শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হোক-বিরোধী দলের মহাসমাবেশ

রাজধানী ঢাকায় পরিস্থিতি বেশ অস্বাভাবিক। থমথমে। এর পেছনে বিরোধী দলের মহাসমাবেশ যতটা না ভূমিকা রেখেছে, তার চেয়েও বেশি অবদান রেখেছে সরকারের কিছু পদক্ষেপ। রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে পুলিশের তল্লাশি চৌকি (চেকপোস্ট) বসানো হয়েছে। সেখানে বাস ও অন্যান্য যানবাহন থামিয়ে যাত্রীদের দেহ তল্লাশি চালানো হচ্ছে।


বিন্দুমাত্র সন্দেহ হলে গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে। বরিশাল, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়ার বাস-লঞ্চ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে মানুষের মধ্যে একধরনের ভয়ভীতি দেখা দিয়েছে।
বিরোধী দলের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে নাশকতামূলক তৎপরতা চলতে পারে—এ আশঙ্কা থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে। কিন্তু এ জন্য হাজার হাজার মানুষ গ্রেপ্তার, সড়ক-মহাসড়ক-নৌপথে যান চলাচল বন্ধ, রাজধানীর হোটেলগুলোতে মানুষ না রাখার জন্য প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ নির্দেশ, পথে পথে পুলিশের বাধা দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নাশকতামূলক তৎপরতার সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে পুলিশ নিশ্চয়ই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, মানুষের জানমাল-নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। কিন্তু নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নামে নিরীহ মানুষের হয়রানি গ্রহণযোগ্য নয়। বস্তুত, চোখে পড়ার মতো তেমন কোনো ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেনি। তাহলে কেন এত সাজ সাজ রব? সাধারণ বিবেচনায় বলা চলে, বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করার জন্যই এত কাণ্ড। এর কোনো প্রয়োজন ছিল বলে সাধারণ মানুষ মনে করে না।
বিশেষত, যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় মানুষের জরুরি যোগাযোগ, সামাজিক অনুষ্ঠান, রোগীর চিকিৎসা থেকে শুরু করে পড়াশোনা, পরীক্ষা—সবকিছুই অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে অসুস্থ মানুষজন। হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় অনেকে জরুরি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এই ক্ষতি কীভাবে পূরণ হবে? শুধু বিরোধী দলের মহাসমাবেশ থাকলেও মানুষ বিপন্ন বোধ করত। সেটা তো আছেই, উপরন্তু সরকারের বাড়াবাড়ি পদক্ষেপ সেই বিপদকে আরও বাড়িয়েছে। বিরোধী দল যেসব দোষে দুষ্ট বলে সরকার অভিযোগ করে, তার অনেকখানি দায় সরকার নিজেই নিজের কাঁধে নিয়েছে!
সরকার ও বিরোধী দল—উভয়েই তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে কার্যকর সংসদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু আজ বিরোধী দল সংসদে যায় না। অন্যদিকে সরকার বিরোধী দলের চলতি অধিবেশনে যোগদানের সম্ভাবনাকে সামনে রেখে অধিবেশনের মেয়াদ কয়েক দিন বাড়িয়েছে। কিন্তু মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সরকার যেসব কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, তা তাদের সংসদে যোগদানের সম্ভাবনা বরং পেছনে ঠেলে দেবে মাত্র। সরকারের উচিত বিরোধী দলকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার সুযোগ দেওয়া।
অতীতে বিএনপির সরকারের সময়ও তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের ডাকা হরতাল-সমাবেশের বিরুদ্ধে একই ধরনের গণগ্রেপ্তার, যান চলাচলে বাধা সৃষ্টিসহ যাবতীয় দমন-পীড়নের পথ অনুসরণ করা হতো। বর্তমান সরকারও সেই পথ অনুসরণ করে প্রমাণ করল, তারা অতীতের খারাপ উদাহরণগুলোর ঊর্ধ্বে উঠতে অক্ষম। চলতি রাজনীতির এই অশুভ আবর্ত থেকে মুক্ত হতে না পারলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে না।

No comments

Powered by Blogger.