রাজধানীতে মৌসুমের প্রথম ঝড়, শিলাবৃষ্টি- আকস্মিক আঘাতে লণ্ডভণ্ড বইমেলা

 রাজধানীতে মৌসুমের প্রথম ঝড়, শিলাবৃষ্টি। কালবৈশাখীর মতোই অকালের এ ঝড়ের সঙ্গে নেমে আসে প্রচ- শিলাবৃষ্টি। চরম দুর্ভোগে পড়ে লোকজন। শিলাবৃষ্টিতে রোপা ইরি বোরো, ইটভাঁটি, সবজি, আমের মুকুলের হয়েছে ব্যাপক তি।
ধুলোঝড়ে অন্ধকারে ঢেকে যায় রাজধানী। আকস্মিক এ ঝড়ের বেগ ছিল ঘণ্টায় ৫৫ কিলোমিটার। আর ঢাকায় রেকর্ড হয়েছে ৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। অন্ধকার পরিবেশে দৌড়াদৌড়ি এবং হাল্কা যানবাহন উল্টে আহত হয় অনেকে। শিলাবৃষ্টিতে ভিজে তিগ্রসত্ম হয় অনেক মালামাল। ল ভ হয়ে পড়ে বাংলা একাডেমীর একুশে বইমেলা। মেলার অধিকাংশ স্টলের বই-পুসত্মক ভিজে যায়। নগরীর অনেক নিচু স্থানে জমে বৃষ্টির পানি।
আবহাওয়া অফিস জানায়, এ অকালবৈশাখী ঝড়ের উৎপত্তিস্থল রাজধানীর পশ্চিমে পাবনার দিকে। ঝড়টি রাজধানী হয়ে দেশের দণি-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়। রাজধানীতে ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫৫ কিলোমিটার এবং রেকর্ড হয়েছে ৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। সূত্রটি আর জানায়, আজ বৃহস্পতিবার নোয়াখালী ও কুমিলস্না অঞ্চলসহ রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের দু'এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সূত্রটি আরও জানায়, মার্চে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। দিনের তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে। তবে উত্তর_পশ্চিমাঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস হতে পারে। স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে এপ্রিলেও। এ মাসে দেশের উত্তর-মধ্যাঞ্চলে ৫ থেকে ৭ দিন মাঝারি থেকে তীব্র কালবৈশাখী/ বজ্রঝড় এবং দেশের অন্যত্র ৪ থেকে ৬ দিন হাল্কা থেকে মাঝারি কালবৈশাখী/বজ্রঝড় হতে পারে। দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ২ থেকে ৩টি মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং অন্যত্র ২ থেকে ৩টি মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এপ্রিলে বঙ্গোপসাগরে দু'একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। যার মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
বুধবার রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ স্থানে বয়ে যায় মৌসুমের প্রথম অকালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টি। কিন্তু ওই দিনের সকালের আবহাওয়া ছিল অন্যরকম। সকালে রাজধানীতে বিরাজ করে মাঝারি ধরনের কুয়াশা। সকালের হাওয়ায় ফুটে ওঠে শীতের আমেজ। শীত নেমে আসার আশঙ্কা করতে থাকে নগরবাসী। কিনত্ম সকাল সাড়ে ন'টার পরই নগরীর আকাশে ওঠে সূর্যের হাসি। বিকেল চারটার পর নগরীর আবহাওয়া যেন আরেক রূপ ধারণ করে। আকাশে জমতে থাকে মেঘ। বইতে থাকে হিমেল বাতাস। প্রশানত্মি অনুভব করে নগরবাসী। কিন্তু বিকেল পাঁচটার পর বাড়তে থাকে বাতাসের বেগ। নগরীর আকাশ চলে যায় মেঘের দখলে। মেঘের অগ্রদূত হিসেবে হঠাৎ করে সৃষ্টি হয় ধূলিঝড়। ছোটাছুটি শুরম্ন হয়ে যায় অপ্রস্তুত রাজধানীবাসীর। তীব্র বাতাসের বেগ ও ধূলিঝড়ের অন্ধকারে ঢেকে যায় রাজধানী। আর অন্ধকারময় অবস্থায় নেমে আসে প্রচ- শিলাবৃষ্টি। ছোটাছুটি করে নিকটস্থ স্থানে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করে পথচারীরা। বুঝে ওঠার আগেই বাতাসের তীব্র বেগে ভেঙ্গে পড়ে অনেক বাসাবাড়ির দরজা-জানালার কাঁচ। বাতাসে উড়ে যায় বাসাবাড়ীর ছাদে ও বারান্দায় শুকাতে দেয়া কাপড়-চোপড়। অন্ধকার পরিবেশে স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানী। এমন পরিবেশে শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ের হাত থেকে রেহাই পেতে ছোটাছুটি করতে গিয়ে আহত হয় অনেক পথচারী। বাতাসে উড়ে যায় ফুটপাথে সাজানো অনেক ভাসমান দোকানপাট। পার্কিং করে রাখা মোটরসাইকেলসহ অনেক হাল্কা ধরনের যানবাহন বাতাসের ধাক্কায় পড়ে গিয়ে তিগ্রসত্ম হয়। রাজধানীর সর্বত্র জমে ওঠে শিলাসত্মূপ। বাংলা একাডেমীর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে সৃষ্টি হয় চরম আতঙ্ক। মেলা দর্শনার্থীরা এলোপাতাড়ি দৌড়াতে শুরম্ন করেন। নজরম্নল মঞ্চে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু জায়গার সংকুলান না থাকায় ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে অনেক দর্শনার্থীকে। অনেক দর্শনার্থী মেলার বিভিন্ন স্টলে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করে। বৃষ্টিতে ভিজে যায় অধিকাংশ স্টলের বই-পুসত্মক। বাতাসে উড়ে যায় অনেক স্টলের সাইনবোর্ড ও ছাউনি। স্টলগুলোর বেচাকেনা চরমভাবে ব্যাহত হয়। বৃষ্টিতে নগরীর রাসত্মার দু'ধারে বিশেষ করে নিচু এলাকায় পানি জমে। হাতিরপুল ভূতের গলির বাসিন্দা তমাল রিছিল জানান, ঝড়ে কবলে পড়ে হাতিরপুল কাঁচাবাজার মোড়ে বেশ কয়েকটি রিকশা ও একটি মালবাহী ভ্যান উল্টে যায়। এতে এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। স্টাফ রিপোর্টার মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান বুধবার মুন্সীগঞ্জে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি ও ঝড় হয়েছে। জেলার সিরাজদিখান, টঙ্গীবাড়ি, লৌহজং, শ্রীনগর ও গজারিয়া উপজেলার বহু কাঁচা ঘরবাড়ি,গাছপালা ও বিদু্যতের লাইন ঝড়ে উপড়ে ফেলেছে। শিলাবৃষ্টিতে আলু, টমেটো, কপি, উচ্ছে, লাউ, শিম, মিষ্টি কুমড়া ও আমের মুকুলের তি হয়েছে বলে জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতর জানায়। পৌনে ৬টা থেকে শুরম্ন হয়ে আধা ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এই অবস্থা চলতে থাকে। তবে এ রিপোর্ট লেখার সময় (পৌনে ৮টা) হাল্কা বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইছিল। হঠাৎ করে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে প্রচ- ঝড় শুরম্ন হয়। পরে হাল্কা বৃষ্টির সঙ্গে প্রচ- শিলাবৃষ্টি। টিনের ঘরে এই শিলাবৃষ্টির শব্দে কান ঝালাপালা।
জেলা প্রশাসক মোঃ মোশারফ হোসেন জানান, তাৎণিক জেলার বড় ধরনের কোন য়তির খবর পাওয়া যায়নি। তবে ফসলের কিছু তি হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.