তবে চেহারাটা হরতালের মতো by সুকুমার সরকার

হরতাল নয়। তবে চেহারাটা হরতালের মতো। এক্ষেত্রে আরো একধাপ এগিয়ে বলা যায় কড়া হরতাল। অর্থাৎ হরতালে কিছু কিছু গাড়ি-ঘোড়া অন্তত চলে। শাসকদলের মালিকানাধীন লোকেদের কিছু বাস-মিনিবাস চলে ঢাকার রাস্তায়। বেসরকারি পর্যায়ে গাড়ি কম নামলে সরকার সেই ঘাটতি পুষিয়ে দিতে বিআরটিসি’র বাস নামায় রাস্তায়।

কিন্তু সোমবার সে চিত্রটা একেবারে ভিন্ন। রাজধানী ঢাকাকে যেন চেনাই দায়। কে বলবে যানজটে জেরবার আমার ঢাকা? সকাল সাড়ে আটটায় ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি নিত্যদিনের ফকিরাপুল অন্যরকম। লোকজনের ভিড় নেই। পরে বুঝলাম কেন ফাঁকা। হোটেল খোলা নেই। অনেক মুদি দোকানও বন্ধ। রাস্তার ধারের দু’একটি চায়ের দোকানে কিছু লোক বসে আছেন।

তারা এদিনের বিষয় নিয়েই আলোচনায় মত্ত। কৌতুহল নিয়ে একটু এদিক-ওদিক তাকালাম। দেখা হলো অতি পরিচিত হারুনের সঙ্গে। দোকান-পাট বন্ধ কেন জানতে চাইলেই বললেন রোববার সন্ধ্যায় কারা নাকি এসে বলে গিয়েছে তখুনিই হোটেল বন্ধ রাখতে। তাই রোববার রাত থেকেই হোটেল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সোমবারও একই রকম অবস্থা।

জানতে চাইলাম মুদি দোকানও তো হরতালে বন্ধ থাকে না- তবে আজ এ অবস্থা কোন। ভেবে বললেন-  আতঙ্কে অনেকে দোকান বন্ধ রেখেছেন। যদি লুটপাট হয় সেই ভয়ে।

ব্যস্ত মতিঝিলের অবস্থাও একই রকম। কিছু লোক হেঁটে অফিসে যাচ্ছেন। তবে হরতালের দিনের তুলনায় সংখ্যায় অবশ্যই কম। সড়কে প্রাইভেটকারের দাপট নেই। ১৬ তলার সামনের পেট্রোল পাম্পে কোনো গাড়ি নেই। কিছু কিছু রিকশা চলছে। বাস-মিনিবাস উধাও।

মতিঝিল ভায়া সায়েন্স ল্যাবরেটরি মুহম্মদপুর রুটে ২/১টি লেগুনা চলছে। তবে মনে হলো যাত্রী ভিড় তেমন একটা নেই। ফকিরাপুল থেকে বেরুনোর পথের মাথায় কালভার্ট রাস্তায় পুলিশের সতর্ক প্রহরা। দৈনিকবাংলা মোড়ে অনেক পুলিশ। বায়তুল মোকাররম-এর ব্রিজের নিচে চায়ের দোকানে কোন ভিড়-ভাট্টা নেই। সেখানের ফুটপাতে হকারদের দোকানও বন্ধ। 

বায়তুল মোকাররম পার হয়ে পুরানা পল্টন মোড়ে এসে আরো পুলিশ চোখে পড়লো। অন্যদিনের তুলনায় অতি সহজেই পুরানা পল্টন মোড় পার হয়ে পুলিশ বক্স সংলগ্ন প্রেসক্লাবে যাওয়ার ফুটপাতে উঠলাম। রাস্তা পার হওয়ার সময় দেখলাম গুলিস্তানের দিক থেকে বন্ধু পরিবহনের একটি গাড়ি কোনও যাত্রী ছাড়াই মালিবাগের দিকে যাচ্ছে।

প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তাও সুনশান। গাড়ি তো নেই-ই লোকজনও নেই। গোটা ছয়েক সিএনজি অলস সকাল পার করছে। এ এলাকায়ও পুলিশ পাহারা। অবশ্য প্রতিদিন এখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সমাবেশ থাকে। তাই পুলিশেরও উপস্থিতি থাকে।

ক্যান্টিনে ঢুকতেই দেখা হলো- প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ ভাইয়ের সঙ্গে। কুশল বিনিময়ের সময়েই মনে পড়ল আজ তো মন্ত্রি পরিষদের বৈঠক। অবশ্য ক্লাবেও এদিন অন্যদিনের তুলনায় ফাঁকা। বুঝলাম সবাই অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে স্পটে রয়েছেন।

অফিসে আসার পথে কোনো ভিড় ছাড়াই সোয়া ১০টার দিকে গাড়ি এসে থামলো বার কাউন্সিলের সামনে মৎস্য ভবন সংলগ্ন সিগনাল বাতিতে। কয়েক মিনিট পরে সচিবালয় অভিমুখে চলে গেল প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর।

কাকরাইল মসজিদ পার হয়ে ডান দিক ধরে গির্জার সামনে দিয়ে এগিয়েই দেখি একটা মিছিল যাচ্ছে নয়াপল্টনের দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অভিমুখে। অগত্যা গাড়ি ঘুরিয়ে বেইলি রোড ধরলো আমাদের গাড়ি।

মৌচাক মোড়, মালিবাগ রেলক্রসিং, রামপুরা বাজার, মেরুল-বাড্ডা, লিংক রোড, নতুন বাজার বা নর্দ্দা- পথের চিত্রটাও একই রকম। পথে কোনো বাস-মিনিবাস নেই। রাস্তায় রিকশাও তেমন একটা নেই। নেই কোনো মিছিল।

No comments

Powered by Blogger.