জড়িত বিএসএফ- সীমান্তে ব্যাপক এলাকা মানব-মাদক পাচারকারীদের স্বর্গরাজ্য

সীমান্তে গুলি চালিয়ে নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যার পর এবার বিএসএফের বিরুদ্ধে মানব ও মাদক পাচারকারীদের সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে ভারতেই।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের দাবি, বাংলাদেশ থেকে মানব পাচারে সহযোগিতা করছে ভারতের সীমান্তরী বাহিনীর সদস্যরা। বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে অস্ত্র ও মাদক পাচারেও বিএসএফ সদস্যদের মদদ রয়েছে জানিয়ে তা বন্ধে অবিলম্বে বিএসএফ কর্তৃপরে সাথে আলোচনার সুপারিশ করেছেন রাজ্যের পুলিশ প্রধান। ভারতের বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত জেলাগুলো থেকে আসা পুলিশের নথিপত্রসহ সরকারের কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের মহাপরিচালক নপরাজিত মুখোপাধ্যায় এ অভিযোগ করেন। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা জানান, এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর সেখানকার সীমান্ত-এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে ডিজিকে একটি প্রতিবেদন দেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সীমান্তে এখন বিএসএফের একাংশই মানুষ পাচারে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র দফতরের ওই কর্মকর্তা জানান, প্রতিবেদনে ভারতের ভেতরে কয়েক বাংলাদেশীর অনুপ্রবেশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যারা বলেছে বিএসএফের সাথে বোঝাপড়ার মাধ্যমেই তারা এ দেশে ঢুকেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবৈধ অভিবাসী ছাড়াও বাংলাদেশের সাথে অস্ত্র ও মাদক পাচারের জন্য ক্রমেই পছন্দের রুট হয়ে উঠছে রাজশাহী করিডোর। প্রতিবেদনটি গোপনীয় হওয়ায় এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি রাজ্যের কর্মকর্তারা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, সীমান্তজুড়ে মানুষের অবৈধ আনাগোনার সাথে বিএসএফের একাংশের সহযোগিতার বিষয়ে ‘সুনির্দিষ্ট’ বর্ণনা রয়েছে পুলিশ প্রধানের প্রতিবেদনে। বিএসএফের পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বংশীধর শর্মা তার বাহিনীর কিছু ইউনিট সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মহাকরণ থেকে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ প্রধানের প্রতিবেদনে বিশেষ করে বিএসএফের মুর্শিদাবাদের দুই ব্যাটালিয়ন-১৩০ ও ১৫১ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠেছে, যার সাথে আরো দু’টি জেলা সংযুক্ত।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলের সাথে সংযুক্ত মুর্শিদাবাদ থেকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থার খবর পাওয়া গেছে। সীমান্তজুড়ে ব্যাপক এলাকা মানব ও মাদক পাচারকারীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে। তারা বিএসএফের কারো কারো সহযোগিতা পাচ্ছে। অন্য দিকে বিএসফের কয়েক কর্মকর্তার দাবি, বিএসএফ সীমান্তে মাদক ও গরু পাচার রুখতে কড়া অবস্থান নিলে পুলিশ ও স্থানীয় রাজনীতিকেরা অসুবিধায় পড়ে যান। তাদের দাবি, যেসব কর্মকর্তা কড়া মনোভাব দেখান, তাদের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশের একটা অংশ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এ েেত্রও তেমন কিছু ঘটেছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভারতীয় মিডিয়াগুলো জানায়, পশ্চিমবঙ্গের বিএসএফ ও রাজ্য সরকারের মধ্যে উত্তেজনা নতুন কোনো ঘটনা না হলেও রাজ্য পুলিশ প্রধানের প থেকে বিএসএফের প্রতি সরাসরি অভিযোগের ঘটনা বিরল। পুলিশ ক্যাডার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে নপরাজিত ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থায়ও কাজ করেছেন। পুলিশ প্রধান হিসেবে পদোন্নতির আগে বামফ্রন্ট সরকারের সময় তিনি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা শাখার প্রধান ছিলেন। মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনায় তার সময়েই সফলতা আসে। ওই সময় পশ্চিমবঙ্গে কর্মরত মাওবাদীদের শীর্ষ অধিকাংশ নেতা নিষ্ক্রিয়, নিহত অথবা গ্রেফতার হন। এর মধ্যে রয়েছেন মাওবাদী সামরিক কমিশনের প্রধান কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেনজি, যিনি ‘এনকাউন্টারে’ নিহত হন। সীমান্তে গুলি চালানোর জন্য বাংলাদেশের সমালোচনাবিদ্ধ বিএসএফের বিরুদ্ধে এবার অভিযোগ উঠেছে খোদ ভারতেই।
       

No comments

Powered by Blogger.