আঁধার জয়ের পথ-সময়ের কথা by অজয় দাশগুপ্ত

বাংলাদেশের ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় তার কয়েকটি পরামর্শ :এক. জলসম্পদ আরও কাজে লাগানো। দুই. কয়লাভিত্তিক উৎপাদন কেন্দ্র ক্রমাগত বাড়িয়ে চলা। তিন. নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন। চার. কার্বন ট্রেডের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখে অপ্রচলিত সূত্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে চলা।


এস. কে. দাশগুপ্ত মনে করেন, বাংলাদেশ তার বিপুল জলসম্পদ বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে আরও ভালোভাবে লাগাতে পারে। পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা_ এসব নদনদী হচ্ছে বড় সম্পদ


বাংলাদেশে বহু বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল সরকারের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বা পিডিবি এ দায়িত্ব পালন করত। এক যুগ হয়ে গেল, বেসরকারি খাতেও বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয় গ্যাস, ডিজেল ও কয়লা। কাপ্তাইয়ে রয়েছে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে সীমিত পরিমাণে সৌরবিদ্যুৎও উৎপাদন হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই বিভিন্ন ধরনের কেন্দ্রে উৎপাদন করা বিদ্যুতের দাম পড়ছে ভিন্ন ভিন্ন। কোথাও কিছু কম, কোথাও বা চড়া। যেখানেই বিদ্যুৎ উৎপাদন হোক, সরকার তা কিনে নিয়ে গ্রাহকদের সরবরাহ করে। এটাও বলা দরকার, দেশে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন এখনও কম এবং এ কারণে যে প্রতিষ্ঠান যতটা উৎপাদন করছে তার সবটাই সরকার কিনে নেয়। তার বাছবিচারের সুযোগ নেই। এ সুযোগে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারের কাঁধে বাড়তি ব্যয়ের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। আবার অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্তরাও দুর্নীতি-অনিয়ম করে উৎপাদন ব্যয় বাড়াচ্ছে। এর দায়ভার হয় গ্রাহকরা বহন করে কিংবা সরকারকেই ভর্তুকি দিয়ে পুষিয়ে দিতে হয়।
আদর্শ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি থাকলে সরকার যে পথে অগ্রসর হতে পারত : 'যে কেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয় কম, তার কাছ থেকে প্রথমে কেনা এবং যার ব্যয় বেশি তার কাছ থেকে সব শেষে কেনা। পিক আওয়ারে সবার কাছ থেকেই কিনতে হবে। কিন্তু দিন ও রাতের যে সময়ে চাহিদা কম থাকে, তখন যার কাছ থেকে কিনতে ব্যয় বেশি পড়বে তাকে অর্ডার না দেওয়া কিংবা কম দেওয়া।' এ মতের সমর্থক এস. কে. দাশগুপ্ত বা সুবীর কুমার দাশগুপ্ত। এক সময়ে তার পরিবার বসবাস করেছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা গ্রামে। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন পঞ্চাশের দশকের প্রথম দিকে। তারপর ভারতের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শীর্ষ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। পরের দুই বছর কাজ করেন রিলায়েন্স পাওয়ারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে। ১৯৯৭ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত একটানা প্রায় ছয় বছর ছিলেন মধ্যপ্রদেশ বিদ্যুৎ বোর্ডের চেয়ারম্যান। তিনি যখন এ পদে নিয়োগ লাভের জন্য মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান, তখন তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ সভায় ছিলেন। তিনি অপেক্ষা করছেন_ এ খবর পাওয়ামাত্র মুখ্যমন্ত্রী তাকে ডেকে পাঠান এই বলে_ আগে বিদ্যুৎ, তারপর অন্যসব। এর প্রতিদান সুবীর দাশগুপ্ত দেন বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা তিন হাজার মেগাওয়াট বৃদ্ধি এবং সঞ্চালন লাইন বিপুলভাবে সম্প্রসারণের মাধ্যমে। পশ্চিমবঙ্গে দায়িত্ব পালনকালে তিনি দশকের পর দশক বিদ্যুৎ ঘাটতির জন্য পরিচিত এ রাজ্যকে বিদ্যুৎ-উদ্বৃত্তে পরিণত করতে সক্ষম হন।
সম্প্রতি কলকাতায় তার সঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে। তার বয়স এখন ৭৭ বছর। এ বয়সেও প্রতিদিন টালিগঞ্জ থেকে সল্টলেকে অফিস করেন ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্টসের ভাইস চেয়ারম্যান (টেকনিক্যাল) হিসেবে। তিনি বলেন, উৎপাদনকারী সব প্রতিষ্ঠানকে সমান অর্ডার দেওয়া যাবে না। যার কাছ থেকে সবচেয়ে কম দামে পাওয়া যাবে, তাকে বেশি অর্ডার দিতে হবে। এর ফলে উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলবে। প্রাথমিক স্থাপনার ব্যয় কমিয়ে রাখতে পারলে এ কাজে সুবিধা হয়। বিদ্যুৎ এমন একটি পণ্য, যা মজুদ করে রাখা যায় না। যতটা উৎপাদন ততটাই ব্যবহার করতে হয়। গ্রিড কন্ট্রোল সিদ্ধান্ত নেবে, কার কাছ থেকে দিনের কোন সময়ে বিদ্যুৎ কিনবে। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন এবং গ্রিড কন্ট্রোলের কাজে এমন ব্যক্তিদের থাকতে হবে, যাদের চাকরি হারানোর ঝুঁকি নেই। তারা স্বাধীনভাবে যেন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তার নিশ্চয়তা থাকতে হবে। যদি দেখা যায়, সরকারের তহবিলে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করার মতো অর্থ নেই, তাহলে কম বিদ্যুৎ কিনবে এবং লোডশেডিং করতে হবে। তিনি বলেন, ভারতের বৃহত্তম রাজ্য উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষেষ্টৗতে কখনও লোডশেডিং করা হয় না। সেখানে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। কিন্তু এ রাজ্যের অন্যত্র লোডশেডিং হয়। এভাবেই নীতি ঠিক করা হয়েছে। গুজরাটে সেচ কাজের জন্য বিদ্যুতের আলাদা লাইন করে দেওয়া হয়েছে। লোডশেডিং করার ক্ষেত্রেও কৌশল ঠিক করা দরকার। হাসপাতাল কিংবা এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে কখনোই লোডশেডিং করা যাবে না। বাংলাদেশে দেখা যায়, গোটা এলাকায় এক বা একাধিক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। এস. কে. দাশগুপ্তের কাছে এ প্রসঙ্গ তুললে তিনি বলেন, সরবরাহ বন্ধের এলাকার মধ্যে হাসপাতাল থাকতে পারে, পানি সরবরাহের পাম্প থাকতে পারে, পুলিশের অফিস থাকতে পারে। সেখানে কেন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হবে? এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা লাইন থাকা দরকার। বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আরও কয়েকটি প্রসঙ্গ তার কাছে উত্থাপন করি। বছরখানেক আগে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি গ্রীষ্মকালে সন্ধ্যা থেকে কয়েক ঘণ্টা এয়ারকন্ডিশন্ড মেশিন বন্ধ রাখার প্রস্তাব করলে নাগরিক সমাজে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অথচ এটাও ঠিক যে, ঘর ঠাণ্ডা রাখার এ যন্ত্র প্রচুর বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এবং এ কারণে বিপুল সংখ্যক সাধারণ গ্রাহক ফ্যান-বাল্ব চালাতে পারে না। এ সমস্যা সমাধানের সঙ্গে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। এয়ারকন্ডিশন্ড যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না কিংবা ব্যবহার সীমিত রাখতে হবে_ এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। তবে যে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে, তাকে বেশি রেট দিতে হবে_ এ মতের পক্ষে তিনি। বাংলাদেশে মাসে সর্বোচ্চ ১০০ ইউনিট (কিলোওয়াট ঘণ্টা) বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের বিল হয় কম রেটে (প্রতি ইউনিট ২ টাকা ৮৭ পয়সা)। ৫০০ ইউনিটের বেশি ব্যবহারকারীদের অতিরিক্ত প্রতি ইউনিটের জন্য প্রায় আট টাকা রেটে বিল দিতে হয়। তিনি বলেন, সন্ধ্যার সময় বেশি ব্যবহারকারীদের রেট আরও বাড়ানো যেতে পারে। তবে এলাকা অনুযায়ী ভিন্ন সিদ্ধান্তও হতে পারে। যেমন মতিঝিল কিংবা সরকারি অফিসপাড়ায় সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ ব্যবহার প্রায় হয় না। কিন্তু দিনের বেলা শত শত স্থানে এয়ারকন্ডিশন্ড মেশিন চলে। সেখানে বাড়তি বিল ধার্য করতে হবে দিনের বেলার জন্য।
বাংলাদেশের ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় তার কয়েকটি পরামর্শ :এক. জলসম্পদ আরও কাজে লাগানো। দুই. কয়লাভিত্তিক উৎপাদন কেন্দ্র ক্রমাগত বাড়িয়ে চলা। তিন. নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন। চার. কার্বন ট্রেডের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখে অপ্রচলিত সূত্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে চলা।
এস. কে. দাশগুপ্ত মনে করেন, বাংলাদেশ তার বিপুল জলসম্পদ বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে আরও ভালোভাবে লাগাতে পারে। পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা_ এসব নদনদী হচ্ছে বড় সম্পদ। এগুলোতে ব্যারাজ বানিয়ে কিছু সময়ের জন্য পানি আটকে রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। তবে কোনো অবস্থাতেই নৌ-চলাচল আটকে রাখা যাবে না। তিনি বলেন, জলবিদ্যুৎ হচ্ছে জিরো-কস্ট বিদ্যুৎ। যতটা সম্ভব এ উৎসের প্রতি নজর দিতেই হবে।
জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তাকে জানাই, বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ রয়েছে, তবে পরিবেশবাদীদের আপত্তিও প্রবল। বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াটের একটি প্রকল্প নির্মাণ কাজ শেষ হলে সুন্দরবনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে অভিমত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডিজেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়বহুল। বাংলাদেশে গ্যাস রয়েছে এবং তা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে ব্যয় কম পড়ে। কিন্তু এখন জানা যাচ্ছে যে, এর মজুদ অপরিসীম নয়। এ কারণে কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র গড়ে তোলায় মনোযোগী হতে হবে। বাংলাদেশের নিজস্ব কয়লা রয়েছে। তবে তা থেকে এখন পর্যন্ত সীমিত পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। কয়লা কিংবা ডিজেল_ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উভয় ধরনের জ্বালানিই বাংলাদেশকে আমদানি করতে হবে। কিন্তু কয়লায় ব্যয় পড়বে কম। বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপুল চাহিদা মেটাতে কয়লা আমদানির জন্য বড় জাহাজ প্রয়োজন। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম কিংবা মংলা বন্দরে এ ধরনের জাহাজ নোঙর ফেলতে পারে না। এ সমস্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি নিজে কয়েকটি বড় বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলাম। এখন পশ্চিমবঙ্গের নয়াচরে একটি বড় কেন্দ্র (১২৬০ মেগাওয়াট) নির্মাণ করা হচ্ছে। এর কয়লা আসবে ইন্দোনেশিয়া থেকে। ওই দেশটিতে প্রায়শ প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে। এ কারণে বিদ্যুৎ প্রকল্পকে অন্তত ২ মাসের জ্বালানি মজুদ রাখতে হবে। তাছাড়া সমুদ্র উত্তাল থাকলেও পণ্য খালাসে কোনো কোনো সময় সমস্যা হবে। বাংলাদেশকে কয়লাভিত্তিক প্রকল্প নির্মাণ করতে গিয়ে অবশ্যই এসব সমস্যা বিবেচনায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, কয়লা ব্যবহার করলেও পরিবেশ দূষণ হয় না_ এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন হয়েছে। ভারতে এখন ১ লাখ ৮০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এর ৬০ শতাংশের জ্বালানি কয়লা এবং তার বড় অংশ আমদানি করা। ২৫ শতাংশ হচ্ছে জলবিদ্যুৎ। কয়লাভিত্তিক প্রকল্প পরিবেশ দূষণ করলে এ ধরনের সিদ্ধান্ত হতো না। কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো যেহেতু কম দামে বিদ্যুৎ দিতে পারে, সে কারণে তাদের কাছে বিদ্যুতের অর্ডার পেশ করতে বিতরণকারী সব প্রতিষ্ঠান আগ্রহী। তারা সারাবছর অর্ডার পায়। বাংলাদেশকে এটাও মনে রাখতে হবে, তেল দিয়ে বেশিদিন বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে না। এ পণ্যের দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছে এবং বাংলাদেশকে তার প্রয়োজনের প্রায় সব তেলই আমদানি করতে হয়। ইতিমধ্যে রেন্টাল পাওয়ার কেন্দ্রগুলোতে জ্বালানি বাবদ ভর্তুকি দিতে গিয়ে সরকারের রাজস্ব ভাণ্ডারে টান পড়েছে।
কয়লা পোড়ালে ছাই হয়। এর ব্যবহার কীভাবে হবে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। এ বর্জ্য সিমেন্ট ফ্যাক্টরির অপরিহার্য কাঁচামাল। বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পাশাপাশি তার ছাই ব্যবহারের জন্য সিমেন্ট কারখানা গড়ে উঠবে_ সেটা ধারণা করা যায়। বিদ্যুৎ কারখানায় যে পানি ব্যবহার করা হয়, তার বারবার ব্যবহারও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, জাপানে সুনামির কারণে ফুকুসিমো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিপর্যয়ের ঘটনায় এ ধরনের পদ্ধতি ব্যবহারের বিরুদ্ধে জনমত প্রবল। তারপরও পরমাণু শক্তি ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। তবে বিকল্পও তো আমাদের সামনে রয়েছে_ কয়লার আরও বেশি করে ব্যবহার। আমদানি করা কয়লাতেও কম দামে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হবে দ্রুতই_ এ প্রত্যাশা এস. কে. দাশগুপ্তের। পূর্বপুরুষের টানে তিনি সম্প্রতি তিনবার সফর করেছেন বাংলাদেশ। গিয়েছেন বরিশাল শহর ও গৈলায়। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারেও কাটিয়েছেন কিছু সময়। বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি তাকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, এ সবুজ কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রারও উৎস হতে পারে। যেমন পারে ঝলমলে রোদ। সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হলে ব্যয় পড়বে বেশি। কিন্তু উন্নত দেশগুলো থেকে এর বিনিময়ে 'কার্বন ট্রেড' সুবিধা পাওয়া গেলে বাড়তি ব্যয় অনেকটা পুষিয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ বায়ুমণ্ডল দূষণে বেশি ভূমিকা রাখে। অন্য কোনো দেশ যদি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে গিয়ে কম দূষণ করে, তাদের এ জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাত পরিচালনায় বাণিজ্যিক পদ্ধতি অনুসরণ বাঞ্ছনীয় বলে তিনি মনে করেন। কেউ বিল পরিশোধ না করলে অবশ্যই লাইন কেটে দিতে হবে। তবে এ কাজে বিশেষ জোর দিতে হবে বেশি ব্যবহার করা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি। ভারতে বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির বেশিরভাগ সরকারি খাতে। তবে বেসরকারি খাতের টাটা, রিলায়েন্স প্রভৃতি জায়ান্টেরও বিদ্যুৎ কোম্পানি রয়েছে। বাংলাদেশ তার বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে এসব কোম্পানির সঙ্গেও আলোচনা করতে পারে। আমলাতন্ত্রের অনেক নিজস্ব সমস্যা সব দেশেই থাকে। বেসরকারি খাতের এ সমস্যা কম। উৎপাদন, সঞ্চালন ও আমদানি_ সব প্রশ্নেই চলতে পারে আলোচনা।
তিনি আরেকটি পরামর্শ প্রদান করেন :বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমদানি করা মেশিন ও জ্বালানির জন্য (কয়লা, ডিজেল) দরকার হলে শুল্ক আরোপ করা উচিত নয়। এতে উৎপাদন ব্যয় বাড়ে এবং পরিণতিতে বাড়ে সরকারের ভর্তুকি। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত দাঁড়ায় এক হাতে দিয়ে আরেক হাতে ফেরত নেওয়া। এ ক্ষেত্রে বড় সমস্যা রয়েছে_ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াও আরও অনেক প্রতিষ্ঠান ডিজেল ও কয়লা ব্যবহার করে। তারা বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে এসব পণ্য আমদানি করে শুল্ক-কর ছাড়ের সুবিধা নিতে পারে। কিন্তু সরকারের হাত তো অনেক বড় এবং দুর্নীতি-অনিয়ম দূর করা তারই দায়িত্ব।
সবশেষে বলব, বাংলাদেশের এ পরম সুহৃদের সঙ্গেও কিন্তু আমাদের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় আলোচনা চালাতে পারে এবং তাতে সরকারের ওপর কোনো আর্থিক দায়ও চাপবে না।

অজয় দাশগুপ্ত :সাংবাদিক
ajoydg@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.