কালান্তরের কড়চা-প্রবাসী বাংলাদেশি এক গোয়েবলসের মিথ্যাচারের জবাবে- by আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী

জামায়াতি পত্রিকা 'দৈনিক নয়াদিগন্তে' গত ৮ জুলাই শুক্রবার একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। শিরোনাম 'আওয়ামী লীগের কলমসন্ত্রাসীরা যে কারণে এমন মরিয়া'। লিখেছেন আমার অগ্রজপ্রতিম এক সাংবাদিক সিরাজুর রহমান। বিবিসি (রেডিও) বাংলা বিভাগে দীর্ঘ ৩০ বছর চাকরি করাকালে তিনি নিজের নামটা উচ্চারণ করতেন 'ছেড়াজুর রহমান'।
কেন করতেন তা আমি জানি না। তাঁর উচ্চারণে নোয়াখালীর টান আছে। তবু তিনি দাবি করতেন, তিনি শুদ্ধ ক্যালকেশিয়ান বাংলা উচ্চারণ করেন। তা নিয়ে লন্ডনে বিবিসি বেতারের বাংলা বিভাগের কক্ষে মাঝেমধ্যে হাসিঠাট্টা হতো। তাঁকে বেশি খোঁচাতেন শ্যামল লোধ নামে তাঁরই এক বাঙালি (ভারতীয়) সহকর্মী। সিরাজুর রহমানের উচ্চারণ নিয়ে শ্যামল লোধ প্রায়ই কৌতুক করতেন এবং তা নিয়ে দুজনের মধ্যে বাদানুবাদও হতো, যা আমাদের জন্য কৌতুককর।
এটা দীর্ঘদিন আগের কথা। তখন আমিও বিবিসি বেতারের বাংলা বিভাগের খণ্ডকালীন কর্মী ছিলাম। সিরাজুর রহমান তাঁর নয়াদিগন্তের কলামে লিখেছেন, 'আমার উচ্চারণ খারাপ ছিল, ইংরেজি, বাংলা বলতে পারতাম না। সিরাজুর রহমানের কাছে গিয়েছিলাম একটি চাকরির আশায়। কিন্তু আমার ভাষাজ্ঞান ও উচ্চারণের দুর্বলতার জন্য ছুটকো কিছু কাজ দিয়ে আমার আর্থিক সংস্থানের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বিবিসির বাংলা বিভাগে তাঁর দু-একজন ভারতীয় সহকর্মী আমার বাংলা উচ্চারণ নিয়ে আপত্তি জানান এবং তা বিবিসি কর্তৃপক্ষের গোচরীভূত করেন।'
সিরাজুর রহমানের এ কথাগুলো সত্য হলে আমি মাথা পেতে নিতাম। কারণ আমার বাংলা বলায় সত্যই আঞ্চলিকতার (বরিশালের) টান আছে। আমার কণ্ঠস্বরও ভালো নয়। আমি সে জন্য লজ্জিত নই। বরং গর্ব বোধ করি। এই আঞ্চলিকতার টান আমি কখনো বদলানোর চেষ্টাও করিনি। কারণ, টেলিভিশন ও বেতার-সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছা আমার কোনোকালেই ছিল না। আমার লেখালেখির সাংবাদিকতার পেশা। সেটা ভালোভাবে করতে পেরেই আমি খুশি। বেতার-টেলিভিশনের বিভিন্ন টক শো ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে মাঝেমধ্যে যাই, তবে নিজের আগ্রহে নয়, টিভি বা বেতার সম্প্রচারকদের অনুরোধ রক্ষা করে।
সিরাজুর রহমানের সঙ্গে আমি শুধু বিবিসিতে নই, তার আগে পাকিস্তান আমলে ঢাকায় 'দৈনিক ইত্তেফাকে' সহকর্মী হিসেবে কাজ করেছি। আমাদের সম্পর্কটা ছিল বড় ভাই ও ছোট ভাইয়ের। তাঁর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। কখনো ছিল না। এই বিরোধ দেখা দেয় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এবং এই বিরোধটা রাজনৈতিক। তিনি বিবিসিতে চাকরিরত অবস্থাতেই আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে এবং ক্রমশ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ এবং এই আদর্শের পক্ষের প্রধান দলটির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং যেহেতু আমি এই আদর্শে বিশ্বাসী এবং এই আদর্শের পক্ষে লেখালেখি করি, সুতরাং আমার বিরুদ্ধেও তাঁর লেখায় বিষোদ্গার শুরু করেন।
তাঁর বয়স, বিবিসির ৩০ বছরের চাকরি জীবনে প্রোমোশনবিহীন অবস্থায় অবসরে যাওয়ার দারুণ হতাশা, অবসরে যাওয়ার সময় বিবিসি থেকে তাঁকে কোনো ধরনের ফেয়ারওয়েল না দেওয়া, বঙ্গবন্ধুর সরকারে একটি চাকরি চেয়েও তা না পাওয়া, পারিবারিক জীবনের নানা অশান্তি ইত্যাদি বিবেচনা করে তাঁর কোনো অসত্য ও অতিরঞ্জিত কথারও জবাব আমি কোনো দিন দিইনি। তাঁর আত্মকথা 'প্রীতি নিন সকলে' বইটিতে বঙ্গবন্ধু, সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন লন্ডনের ঘটনাবলি নিয়ে অনেক ডাহা মিথ্যা কথা আছে এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অনেকে তার প্রতিবাদ করার জন্য আমাকে বহুবার অনুরোধ করেছেন। আমি তাঁর বিরুদ্ধে কলম ধরিনি। এমনকি তিনি যখন আমার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ চালিয়েছেন, ডাহা মিথ্যা প্রচার করেছেন, তখনো তার প্রতিবাদ করিনি। তার কারণ একই পেশার বড় ভাই হিসেবে তাঁকে শ্রদ্ধা করলেও তিনি কখনোই বড় সাংবাদিক হিসেবে আমার কাছে গুরুত্ব পাননি। দেশেও পাননি। তাঁর লেখা পাঠকসমাজে কোনো গুরুত্ব পায়, তাও আমার মনে হয়নি। সুতরাং তাঁর কিছু বানানো কথার প্রতিবাদ করে তাঁর গুরুত্ব বাড়ানো আমি সমীচীন মনে করিনি।
তবু দীর্ঘকাল তাঁর সম্পর্কে চুপ থাকার পর সম্প্রতি 'কালের কণ্ঠে' আমার একটি সিরিজ লেখায় শেখ হাসিনা সম্পর্কে 'যায়যায়দিন'-এর সাবেক সম্পাদক এবং আমার বন্ধু শফিক রেহমানের একটি বিদ্বেষপ্রসূত নিবন্ধের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে সিরাজুর রহমানেরও নাম উল্লেখ না করে পারিনি। তাও ব্যক্তিগত কারণে নয়; সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে তিনি সম্প্রতি লন্ডনের 'গার্ডিয়ান' পত্রিকায় একটি মিথ্যার পুনরুক্তি করে চিঠিপত্র কলামে একটি চিঠি লেখেন। তাতে বলেন, পাকিস্তানের কারাগার থেকে লন্ডনে আসার পরও বঙ্গবন্ধু দেশ যে স্বাধীন হয়েছে তা জানতেন না। সিরাজুর রহমানের কাছ থেকেই তা প্রথম জানেন এবং সিরাজুর রহমানের কাছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা জানতে চেয়ে ভুল করে ৩০ লাখ বলেছেন। এর আগেও এই মিথ্যাচারটি তিনি তাঁর লেখায় করেছেন। উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে হেয় করা।
১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসের গোড়ায় বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তান থেকে লন্ডনে আসেন, তখন যাঁরা লন্ডনে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনে রত ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুকে সাহচর্য দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই সিরাজুর রহমানের মিথ্যা বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন। বিশেষ করে তখন লন্ডনে ছিলেন এবং বাংলাদেশ পররাষ্ট্র দপ্তরের সচিব হিসেবে পরবর্তীকালে অবসর গ্রহণ করেছেন মহিউদ্দীন আহমদ (বর্তমানে কলামিস্ট) নিজে দীর্ঘ কলাম লিখে সিরাজুর রহমানের অসত্য প্রচারণার জবাব দিয়েছিলেন। সিরাজুর রহমান তখন একেবারে নিশ্চুপ। তাঁর তথ্য অথবা বক্তব্য কোনোটাই খণ্ডন করতে পারেননি তিনি।
দীর্ঘদিন হয় সিরাজুর রহমান বিএনপি ও খালেদা জিয়ার অনুরাগী এবং অনুসারী। খালেদা জিয়া যেমন স্বশিক্ষিত রাজনীতিক, সিরাজুর রহমানও তেমনি স্বশিক্ষিত সাংবাদিক। কলেজে নাকি ঢুকেছিলেন। চৌকাঠ আর পেরোতে পারেননি। যা হোক, দীর্ঘকাল তিনি আর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর লন্ডনে যাত্রাবিরতির সময়ের ঘটনা নিয়ে তাঁর মিথ্যাচারের পুনরুক্তি করেননি। সহসা এখন গার্ডিয়ানে চিঠি লিখে সেই মিথ্যাচারগুলোর পুনরুক্তি করার কী জরুরি প্রয়োজন দেখা দিল, তা ভেবে বিস্মিত হয়েছি।
আমার এই বিস্ময় দূর করেছেন লন্ডনের কয়েকজন বিশিষ্ট বাঙালিই। তাঁরা বলেছেন, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বর্তমান বিচার প্রক্রিয়া ভণ্ডুল করার জন্য জামায়াত বুদ্ধিজীবী-আইনজীবী ক্রয়ের উদ্দেশ্যে বিদেশেও দুই হাতে টাকা ছড়াচ্ছে। এই ক্রীত বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা চেষ্টা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকে হেয় করা এবং মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা ও যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা। এই বক্তব্য শুনে আমার মনে হয়েছে, সিরাজুর রহমানের সঙ্গে একই সময়ে একইভাবে শর্মিলা বসু নামে এক ভারতীয় ভদ্রমহিলা (ব্রিটেনে বসবাসকারী) যে গায়ে পড়ে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে অতিরঞ্জিত কথা বলা হচ্ছে বলে প্রচারে নেমেছেন, তার পেছনে একই উদ্দেশ্য ও একই ইন্ধন কাজ করছে কি না!
যা হোক, সিরাজুর রহমানের 'গার্ডিয়ানে' প্রকাশিত চিঠির প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশি দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার যে চিঠি পাঠিয়েছেন, সেটি গার্ডিয়ানে প্রকাশিত হয়েছে এবং তাতে সিরাজুর রহমানের বক্তব্য যে সর্বৈব মিথ্যা, তার প্রমাণ হিসেবে যে তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে, তার জবাব দেওয়ার মতো সাহস তিনি আর দেখাননি। এখন জামায়াতি পত্রিকার ক্রোড়াশ্রিত হয়ে আমার ওপর ব্যক্তিগত আক্রমণ চালিয়ে মুখ রক্ষার চেষ্টা করছেন।
আমি এ প্রসঙ্গটি নিয়ে আর আলোচনায় যাব না। কারণ তাঁর মিথ্যাচারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন লন্ডনের বাংলাদেশ হাই কমিশন এবং ঢাকার ডেইলি স্টার পত্রিকায় এ সম্পর্কে লিখেছেন কলামিস্ট সৈয়দ বদরুল আহসান। তাতে যেসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে তার প্রতিবাদ করার মতো মুখ থাকলে সিরাজুর রহমান তা করতেন। তবে আমার একটি তথ্য সম্পর্কে তিনি যে প্রশ্ন তুলেছেন, তার জবাবে লিখছি, ড. কামাল হোসেন সস্ত্রীক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একই প্লেনে পাকিস্তান থেকে লন্ডনে এসেছেন এবং হিথরো এয়ারপোর্ট থেকে ক্লারিজেস হোটেলে এসে বঙ্গবন্ধুকে তুলে দিয়ে তারপর অন্য বাসায় চলে গিয়েছিলেন। এটা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়। তবু সমুদ্রে নিমজ্জিত ব্যক্তি যেমন তৃণখণ্ড আশ্রয় করে বাঁচতে চায়; সিরাজুর রহমানও তেমনি মিথ্যার সমুদ্রে ডুবতে গিয়ে আরেকটি মিথ্যার তৃণখণ্ড আশ্রয় করতে চাইছেন। তাঁর নয়াদিগন্তের লেখায় লিখেছেন, 'ড. কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ক্লারিজেস হোটেলে আসেননি।' আমার কথা, ড. কামাল হোসেন তো এখনো বেঁচে আছেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেই হয়, তিনি এসেছিলেন কি না? তাঁকে সাক্ষী না মেনে এত মিথ্যাচারের দরকারটা কী? আমি তো ড. কামাল হোসেনের কাছ থেকেই জেনেছি, তিনি ক্লারিজেস হোটেল পর্যন্ত এসেছিলেন।
আগেই লিখেছি, দীর্ঘকাল আমি সিরাজুর রহমানের মিথ্যাচার এবং আমার প্রতি ব্যক্তিগত আক্রমণের জবাব দিইনি। তার কারণ তাঁর মিথ্যাচারকে আমি কোনো গুরুত্ব দিইনি। এখন দিচ্ছি এই কারণে যে, তিনি একই মিথ্যার বারবার পুনরুক্তি দ্বারা গোয়েবলসের মতো তা সত্য করে তোলার চেষ্টা করছেন। আমার দিকেই তাঁর আক্রোশ ও আক্রমণ সীমাবদ্ধ থাকলে কথা ছিল না। কিন্তু ব্যক্তিজীবনের হতাশা এবং রাজনৈতিক চরিত্রহীনতা থেকে তিনি জাতির জনককে হেয় করা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পর্যন্ত বিকৃত করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছেন এবং জামায়াত ও '৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের অপপ্রচারগুলোও নিজের কণ্ঠে ও লেখনিতে তুলে নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন সাংবাদিক হিসেবে এর জবাব না দেওয়া হবে নৈতিক অপরাধ।
প্রথমেই আমার সম্পর্কে তাঁর মিথ্যাচারের দু-একটা নমুনা দিই। দীর্ঘকাল তাঁকে বড় ভাইয়ের স্থানে রেখে সম্মান দেখিয়ে আমি তাঁর ডাহা মিথ্যাগুলোর কোনো জবাব দিইনি। এখন মনে হচ্ছে, দেওয়াটা ছিল নৈতিক কর্তব্য। তিনি তাঁর 'নয়াদিগন্তের' লেখায় সাধু সেজে লিখেছেন, 'আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস হচ্ছে, অহেতুক ব্যক্তিগত সমালোচনা কিংবা অন্য কারো সমালোচনার জবাব দেওয়া কলাম লেখকের সময়ের অপচয় মাত্র। বর্তমানে আমি লিখছি নিতান্তই দেশপ্রেমের তাগিদে।' তাঁর বক্তব্য শুনে হাসব না কাঁদব_তা বুঝে উঠতে পারিনি। কত বড় দেশপ্রেমিক তিনি! সম্ভবত এই দেশপ্রেম তিনি গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীদের কাছ থেকে ধার করেছেন এবং তাদের ভাষাতেই দেশের স্থপতি, দেশের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র_সব কিছুর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে চলেছেন। এমনকি আমার মতো চুনোপুঁটিও তাঁর বিষোদ্গার থেকে রক্ষা পায়নি। অপরাধ, আমি বঙ্গবন্ধু, তাঁর রাজনৈতিক দল ও আদর্শের অনুসারী এবং স্বাধীনতার শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে অনবরত কলম চালনা করি।
বছর দুয়েক আগে তিনি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে, তাঁর বিরুদ্ধে আমি কিছু না লেখা সত্ত্বেও 'নয়াদিগন্ত' কাগজেই তাঁর কলামে লিখেছিলেন, ১৯৫২ সালে আমি ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকায় এসে তাঁর কাছে চাকরিপ্রার্থী হয়েছিলাম। অর্থাৎ কেবল লন্ডনেই নই, জীবনের গোড়ার দিকেও তাঁর কাছে অনুগ্রহপ্রার্থী হয়ে হাজির হয়েছিলাম। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাস করে আমি ঢাকায় এসে ঢাকা কলেজে ভর্তি হই। আমার লেখাপড়ার খরচ চালানোর মতো সামর্থ্য ছিল না_এ কথা সত্য। এ কথা জেনে বিখ্যাত কথাশিল্পী কাজী আফসারউদ্দীন আহমদ (তিনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন) আমাকে বংশাল রোড থেকে প্রকাশিত দৈনিক ইনসাফ পত্রিকায় (অধুনালুপ্ত) নিউজ ডিপার্টমেন্টে সাব এডিটরের একটি চাকরি পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। সিরাজুর রহমানকে তখন আমি তেমন চিনতাম না। ১৯৫২ সালে তিনি যখন মোহন মিয়ার দৈনিক মিল্লাতের বার্তা সম্পাদক হন, তখন আমি দৈনিক সংবাদে ভালো বেতনে সাংবাদিকতা করি। সিরাজুর রহমানের কাছে চাকরিপ্রার্থী হয়ে যাওয়ার কোনো দরকারই ছিল না।
এখানেই সিরাজুর রহমানের মিথ্যাচারের শেষ নয়, এই 'নয়াদিগন্ত' কাগজেই তিনি আবার লিখলেন, 'শেখ মুজিবের ওপর ছবি করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাফ্ফার চৌধুরীকে ১০০ কোটি টাকা দিয়েছেন।' এবারও তাঁর এই মিথ্যাচার ও অসৎ প্রচারণার আমি কোনো জবাব দিইনি।
(পরবর্তী অংশ আগামী মঙ্গলবার)

লন্ডন, ১১ জুলাই, সোমবার, ২০১১

No comments

Powered by Blogger.