দিনটি হোক শান্তিপূর্ণ by সৈয়দ আবুল মকসুদ

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলেই বহু শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নেতা রয়েছেন। তারা অতীতে বহু আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। কী উপায়ে শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠান করতে হয় সেটা তারা খুব ভালো করে জানেন সভা-সমাবেশ ও মিছিল আয়োজন করা গণতন্ত্র চর্চার অংশ।


শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠানে বাধা দেওয়া সাংবিধানিক অধিকারকে অস্বীকার করা হিসেবেই গণ্য হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে, 'জনশৃঙ্খলা ও জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধসাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।'
আমাদের দেশে বহুকাল যাবৎ গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম হয়ে আসছে। আন্দোলন-সংগ্রামের ভেতর দিয়ে ও নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হয়েছে। সুতরাং রাজনৈতিক আন্দোলন ও কর্মকাণ্ড কী, সেটা সরকারের নেতাদের অজানা নয়।
বিএনপি এবং তাদের মিত্ররা 'চলো চলো ঢাকা চলো' স্লোগান দিয়ে রাজধানী ঢাকায় মহসমাবেশ অনুষ্ঠানের কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতারা তা প্রতিহত করার কথা বলতে থাকেন। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল কোনো কোনো নেতা এ সমাবেশ নিষিদ্ধ করারও দাবি তোলেন।
এর জবাবে বিএনপি নেতারা বলতে থাকেন, তারা সারাদেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ সমবেত করে ঢাকাকে অচল করে দেবেন। আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপি নেতাদের অর্থহীন মেঠো বক্তৃতাকে আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করেন। গোয়েন্দা পুলিশের বরাত দিয়ে সংবাদে বলা হতে থাকে যে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তাদের মিত্ররা ১২ মার্চ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটানোর চেষ্টা করতে পারে। তার জবাবে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, সরকারই নাশকতা করে তাদের সমাবেশ বানচালের চেষ্টা করছে। উভয়পক্ষের এসব অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ জনগণ পছন্দ করেনি এবং এতে দুই পক্ষের কেউই লাভবান হয়নি। বরং আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
জনগণের জানমাল ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। একই সঙ্গে সরকারের বাধ্যবাধকতা হলো দেশবাসীর নাগরিক অধিকার সমুন্নত রাখা। তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার বিনা বাধায় পালন করতে দেওয়া। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষকে ঢাকায় আসতে বাধা দেওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন। আবাসিক হোটেলকে ভাড়া দিতে নিষেধ করা একেবারেই অনুচিত হয়েছে এবং বাস-লঞ্চ মালিকদের বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ অগণতান্ত্রিক কাজ। সরকারের কাজ হলো, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে সেদিকে দৃষ্টি রাখা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলেই বহু শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নেতা রয়েছেন। তারা অতীতে বহু আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। কী উপায়ে শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠান করতে হয় সেটা তারা খুব ভালো করে জানেন। গণতন্ত্রকামী প্রতিটি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, আজকের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে ও নির্বিঘ্নে পালিত হবে। সরকার ও বিরোধী পক্ষ কোনো দিক থেকে বাড়াবাড়ি হচ্ছে কি-না, সেটা জনগণই লক্ষ্য রাখবে। যে কোনো এক পক্ষ বাড়াবাড়ি করলে সে পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। লাভবান হবে অন্যপক্ষ। এমনও হতে পারে, সীমা লঙ্ঘন করলে বিবদমান দুই পক্ষের কোনো পক্ষই লাভবান হবে না।
বিএনপি একাধিকবার দেশের ক্ষমতায় ছিল। আবার ক্ষমতায় যাওয়ার আশাতেই তারা আন্দোলন করছে। আওয়ামী লীগও চাইবে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে ফের নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করতে। তাই যদি হয় দুই পক্ষের লক্ষ্য, তাহলে তাদের কাছ থেকে সংযত আচরণই কাম্য।
অতীতে যারাই যখন আক্রমণমূলক আচরণ করেছেন, তার ফল তারা ভোগ করেছেন। মানুষ গণতান্ত্রিকভাবে তার আবেগ-অনুভূতি ও দাবি-দাওয়ার কথা প্রকাশ করতে চায়। এটা তাদের অবশ্যই করতে দেওয়া উচিত। মানুষ আরও চায় শান্তি। মিছিল-সমাবেশের কারণে নাগরিক জীবনে কিছু অসুবিধা ভোগ করলেও আজকের দিনটি শান্তিপূর্ণভাবেই অতিবাহিত হোক, সেটাই আমাদের সবার কাম্য।

সৈয়দ আবুল মকসুদ : কলাম লেখক

No comments

Powered by Blogger.