মার্চ ইজ টু মাচ ফর আস by শাহেদ মুহাম্মদ আলী

বছরের কোন মাস কত দিনে, তা মনে রাখার জন্য একটা টোটকা ছড়া ছোটবেলায় কমবেশি সবাইকে পড়তে হয়েছে: ৩০ দিনে হয় মাস সেপ্টেম্বর, সেই রূপে এপ্রিল, জুন আর নভেম্বর...। শিশু বয়সের পড়া। তাই ‘মাস’কে আমরা অনেকে ‘মার্চ’ বলে ভুল করেছি।


মার্চ আমাদের জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সে জন্যই হয়তো অবচেতন মনে আমরা মাস শব্দটিকেও মার্চ বলেছি।
এই মার্চ আমাদের স্বাধীনতার মাস। সাতই মার্চ বঙ্গবন্ধু আমাদের জীবনে শোনা সেরা ভাষণটি দিয়েছেন। ৮ মার্চ নারী দিবস। (দুই) নারীর মাজেজা বোঝে না এমন দেশি আদম খুঁজে পাওয়া ভার। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। ২৫ মার্চের কালরাত কি মনে করিয়ে দেওয়ার দরকার আছে? ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। এই মার্চে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছেন। তবে জিয়া পরিবারের আরও তারিখের মতো এ তারিখটি নিয়েও বিতর্ক তৈরি করে রেখেছে খোদ বিএনপি।
ফলে মার্চ ইজ টু মাচ ফর আস। মার্চ আমাদের জন্য আলোর মাস। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরেই এই মার্চ আমাদের জীবনকে আতঙ্কিত করে রেখেছে, বিশেষ করে আজকের এই ১২ মার্চ।

বিএনপি কেন ১২ মার্চ দিনটি বেছে নিল?
জিয়া পরিবারের রাজনৈতিক সদস্য এখন পর্যন্ত তিনজন। ১২ এর যোগফলও (১+২) তিন। তিন জিয়া পরিবারের ভরসংখ্যা। এ জন্যই বিএনপি ১২ তারিখের ওপর ভর করেছে। মার্চ মাস বেছে নেওয়ার কারণ হলো, ৪০ বছর আগে এই মাসে এ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতাপ্রধান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন। ফলে মাসটির একটি ঐতিহাসিক সম্ভাবনাও দেখতে পেয়েছে বিএনপি। তবে জ্যোতির্বিদেরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে শনির একটা কালো ছায়াও দেখা যাচ্ছে। কারণ, জিয়ার সাফল্য এসেছে চট্টগ্রাম থেকে। আর এই মহাজমায়েতটি ডাকা হয়েছে ঢাকায়। তাই ‘বসন্ত বিপ্লবের স্বপ্ন’ সফল করতে হলে এই দিনে বিএনপি কর্মীদের নুড়িপাথর হাতে রাখতে হতে পারে।

আওয়ামী লীগ কেন ১২ মার্চ নিয়ে উদ্বিগ্ন?
এক্ষণে আমরা বাংলাদেশের টক্কর-রাজনীতির মূলের সন্ধান পেয়ে যেতে পারি। আশ্চর্যজনকভাবে এ মুহূর্তে শেখ পরিবারের ভরসংখ্যাও তিন। কারণ, এই পরিবারেরও রাজনৈতিক সদস্য এখন তিনজন। তাই চাইলেও বিএনপির এই মহাগণজমায়েত নিয়ে আওয়ামী লীগ চুপ করে বসে থাকতে পারবে না। দুই পরিবারেরই একই ভরসংখ্যা (তিন) হওয়ায় রাশিই আওয়ামী লীগকে টক্করে টেনে আনছে। এতে আওয়ামী লীগের কোনো দোষ নেই। তবে রাজনীতির ভাগ্যাকাশ পর্যবেক্ষণকারীরা বলছেন, এই হাড্ডাহাড্ডি টক্করে জিততে হলে আওয়ামী লীগকে পুলিশের সহায়তা নিতে হতে পারে।

দোষ আরোপের রাজনীতি
গত কয়েক মাসজুড়ে এ নিয়ে এক দল অন্য দলকে দোষারোপ করে আসছে। এই বাক্যটিতে আসলে নতুন কোনো তথ্য নেই। আইডিয়ার অভাব থাকলে আসলে এমনই হয়। তো, দিনবদলের সরকার বদলের এই কর্মসূচিকে সরকারি দল ঠান্ডা মাথায় কীভাবে মোকাবিলা করতে পারত?

গণতান্ত্রিক পদ্ধতি
নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারি দল আওয়ামী লীগ চাইলে শঙ্কার এই ১২ মার্চ দিনটিকে মাত্র ৩০ সেকেন্ডে এক দিন বলে হাপিশ করে দিতে পারত। কিন্তু গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের দল বলে তারা হাপিশ না করে দিনটি নিয়ে কয়েক মাস ধরে ফিসফিস করছে। এই ফিসফিসানি থেকে এখন বড় আওয়াজের জন্ম হচ্ছে।

ক্রসফায়ার পদ্ধতি
এই প্রক্রিয়ায় একটা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা যেত, ৭ মার্চের সঙ্গে দুই মাসব্যাপী বন্দুকযুদ্ধে খোদ ১২ মার্চ ক্রসফায়ার হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের নীলনকশা পাওয়া গেছে। একে আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে।

ডিলিট (গুম) পদ্ধতি
ক্রসফায়ার-প্রক্রিয়ায় সাহস পাওয়া না গেলে ডিজিটাল উপায়ে শিফট ডিলিট বা গুম করে দেওয়া যেত। বিশ্বস্ত কাউকে দিয়ে অথবা বিশ্বস্ত বলে নিজেকে জাহির করতে উদ্যত এমন কাউকে দিয়ে মার্চ মাস থেকে ১২ তারিখটি গুম করা যেত।

স্কিপ পদ্ধতি
কানো রুলডোজার দিয়ে এমন ব্যবস্থা করা যেত—‘১২ মার্চ দিনটি মার্চ মাসের মধ্যে ধর্তব্য নয় বলে গণ্য হবে।’

বিএনপির সামনে আরও সুযোগ
১৫ মার্চ বিশ্ব পঙ্গু দিবস উপলক্ষে বিএনপির উচিত এমন কোনো কর্মসূচি দেওয়া, যাতে সরকারের মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। এটা করতে পারলে শুধু সরকার উৎখাত নয়, একে দেশছাড়াও (চিকিৎসার জন্য) করা যেত।

১/১১-অলাদের কী করণীয়
তৃতীয় পক্ষহীন বৈশ্বিক রাজনীতিতে নতুন দিশা ১/১১ গ্রুপ। এখনো তাদের সামনে সুযোগ আছে। তারা ২১ মার্চকে টার্গেট করতে পারে। আওয়ামী রং, বিএনপি রং মুছে দেওয়ার জন্য এ দিনটি উৎকৃষ্ট হতে পারে। কারণ, ২১ মার্চ হচ্ছে বিশ্ব বর্ণবৈষম্য দিবস। রাজনীতির বর্ণবৈষম্য দূর জরুরি।

জনতা বীর জনতা
ওস্তাদের মার শেষ রাত—এই দেশি প্রবাদ কাজে লাগানোর সংখ্যাতাত্ত্বিক সুযোগ আছে এই মার্চ মাসেই। বীর বাঙালি আর কিছু না পারলেও মার্চের শেষ দিনটিতে গাঁটছড়া বাঁধতে পারেন। কারণ, ৩১ মার্চ জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস। আশু দুর্যোগের প্রস্তুতি থাকা উচিত সবার।

No comments

Powered by Blogger.