পাহাড় কাটছেন মুফতি ইজাহার! by প্রণব বল

ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের সভাপতি মুফতি ইজাহারুল ইসলামের লোকজন চট্টগ্রামের খুলশী থানাধীন লালখান বাজার এলাকায় একটি পাহাড়ের অংশ কেটে ফেলেছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর এ বিষয়ে ইজাহারুলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ও পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। এতে পাহাড় কাটা আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে ইতিমধ্যে যতটুকু পাহাড় কাটা হয়েছে, তাতে প্রায় ৫০টি পরিবার ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।


খোঁজ নিয়ে ও সরেজমিনে জানা গেছে, লালখান বাজারের পাশে সরকারি পাহাড়ের একটি অংশ ইজারা নিয়ে এর ওপর বিশাল এলাকাজুড়ে মুফতি ইজাহারুল গড়ে তুলেছেন জামিয়াতুল উলুম মাদ্রাসা ও আল ইমাম একাডেমি। পাহাড়ের পেছনের অংশটি কুসুমবাগ আবাসিক এলাকার সঙ্গে লাগানো। কুসুমবাগ আবাসিক এলাকার পাশ দিয়ে মাদ্রাসা ও একাডেমিতে ওঠার জন্য পাহাড়ের ঢাল কেটে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। সপ্তাহ খানেক আগে এই পাহাড় কাটা শুরু হয়। এ সময় শ্রমিকদের পাশপাশি মাদ্রাসার ছাত্ররাও পাহাড় কাটায় অংশ নেয় বলে জানা গেছে। জানা গেছে, কাটা অংশের একটি জায়গায় ভবন নির্মাণের জন্য ইজাহারুল একটি আবাসনপ্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়েছেন। এর ফলে পাহাড়ের ওপর ও পাদদেশে বসবাসকারী অন্তত ৫০টি পরিবার ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
ভুক্তভোগীরা ইজাহারুল ইসলামকে বিবাদী করে অতিরিক্ত জেলা হাকিম আদালতে পৃথক দুটি মামলা করেছেন। পাহাড় কাটার প্রতিবাদে তাঁরা মানববন্ধনও করেছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পুলিশ কমিশনার, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
কুসুমবাগ এলাকার বাসিন্দা চেমন আরা বলেন, ‘সামনে বর্ষা মৌসুম। যেভাবে তাঁরা পাহাড় কেটেছেন, তাতে পাহাড়ের সব মাটি পানির সঙ্গে নেমে আসবে। এখনই কাটা অংশ দিয়ে মাদ্রাসার ভাড়া ঘরগুলোর বাথরুমের পানি এসে আমাদের বাসার ওপর পড়ছে।’
গত বৃহস্পতিবার পরিবেশ অধিদপ্তরে এ বিষয়ে শুনানিতে মুফতি ইজাহারের পক্ষে মিজানুর রহমান নামে তাঁর ব্যবস্থাপক উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তিনি পাহাড় কাটার কথা স্বীকার করেছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক গোলাম মোহাম্মদ ভুঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা সরকারি জায়গা। লিজ নিয়ে তিনি (মুফতি) ব্যবহার করছেন। কিন্তু তিনি তা কোনোভাবেই আর কাউকে হস্তান্তর করতে পারেন না। আমরা সরেজমিনে দেখেছি, তাঁরা পাহাড়ের নির্মাণের পাশাপাশি তা গ্রিন ডেল্টা হাউজিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ভবন নির্মাণের জন্য দিয়েছেন। এ জন্য আমরা তাঁদের কারণ দর্শানোর নোটিশের পাশাপাশি যাবতীয় কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি।’
গোলাম মোহাম্মদ ভুঁইয়া বলেন, ‘এভাবে পাহাড় কাটার কারণে পাহাড়ের ওপরে ও পাদদেশে বসবাসকারী পরিবারগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। সামনের বর্ষায় তাঁদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, ‘জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন, দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করা যাবে না।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, মুফতি ইজাহারের পাহাড় কাটার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে তাঁরা শক্তিশালী পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশনকে অবহিত করবেন।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে ইজাহারুল ইসলামকে বারবার ফোন করেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে। তাঁর ছেলে মুছা বিন ইজাহারের কাছে ফোন করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি ঢাকায় আছেন। এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের শুনানিতে মুফতি ইজাহারের পক্ষে তাঁর ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান ছাড়াও তাঁর আইন উপদেষ্টা মো. নেজাম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সেই অর্থে পাহাড় কাটিনি। পাহাড়ের কিছু অংশ ছেঁটে একটা রাস্তা তৈরি করেছি মাত্র। তবে এর কারণে ওপরের ও নিচের ঘর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এখন আমরা আর পাহাড় কাটব না। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে এটা নিয়ে বিভাগীয় কমিশনারের পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে বসব। সেখানে পরিবেশ অধিদপ্তর একটা সিদ্ধান্ত দেবে। প্রয়োজনে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ টাকা দিয়ে পাহাড়টি রক্ষা এবং ঝুঁকিমুক্ত করার ব্যবস্থা করবে। এ ব্যাপারে মুফতি সাহেবের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।’ নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘মুফতি সাহেব অসুস্থ। তাই তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরে যাননি।’

No comments

Powered by Blogger.