অভিনন্দন দক্ষিণ সুদান-দারিদ্র্য ঘুচে সমৃদ্ধি আসুক

একটি রাষ্ট্রের জন্ম মানেই একটি নতুন জাতির জন্ম নেওয়া, নতুন ইতিহাসের যাত্রা। পৃথিবীতে অনেক নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হতে দেখা গেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনেক রক্ত এবং ত্যাগের বিনিময়ে নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটেছে। যদিও কোনো কোনো রাষ্ট্র কূটনৈতিক আলোচনার মধ্য দিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে।


তেমনি দীর্ঘকালের গৃহযুদ্ধ, অনেক রক্তক্ষয়ের পর শুক্রবার রাত ১২টা বাজতেই পৃথিবীর মানচিত্র বদলে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জন্ম নিয়েছে একটি নতুন রাষ্ট্র, যার নাম হয়েছে রিপাবলিক অব সাউথ সুদান। যে রাষ্ট্রটিকে এখন থেকে আমরা ডাকব দক্ষিণ সুদান বলে। স্বীকৃতি পেল এ রাষ্ট্র জাতিসংঘের ১৯৩তম এবং আফ্রিকার ৫৪তম দেশ হিসেবে। নবগঠিত রাষ্ট্রের জন্মক্ষণে রাজধানী জুবায় আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে দেশটির সাধারণ মানুষ। সে আনন্দে শরিক হয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব কলিন পাওয়েল, জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি সুসান রাইসসহ অনেক মান্যজন। উল্লেখ্য, দক্ষিণ সুদান ইতিমধ্যে কমনওয়েলথ অব নেশনসের সদস্যপদের জন্য আবেদন জানিয়েছে। এ দেশ আরব লীগের সদস্যপদ লাভ করতে পারে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ সুদানের প্রেসিডেন্ট ইস্ট আফ্রিকান কমিউনিটিতে যোগদানের ইচ্ছাও ব্যক্ত করেছেন, যে প্রস্তাবকে কেনিয়া ও রুয়ান্ডা সমর্থন জানিয়েছে।
আফ্রিকার দারিদ্র্যপীড়িত এবং গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সুদানের দক্ষিণ অঞ্চল নিয়ে গঠিত হলো এই রাষ্ট্র। ভূতপূর্ব সুদানের এ অঞ্চল বরাবরই খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। ফলে রাষ্ট্রটির পূর্ব অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। ব্রিটিশ এবং মিসরীয় উপনিবেশ থেকে ১৯৫৬ সালের স্বাধীনতা লাভের সময় দক্ষিণ সুদান রিপাবলিক অব সুদানের অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রথম গৃহযুদ্ধের পর দক্ষিণ সুদান ১৯৭২ সালে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং তা টিকে থাকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত। দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে সুদানে কমপক্ষে ১৫ লাখ মানুষ নিহত হয়। এরপর ২০০৫ সালে কমপ্রিহেনসিভ পিস এগ্রিমেন্টের (নইভাসা এগ্রিমেন্টও বলা হয়) মাধ্যমে ওই বছরই আবার স্বায়ত্তশাসন ফিরে আসে। জানুয়ারি ২০১১-তে, অর্থাৎ এ বছরই একটি রেফারেন্ডাম অনুষ্ঠিত হয় স্বাধীনতা প্রশ্নে। এই রেফারেন্ডামে ৯৯ শতাংশের অধিক মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে রায় দেয়। সে অনুযায়ী ৯ জুলাই দক্ষিণ সুদান পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল। খুবই ইতিবাচক বিষয় হলো, দক্ষিণ সুদানকে প্রথমেই স্বীকৃতি দিয়েছে রিপাবলিক অব সুদান। আফ্রিকার অন্যান্য দেশও দক্ষিণ সুদানের সঙ্গে সহযোগিতার মনোভাব ব্যক্ত করেছে। এ স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে খ্রিস্টান ও মুসলমান অধ্যুষিত সুদানের নিষ্ঠুর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অবসান হলো বলে আমরা আশা পোষণ করি। স্বাধীনতা উদ্যাপন অনুষ্ঠানের ভাষণে দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট সালভা কির মায়ারদিত বলেছেন, 'আজকের দিন থেকে আমরা আমাদের সব দুঃখ-বেদনা ভুলে যাব। উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিমের সব প্রতিবেশীর সঙ্গে আমরা শান্তির সঙ্গে বসবাস করব। আমরা আর শান্তির বদলে যুদ্ধে ফিরে যেতে চাই না।' দক্ষিণ সুদানের নতুন প্রেসিডেন্টের এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে আমরাও সহমত পোষণ করি। সব সংঘাত-বিভেদের উত্তরণ ঘটিয়ে দারিদ্র্যপীড়িত নতুন জন্মলাভ করা দেশটি সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাক_এটাই আমাদের ঐকান্তিক প্রত্যাশা। অভিনন্দন দক্ষিণ সুদান। শুভ হোক তার নতুন যাত্রা।

No comments

Powered by Blogger.