ডা. নুরুল ইসলামের প্রয়াণ-বাংলাদেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি

জাতীয় অধ্যাপক নুরুল ইসলামের প্রয়াণ বাংলাদেশের চিকিৎসাজগতের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। ৮৪ বছরের জীবনে তিনি দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নয়নে যে অবদান রেখে গেছেন, সে জন্য দেশের মানুষ তাঁকে দীর্ঘকাল স্মরণ করবে।
অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত চিকিৎসক গড়ে তোলার জন্য তিনি উদ্যোগী ভূমিকা রেখেছেন, বিশেষ করে চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষা লাভের ক্ষেত্র প্রসারিত করার জন্য পিজি হাসপাতালের (বর্তমানের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়) চিকিৎসাসুবিধা, গবেষণা ও স্নাতকোত্তর শিক্ষাসুবিধা সম্প্রসারণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এখন বাংলাদেশে অনেক চিকিৎসক চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে পারছেন।
বাংলাদেশে কলেরা গবেষণা কেন্দ্রকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার ক্ষেত্রে তিনি অনন্য ভূমিকা পালন করেন। এর ফলে আজকে বাংলাদেশের আইসিডিডিআরবি বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই শুধু নয়, অনেক দেশের কাছে অনুকরণীয়ও বটে। প্রতিষ্ঠানটির উন্নত শিক্ষা কার্যক্রম প্রণয়নে তিনি ছিলেন নেতৃস্থানীয়। সেখানকার টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক হওয়ার সুবাদে তাঁর সেই অবদান রাখা সম্ভব হয়েছিল। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেখানে বিভিন্ন মত ও পথের গবেষকদের সমাবেশ ঘটেছে। তাঁদের সঙ্গে সমন্বয়সাধনের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে ওষুধশিল্পের বিশ্বমান অর্জন লক্ষণীয়। সেই অর্জনের জন্য একটি যুগোপযোগী ওষুধনীতি পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছে। সেই যুগান্তকরী ওষুধনীতি প্রণয়নের প্রধান পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন জাতীয় অধ্যাপক নুরুল ইসলাম। তাঁর আন্তরিক চেষ্টার ফসল হিসেবে বাংলাদেশের ওষুধশিল্প বিকশিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন ছিল তাঁর। এই স্বপ্নপূরণে তিনি সাংগঠনিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন, বিশেষ করে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করার বিষয়টিকে তিনি প্রাধান্য দেন। গত কয়েক দশকের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে তামাকসেবীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এই আন্দোলনে তিনি পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। তামাকসেবীর সংখ্যা হ্রাসের সাফল্য অর্জনের পথিকৃৎ হিসেবে তাঁকে দেখা হয়। এতে প্রমাণ হয়, তিনি চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষা উন্নয়নে যেমন ভূমিকা রেখেছেন, তেমনি জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যাপারেও ছিলেন সমান সচেতন। এমন গুণীজনকে হারানো বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি বলে আমরা মনে করি। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার প্রতি সন্মান জানাচ্ছি এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করছি।

No comments

Powered by Blogger.