হিলারি ক্লিনটন-দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতা দিবস

এই উইকএন্ডে জুবা নগরীতে আফ্রিকার ৫৪তম রাষ্ট্র দক্ষিণ সুদানের জন্ম হলো। লাখ লাখ মানুষ নতুন জাতীয় পরিচয় পাওয়ার আনন্দে উল্লাস প্রকাশ করেছে। ঠিক যেমনি ২৩৫ বছর আগের এক জুলাই মাসে আমাদের এখানে হয়েছিল। আর এখানে সুন্দর ভবিষ্যতের সম্ভাবনাও আছে।


অবশ্য যদি দক্ষিণ সুদান এবং সুদানের জনগণ কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা পোষণ করে তবেই। এই দিনটি অনিবার্য ছিল। সুদানের ভূমি ও সম্পদের ওপর গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ধস নামছে। মাত্র এক বছর আগে সুদানের সরকারের সঙ্গে দক্ষিণ সুদানের পিপলস লিবারেশন মুভমেন্টের সফল আলোচনা হয়। দক্ষিণ সুদানের পৃথক হওয়ার ব্যাপারে সেখানে গণভোট অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিও চলে। আর এই শান্তিচুক্তিটি আসলে সম্পন্ন হয়ে যায় ২০০৫ সালে।
দুই পক্ষের জনগণসহ বিশ্বের অন্য অনেক দেশের মানুষ একটি ভিন্ন পথ আবিষ্কার করেছে। ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কর্মরত সংগঠনগুলোও এ সমস্যা নিরসনে সচেষ্ট ছিল। গত বছর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেছেন। তারপর থেকে আমরা সুদানের দক্ষিণ অংশ ও উত্তর অংশ, আফ্রিকান ইউনিয়ন, ইউরোপ এবং জাতিসংঘের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ চার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছি। সর্বোপরি শনিবারের সফল সূচনার মাধ্যমে ওই অঞ্চলের তথা সুদান ও দক্ষিণ সুদানের নেতাদের বিজয় স্বীকৃত হলো। একই সঙ্গে তাঁদের আন্তরিকতাও প্রমাণিত হয়েছে। তাঁরা স্পষ্টত দেখিয়ে দিলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশই থাকুক না কেন, যদি মানুষ চায়, তাহলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সহজেই সম্ভব। তবে দুই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে যদি শান্তি স্থায়ী না হয়, তাহলে এই স্বাধীনতা দৃঢ়তর হবে না। দশকের পর দশক ধরে চলা যুদ্ধ দুই পক্ষের মধ্যেই অবিশ্বাস জন্ম দিয়েছে এবং একই সঙ্গে দুই এলাকাতেই সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। এখন এই দুটি জাতিকেই তাদের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত সুদৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রথমত, তাদের আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। শান্তিচুক্তির যেসব অধ্যায় এখনো বাস্তবায়ন হয়নি, সেগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থাৎ নাগরিকত্ব এবং অর্থনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে তাদের মতৈক্যে পেঁৗছানো প্রয়োজন। অবশিষ্ট সীমান্ত চিহ্নিতকরণ, চুক্তি অনুযায়ী বিতর্কিত সীমান্ত বিষয়ের সমাধান করা এবং সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সব সুদানির চাকরির পুনঃ ব্যবস্থা করাও দরকার। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যেসব এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে সন্ত্রাস চলেছে, সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, দক্ষিণ সুদানকে তার অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে। তাদের জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। শিক্ষায়ও পিছিয়ে আছে, স্বাস্থ্যসেবার মান নিম্নস্তরে, মিলিশিয়াদের মধ্যেও কোন্দল আছে। এসব সমস্যা নিরসনে সফল হতে হলে দক্ষিণ সুদানকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, মানবাধিকারও নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। অন্যদিকে জবাবদিহিতার বিষয়টিও গভীরভাবে তলিয়ে দেখতে হবে। বছরের পর বছর যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা দক্ষিণ সুদানের রাস্তাঘাট নির্মাণ, ক্লিনিক ও স্কুল প্রতিষ্ঠা, অধিক খাদ্য ফলানোর জন্য কৃষকদের সঙ্গে থেকে চাষাবাদ এবং বেসামরিক প্রশাসনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছেন। যেহেতু আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, তাই আমাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এবং গোটা বিশ্বই থাকছে। এবং এভাবেই সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ গড়ে উঠবে।
তৃতীয়ত, সুদানকেও তার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। সুদানের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আন্তর্জাতিকভাবে তার নিঃসঙ্গতা দূর করার ওপর। আর এটাই হচ্ছে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সুবিধাপ্রাপ্তি, ঋণপ্রাপ্তি এবং বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পথ। যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তার মধ্যে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়টিও রয়েছে এবং সেই লক্ষ্যে আমরা কিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করেছি। কিন্তু আমরা অগ্রসর হতে পারব, যদি সুদান তার প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করে, সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে এবং প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে পারে। দুই পক্ষকেই অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যাতে দক্ষিণাঞ্চলীয় কর্দোফান রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় গত জুন মাস থেকে যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে, সেখানে যুদ্ধবিরতি করতে হবে। সেখানে জাতিসংঘ বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তাহীনতা, তাদের প্রতি বারবার বোমাবর্ষণ, মানবীয় সাহায্য কাজে বাধা প্রদানের বিষয়গুলোর কারণে আমরা উদ্বিগ্ন।
দারফুরের নিরাপত্তা সংকট, মানবিক বিপর্যয় সম্পর্কে আমরা অবহিত আছি এবং উদ্বিগ্নও বটে। সুদান সরকারকে দারফুরের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার এবং অর্থনৈতিক অচলাবস্থা দূর করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করে যাবে। গত মাসে আদ্দিস আবাবায় যখন সুদান ও দক্ষিণ সুদানের নেতাদের সঙ্গে দেখা করি, তখন বুঝতে পারি, ওই এলাকার মানুষ তাদের সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে অনেক আশাবাদী। আমি তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছি যে তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের ক্ষমতা তাদের আছে। তারা যদি চায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের পাশে থাকবে।
লেখক : যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে ভাষান্তর মোস্তফা হোসেইন

No comments

Powered by Blogger.