মাঠে নামছেন খালেদা জিয়া by মোশাররফ বাবলু

নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে কঠোর আন্দোলনে যাচ্ছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। আর এর পুরোভাগে থাকছেন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে সংলাপের পথ দলটি বন্ধ করছে না।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। আর বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ওই নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে অনড়। নির্দলীয় সরকার না হলে দলটি নির্বাচন বর্জন এবং প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে।
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, আগামী মাস থেকে কঠোর আন্দোলন শুরু করবেন তাঁরা। এই কঠোর কর্মসূচির মধ্যে সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ, আবার রাজপথ অবরোধ, মানবপ্রাচীর, ঢাকা ঘেরাওসহ টানা হরতাল থাকতে পারে। ঢাকার আশপাশের জেলা শহরে নিজে সমাবেশ করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আন্দোলন এগিয়ে নেওয়ার জন্য ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীসহ সব শ্রেণীর পেশাজীবীদের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে আলোচনা করবেন তিনি। আজ রবিবার সংসদের ১৬তম অধিবেশন বসছে। অধিবেশনকে কেন্দ্র করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সংসদ সদস্যরা সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় মানববন্ধন করবেন। এরপর বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন সংসদে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে। জোরদার আন্দোলনের স্বার্থে ভবিষ্যতে বিএনপির এমপিরা সংসদ থেকে একযোগে পদত্যাগও করতে পারেন। আজ রাতে গুলশানের কার্যালয়ে দলের নীতিনির্ধারক স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সূত্র জানায়।
বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, সরকার একতরফাভাবে নির্বাচনের কথা বলছে। প্রধানমন্ত্রী সারা দেশ সফর করে ভোট চাইছেন। অন্যদিকে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও জামিন দেওয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় সরকারের সঙ্গে সমঝোতার পথ ক্ষীণ। সরকার আলোচনা চায় না। ষড়যন্ত্র করে বিরোধী দলকে দূরে রেখে একতরফা নির্বাচনের পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। এ জন্যই সরকারের সঙ্গে তাঁদের দূরত্ব বাড়ছে। এ অবস্থায় কঠোর আন্দোলন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসজুড়ে ঢাকার আশপাশের জেলা শহরে সমাবেশ করবেন খালেদা জিয়া। ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজবাড়ী জেলায় সমাবেশের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিগগিরই মুক্তি পেয়ে বের হয়ে আসবেন বলে বিএনপি নেতারা আশাবাদী। মহাসচিব বের হওয়ার পর অন্য জেলা শহরগুলোতে সমাবেশের তারিখ চূড়ান্ত করা হবে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমাদের একটাই দাবি, তা হলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। আগেই বলেছি, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে সেই নির্বাচন প্রতিহত করবে বিএনপি।' তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চান। কিন্তু তাঁর সে খায়েশ পূরণ হবে না। আমরা আন্দোলনও করব, আবার সরকার চাইলে নির্দলীয় সরকারের ব্যাপারে আলোচনাও করতে রাজি।' তিনি বলেন, ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই বিএনপি চেয়ারপারসন চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক দেবেন। সে ক্ষেত্রে চেয়ারপারসন আগামী মাস থেকেই জেলা সফর শুরু করতে পারেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার যত কৌশলই করুক না কেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সমাবেশে ভোট চাইছেন। কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি তা প্রতিহত করবে। সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে সরকারের। তাই ইচ্ছা করলেই তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি ফিরিয়ে আনতে পারে তারা। সংসদ থেকে পদত্যাগের ব্যাপারে তিনি বলেন, 'এই বিষয়টি এখনো জানা নেই। তবে আমরা সংসদে যেতে চাই। তত্ত্বাবধায়ক না হলে আন্দোলনের মাধ্যমে তা মানতে বাধ্য করা হবে।' সেই আন্দোলন জোরদার করতে হলে সংসদ থেকে পদত্যাগও করা হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে তত্ত্বাবধায়ক না মানলে নবম সংসদ থেকে দলীয় এমপিরা পদত্যাগ করতে পারেন বলে হুমকি দিয়েছেন সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক। তবে তা এখনই নয়। আগামী দিনে আন্দোলন জোরালো করতে যেকোনো সময় তাঁরা পদত্যাগ করতে পারেন। আওয়ামী লীগও পদত্যাগ করেছিল। তিনি আরো বলেন, 'আজ সংসদের ১৬তম অধিবেশন বসছে। তাতে নির্দলীয় সরকারের বিল আনলে আমরা সংসদে যাব। তবে এই দাবিতে আজ সকাল ১১টায় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় বিএনপির এমপিদের মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। তারপর আমরা বৈঠক করব। সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে এই অধিবেশনে বিএনপি যাবে কি যাবে না।'
তবে বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দলটির বেশির ভাগ সংসদ সদস্য এ অধিবেশনে যোগ দিয়ে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা করতে চান। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে তাঁরা যেতে পারছেন না।

No comments

Powered by Blogger.