প্রতিবাদের ভাষা যখন নিজেকে জ্বালিয়ে দেওয়া

নিজ দেহে আগুন লাগিয়ে প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে নিলেন আরো এক তিব্বতি প্রতিবাদী। এবারের প্রতিবাদকারি সদ্য কৈশোর পেরোনো এক নারী ভিক্ষু। তিব্বতে চীনের দীর্ঘ দখলদারির প্রতিবাদে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে চীনের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় অশান্ত এলাকায়।

চীনের সিচুয়ান প্রদেশের আবা অঞ্চলে অবস্থিত একটি বৌদ্ধ মঠের অধিবাসী তেনজিন চেওদ্রোন নামের এই নারী সন্যাসী শনিবার নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মাহুতি দেন। চীনের সিচুয়ান প্রদেশটি তিব্বত সীমান্তে অবস্থিত।

শনিবারের ঘটনাসহ গত এক বছরে ২২ জন তিব্বতি প্রতিবাদকারী নিজেদের শরীরে আগুন লাগিয়ে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালেন বলে জানায় লন্ডনভিত্তিক তিব্বতের অধিকার আদায়ের স্বপক্ষের সংগঠন ফ্রি তিব্বত গ্রুপ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মামায়ে বৌদ্ধ মঠের এই নারী সন্যাসী নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার আগে চীনা শাসকদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।

আগুন লাগানোর পরপরই সেনা এবং পুলিশ তাকে সেখান থেকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যায়। এ যাত্রায় এই তরুণী সন্যাসী বেঁচে যেতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ঘটনার পর চীনা কর্তৃপক্ষের কোপ পড়ে বৌদ্ধ মঠটির ওপর। ফলে কর্তৃপক্ষ বৌদ্ধ মঠটিকে বন্ধ করে দেয়।

এই নারী ভিক্ষুসহ এ পর্যন্ত মামায়ে মঠের দু’সন্যাসী চীনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে দিলেন। গত বছরের অক্টোবর মাসে এই মঠের এক ভিক্ষু গায়ে আগুন লাগিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি আর বাঁচতে পারেননি। পরাধীন দেশে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুকেই শ্রেয় মনে করেছিলেন তিনি।

তিব্বতের চীনের দখলদারির প্রতিবাদে ইদানীং অব্যাহতভাবে গায়ে আগুন জ্বালিয়ে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করছে তিব্বতিরা।

আর এই সব ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চীনের ভাবমূর্তি দিন দিন ক্ষুণ্ন করছে। তবে চীনা কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিরোধপূর্ণ এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত সেনা-পুলিশ মোতায়েন করেছে। এর মাধ্যমে চীন দৃশ্যত: প্রতিবাদ দমনে পূর্বের থেকেও কঠোর আচরণের রাস্তা বেছে নিয়েছে বলে জানিয়েছে তিব্বতি আন্দোলনকারীরা।

গত মাসেও সিচুয়ান প্রদেশে পুলিশের সঙ্গে প্রতিবাদকারীদের সংঘর্ষে দু’জন নিহত হয়। সিচুয়ানের বিশাল জনগোষ্ঠী তিব্বতি বংশোদ্ভুত। তারা মাঝেমাঝেই চীনের বিরুদ্ধে অন্যায় আচরণের অভিযোগে প্রতিবাদ জানায়। এই প্রতিবাদ কখনও কখনও সহিংস হয়ে ওঠে। তবে চীন এসব প্রতিবাদে ইন্ধন দেওয়ার ব্যাপারে বহিঃশক্তিদের অভিযুক্ত করে আসছে।

তিব্বতিদের শোষণ এবং দমিয়ে রাখার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে চীন দাবি করে আসছে, তিব্বতিরা পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করছে। এছাড়া বেইজিংয়ের অধীনে তিব্বতিদের জীবনযাত্রার মান এবং অর্থনৈতিক অবস্থারও অগ্রগতি হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.