চরাচর-কাঁঠালের যত গুণ by সাইফুল ইসলাম খান

ফলের রাজা আম। কিন্তু কাঁঠাল? পুষ্টিগুণে এটি সব ফলের রাজা। কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফলও। স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় কাঁঠাল প্রধানত দক্ষিণ এশিয়ার ফল। আমাদের দেশেও প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল উৎপাদিত হয়। উঁচু ও পাহাড়ি অঞ্চল, যেখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় কিন্তু পানি জমে না_এমন অঞ্চলে কাঁঠাল ভালো জন্মে।


বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও গাজীপুর জেলায় প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল উৎপাদিত হয়। এ ছাড়া দেশের সব স্থানেই কমবেশি কাঁঠাল উৎপাদিত হয়। গ্রীষ্ম ও বর্ষার এ মৌসুমি ফলটির পুষ্টিগুণ ঈর্ষণীয়। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালের কোয়া বা কোষে এনার্জি থাকে ৯৫ কিলোক্যালরি। সম্পূর্ণ কোলস্টেরলমুক্ত এ কাঁঠালের ১০০ গ্রামে আরো থাকে, কার্বোহাইড্রেড ২৩.৫ গ্রাম, প্রোটিন ১.৭২ গ্রাম, ফ্যাট ০.৬৪ গ্রাম, কোলেস্টেরল ০ গ্রাম, নিয়াসিন ০.৯২০ মিলিগ্রাম, পাইরিডঙ্নি ০.৩২৯ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন ০.৫৫ মিলিগ্রাম, থায়ামিন ০.১০৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-এ ১১০ আইইউ, ভিটামিন সি ১৩.৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই ০.৩৪ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৩ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩০৩ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৪ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৬০ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ৩৭ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ০.১৯৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩৬ মিলি গ্রাম, সেলেনিয়াম ০.৬ মিলিগ্রাম, জিঙ্ক ০.৪২ মিলিগ্রাম, বিটা-ক্যারোটিন ৬১ মাইক্রোগ্রাম। কাঁঠাল নরম ও সহজপাচ্য খাবার। এটি আঁশযুক্ত বলে চমৎকার ল্যাঙ্াটিভ হিসেবে কাজ করে। এটির আঁশ কোলনের মিউকাস কন্ট্রোল করে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ এবং ক্যারোটিন থাকে, যা ফুসফুস ও মুখ-গহ্বরের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এটি ভিটামিন-বি কমপ্লেঙ্ সমৃদ্ধ একটি বিরল প্রজাতির ফল। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি-৬, নিয়াসিন, রিবোফ্লাভিন ও ফলিক এসিড বিদ্যমান। এর পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেশিয়াম ও আয়রন মানবদেহের কোষ ও জলীয় অংশের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে। মানবদেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে পটাশিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পরিমাণ মতো কাঁঠাল ফল খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে অকাল বার্ধক্য রোধ করা যায়। কাঁঠালের বিচিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও মিনারেল থাকে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে কাঁঠালের বিচি দিয়ে নানা রকম উপাদেয় খাবার তৈরি করা হয়। দক্ষিণ ভারতে কাঁঠাল, নারিকেল, মধু ও কলা ইত্যাদি দিয়ে এক ধরনের সুস্বাদু খাবার তৈরি করা হয়। উত্তর ভারতে এটি সবজি হিসেবে বহুল সমাদৃত। স্থানীয় ভাষায় একে 'কাঁঠালের সবজি' বলা হয়। আমাদের দেশেও কাঁঠালের বিচি দিয়ে নানা রকম উপাদেয় খাবার তৈরি করা হয়। কোয়া ছাড়ানো বিচি রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এসব বিচি দিয়ে মাংস, ডাল বা অন্যান্য সবজির উপাদেয় তরকারি রান্না করা হয়। কাঁঠালের বিচি দিয়ে রান্না তরকারি উপাদেয় হয়। গ্রামাঞ্চলে শুকনো বিচি ভেজে খাওয়া হয়। এতে খাবারে আমিষের অভাব পূরণ হয়। এ ছাড়া কাঁঠালের জ্যাম-জেলি, পিঠা আজকাল বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সম্পূর্ণ কোলস্টেরলমুক্ত বলে হার্টের রোগীদের জন্য কাঁঠাল নিরাপদ। পরিপূর্ণ কাঁঠাল সাধারণত ১২ থেকে ১৫ কেজি হয়। তবে কিছু কিছু কাঁঠাল ৪০ কেজি পর্যন্ত হতে দেখা যায়। কম শ্রম ও ব্যয়ে উৎপাদিত কাঁঠাল আমাদের জাতীয় সম্পদ। তবে গত প্রায় দুই যুগ ধরে আমাদের দেশের কাঁঠাল গাছে এক ধরনের রোগের আক্রমণে ফলন কমে যাচ্ছে। স্থানীয় ভাষায় একে কাঁঠালের মড়ক বলে। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এ কাঁঠালকে রক্ষা করতে হলে কাঁঠালের এ মড়ক প্রতিরোধে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
সাইফুল ইসলাম খান

No comments

Powered by Blogger.