নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড এবং রুপার্ট মারডকের ভবিষ্যৎ

রবিবার ব্রিটেনের দীর্ঘকালের জনপ্রিয় ট্যাবলয়েড নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড পত্রিকাটির সর্বশেষ সংখ্যায় ইংরেজি বড় বড় হরফে লেখা হলো, থ্যাংক ইউ অ্যান্ড গুড বাই। পত্রিকার কর্ণধার রুপার্ট মারডক আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, রবিবারের এ সংখ্যাই হবে পত্রিকাটির সর্বশেষ সংখ্যা। সে অনুযায়ী রবিবার পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়া হলো।


১৮৪৩ সাল থেকে টানা ১৯১১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় জনপ্রিয় এ পত্রিকাটি চলে এসেছে। সর্বশেষ ৫০ লাখ কপি পত্রিকা ছাপা হলো গত রবিবার। পত্রিকাটির বিরুদ্ধে খবরের সূত্রের জন্য মোবাইল ফোনে আড়িপাতার অভিযোগ ওঠে। ২০০২ সালের মিলি ডাওলার হত্যার ঘটনাও এখন এ পত্রিকার মোবাইল হ্যাকিংয়ের কারণে নতুন করে উঠে এসেছে। বহুকাল আগেই প্রথম প্রকাশ পায়, পত্রিকাটির কিছু সাংবাদিক মোবাইল ফোনে আড়ি পেতেছেন। ২০০৭ সালে একাধিক ঘটনা প্রকাশের চার বছর পর গত মাসে পুলিশের হাতে এর সংগৃহীত প্রমাণাদি তুলে দেওয়া হয়। ওই সময় নিউজ ইন্টারন্যাশনালের ইউরোপের প্রধান নির্বাহী জেমস মারডক ব্যক্তিগতভাবে অনুমোদন দেন অন্তত একটি মোবাইল হ্যাকিংয়ের ঘটনা অর্থের বিনিময়ে মীমাংসা করার। বর্তমানে এই কেলেঙ্কারির ঘটনা যাতে আরো ক্ষতির কারণ না হয় সে জন্য প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার রুপার্ট মারডক এবং তাঁর নির্বাহীরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু এমপিরা ছাড় দিতে নারাজ। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামরনের ওপর লেবার পার্টি এবং সহযোগীদের চাপ ক্রমেই বেড়ে চলে যাতে নিউজ করপোরেশন ব্রিটিশ স্কাই ব্রডকাস্টিং না নিতে পারে। নিউজ করপোরেশন হলো নিউজ ইন্টারন্যাশনালের মূল অর্গানাইজেশন। অন্যদিকে রুপার্ট মারডক চেষ্টা করছেন নিউজ ইন্টারন্যাশনালের যুক্তরাজ্যের প্রধান নির্বাহী রেবেকা ব্রুককে নিরাপদ করার। রেবেকা ব্রুক যেন অভিযুক্ত না হয়ে বরং প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আইনের চোখে চিহ্নিত হন সে চেষ্টায় ছোটাছুটি করছেন।
ফোন হ্যাকিংয়ের দায়ে ট্যাবলয়েডটির রয়্যাল এডিটর ক্লাইভ গুডম্যানের পর নিউজ ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী ড্যানিয়েল ক্লোক এবং জন চ্যাপম্যানের ২০০৭ সালে সাজা হয়। এখন প্রশ্ন উঠেছে, ২০০৭ সালের ঘটনায় জেমস মারডকের ভূমিকা কী ছিল তা নিয়ে। ২০০৮ সালে তিনি প্রফেশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের গর্ডন টেইলরকে তাঁর ফোন হ্যাক করার জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাগজে স্বাক্ষর করেন। তাঁর সঙ্গে গর্ডন টেইলর বিষয়টি নিয়ে আর আলোচনা বা প্রকাশ না করার একটি গোপন চুক্তি করেন।
গুডম্যানের শাস্তির কয়েক বছর পর এখন জেমস মারডক এবং মিস ব্রুকস বিষয়টি বলতে চাচ্ছেন বা প্রমাণ করতে চাইছেন যে গুডম্যান একাই এই হ্যাকিং এবং সব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী। এর সঙ্গে কম্পানির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কম্পানি হাউস অব কমন্স কমিটির কাছে যে সাক্ষ্য দিয়েছে, তা এখন গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
লেবার পার্টির এমপিরা কমন্স কালচার কমিটির সদস্য টম ওয়াটসনকে তাঁদের মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'আমরা এখন নিশ্চিত যে আমাদের কমিটিকে আগে ভুল বোঝানো হয়েছে। তাই মারডক এবং রেবেকাকে আসতে হবে সঠিক কী ঘটেছিল তা বলার জন্য। অন্যদিকে লেবার পার্টির এমপি ক্রিস ব্রয়ান্ট নিউজ ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছেন, তারা ভয়ানকভাবে সব কিছু গোপন করেছে। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টকে লিগ্যাল স্যাংশনের ব্যবস্থা করতে হবে। এটা কোনো যুক্তির কথা নয় যে নিউজ ইন্টারন্যাশনালের দায়িত্বশীলরা কিছু জানতেন না। এটা পরিষ্কার যে, পার্লামেন্টের কাছে তাঁরা মিথ্যা কথা বলেছেন। সুতরাং মারডক এবং ব্রুকসকে কৈফিয়ত দিতে হবে।
এর মানে হলো, নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও মারডক এবং রেবেকা ব্রুকসসহ কম্পানির নির্বাহী দায়িত্ব পালনকারীরা এখন কোনোক্রমেই নিরাপদ নন। তাঁদের ওপর নেমে আসতে পারে খৰ। নিউজ কম্পানির স্টাফদের দুই হাজার ৫০০ ই-মেইল স্ক্রুটিনির আওতায় এসেছে।
অন্যদিকে ২০০২ সালে স্কুলবালিকা মিলি ডাওলার অপহরণ এবং হত্যার শিকার হয়। মিলির টেলিফোন হ্যাকিং করা হয়। বিষয়টি নিয়ে তার পরিবার এখন উপপ্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগের সঙ্গে দেখা করেছে। আগামী সপ্তাহের কোনো এক সময় প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গেও পরিবারটি সাক্ষাৎ করবে। লেবার নেতা ডেভিড মিলিব্যান্ডের সঙ্গেও তাদের সাক্ষাৎ হবে। মিলির মৃত্যুর সময় তার ফোন হ্যাকিং করা হয় এবং মৃত্যুর পরও পরিবারকে জানানো হয়, সে জীবিত আছে। তার পরিবার এখন সরকারি তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
শুধু নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড নয়, এসব কিছু মিলে রুপার্ট মারডক এবং তাঁর বিশাল মিডিয়া সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা নির্ভর করছে আগামী কয়েকদিনের ওপর। তবে নিউজ করপোরেশনের ব্রিটিশ স্কাই কিনে নেওয়া যে ঝুলে গেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

ব্রিটিশ পত্রপত্রিকা থেকে
অনুলিখন : মহসীন হাবিব

No comments

Powered by Blogger.