দেশের ক্ষতি ও জনদুর্ভোগ বাড়াবে-আবার হরতাল

বুধ ও বৃহস্পতিবারের হরতালের পর মাঝে শুক্র ও শনি দুই দিন গেছে সরকারি ছুটি। আজ সকাল থেকে কাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত আবার হরতাল। দুটি পক্ষের ডাকা এই দুই দফা হরতাল যে হিসাব-নিকাশ করেই দেওয়া হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। নিজেদের হিসাব-নিকাশ পাকা হলেও হরতালে যাঁরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন,


সেই নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনের হিসাব-নিকাশ নিয়ে কারোরই কোনো চিন্তাভাবনা আছে বলে মনে হয় না। নির্মম রসিকতা হচ্ছে, হরতাল নামের এই ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচিটি ব্যবহার করা হচ্ছে দেশের ও জনগণের স্বার্থ ও ধর্ম রক্ষার নামে।
বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষ থেকে গত ৪৮ ঘণ্টার হরতাল যেসব দাবিতে দেওয়া হয়েছিল, বলা যায় সেই একই দাবিতে আজ রোববার সকাল থেকে শুরু হচ্ছে টানা ৩০ ঘণ্টার হরতাল। বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষ থেকে এই হরতালের প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছে। ধারাবাহিক এই হরতাল ডেকে সরকারকে কতটুকু নাড়া দেওয়া যাবে, তা স্পষ্ট না হলেও দেশের সর্বনাশ যে করা যাবে, তা স্পষ্ট। হরতালের ব্যাপারে আমাদের যে অভিজ্ঞতা, তাতে এটাই স্পষ্ট যে হরতাল ক্ষমতাসীন দল বা সরকারকে স্পর্শ করে না। ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, রপ্তানি এবং সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি। আর এই সময়ে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েন দৈনিক শ্রম বিক্রি করে যাঁরা পেট চালান, সেই জনগোষ্ঠী। যাঁরা হরতাল ডাকেন, তাঁরা তো আসলে সরকারের বিরোধিতার নামে দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তাই সব সময় হরতালের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান।
বিরোধী দল সরকারের যেকোনো অবস্থান ও নীতির বিরোধিতা করতে পারে। আর সে বিরোধিতার মূল লক্ষ্য হচ্ছে নিজেদের অবস্থানের পক্ষে জনগণের সমর্থন আদায় করা। গণতান্ত্রিক দুনিয়ায় সভা-সমিতি, গণসংযোগ, প্রচার-প্রচারণা এবং বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম ব্যবহার করে তা করা হয়। আর আমাদের দেশে সহজ পথ হচ্ছে হরতাল ডেকে দেওয়া। হরতালের আগের রাতে গাড়ি ভাঙচুর হবে, গাড়িতে আগুন দেওয়া হবে, জনগণ ভয়ে আর নিজেদের গাড়ি নিয়ে বের হবে না। সুতরাং হরতাল যাঁরা ডাকেন, তাঁরা সহজেই দাবি করে বসেন, হরতাল সফল হয়েছে। বছরের পর বছর এই ধারা চলতে পারে না। ত্যক্ত-বিরক্ত জনগণ ও সচেতন নাগরিকদের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরেই দাবি উঠেছে হরতালের বিকল্প রাজনৈতিক কর্মসূচি খুঁজে বের করার।
দেশের জনগণ যেমন হরতালের বিরোধী, তেমনি আমরা নিশ্চিত যে যাঁরা হরতাল ডাকেন, তাঁরাও হরতালের এই নেতিবাচক দিক সম্পর্কে অবহিত। সুতরাং রাজনৈতিক দলগুলো যদি জনগণের সমর্থনের বিষয়টি বিবেচনায় নেয় এবং জনগণকেই তাদের শক্তির উৎস মনে করে থাকে, তবে হরতাল ডাকার এই সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রয়োজনে রমজানেও হরতাল ডাকার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ধর্মের নামে এরা রাজনীতি করলেও মানুষ নির্বিঘ্নে ধর্ম পালন করুক, তা চায় না। হরতালের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান ও জনমত গঠনের কাজ অব্যাহত থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.