংবিধানিক একনায়কতন্ত্র। মানে যেই ক্ষমতায় যাবে তার কথা ছাড়া কিছু হবে না। এ অবস্থা চলতে পারে না।

ড. পিয়াস করিম বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ অবস্থার উত্তরণে একটা আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। আর সেটা সম্ভব না হলে আওয়ামী লীগ-বিএনপি এবং হাসিনা-খালেদার বাইরে নতুন কিছু নিয়ে ভাবতে হবে। আমাদের তথাকথিত এই রাজনৈতিক ধারা পাল্টাতে হবে।’

সাদেক খান বলেন, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি আজ রাজনৈতিক দলবাজি আর জোটবাজির সংস্কৃতিতে রূপ নিয়েছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

এ দেশে নামেই বহুদলীয় গণতন্ত্রের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা নেই মন্তব্য করে ব্যারিস্টার হয়দার আলী বলেন, রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। অনুষ্ঠানের সারমর্ম টানতে গিয়ে সঞ্চালক শাহ্ আব্দুল হান্নান বলেন, ‘আমাদের অনেক সমস্যা আছে। তবে বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধান করতে হলে নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে এটি সরকারকে মেনে নেয়া উচিত।’
      

No comments

Powered by Blogger.