সরকারের কি টনক বলে কিছু আছে?-বুড়িগঙ্গায় ট্যানারি-বর্জ্য

বুড়িগঙ্গা নদীটির সর্বনাশ কীভাবে আমরা নিজেরাই করছি, গতকালের (৯ মে, ২০১১) প্রথম আলোর প্রথম পাতায় ছাপা হওয়া ছবিটিই তা বলে দিচ্ছে। রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায় প্রায় ২০০ ট্যানারি আছে। এগুলো থেকে যেসব বিষাক্ত বর্জ্য তৈরি হয়, তার গন্তব্য হচ্ছে বুড়িগঙ্গা।


তরল ও কঠিন—এই দুই ধরনের বর্জ্য একদিকে যেমন নদীটির পানি বিষাক্ত করেছে, তেমনই করছে ভরাট। সবার চোখের সামনে এবং জানা-বোঝার মধ্যেই দিনের পর দিন এই সর্বনাশা কাজটি ঘটে চলেছে। কিন্তু আমাদের কারোরই যেন কিছু করার নেই—না সরকারের, না উচ্চ আদালতের।
হাজারীবাগ এলাকা থেকে ট্যানারি শিল্প সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বহু আগে। সাভারে একটি ট্যানারি শিল্পনগরও গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানেই সব কারখানা সরিয়ে নেওয়ার কথা। কিন্তু ট্যানারির মালিকেরা তা সরাচ্ছেন না। তাঁদের কিছু দাবি ও ক্ষতিপূরণের ব্যাপার আছে। এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে তাঁদের দেনা-পাওনার বিষয় আছে। এ কারণেই বিষয়টি ঝুলে আছে। ট্যানারি-বর্জ্যের গন্তব্যও তাই গতিপথ পরিবর্তন করেনি। বুড়িগঙ্গা নদীর মাছ এখন প্রায় বিলুপ্ত, পানি বিষাক্ত, আশপাশের মাটির উর্বরতাসহ জমি হারাচ্ছে গুণাগুণ এবং হাজারীবাগ এলাকায় যাঁরা থাকেন, তাঁরা ভুগছেন শ্বাসকষ্টসহ নানা চর্মরোগে।
২০০৯ সালের ২৩ জুন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানা স্থানান্তর করতে কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন। সে অনুযায়ী, ২০১০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো সাভারে স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে স্থানান্তর করা না হলে এগুলো বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর শিল্প মন্ত্রণালয় ও ট্যানারি মালিক সমিতি এ নিয়ে আবেদন করেছে। হাইকোর্ট এই সময়সীমা আরও তিন দফা বাড়িয়েছেন। ট্যানারিগুলো এখনো হাজারীবাগে বহাল তবিয়তেই রয়েছে।
উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর সরকারের দায়িত্ব তা কার্যকর করা। আর সবচেয়ে বড় কথা, পরিবেশের যে বিপর্যয় হচ্ছে, সেটা থেকে এই নদীকে রক্ষা করার দায়টিও তো সরকারের নেওয়া উচিত। সাভারে ট্যানারিগুলো সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মালিকদের যে দাবিদাওয়া রয়েছে, যুক্তিসংগত হলে তা মেনে নিয়ে সরকারের উচিত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। আর দাবি অযৌক্তিক হলে ট্যানারি সরিয়ে নিতে মালিকদের বাধ্য করতে হবে। দুটির একটিও করছে না সরকার। অথচ টনক বলে যদি সরকারের কিছু থেকে থাকে, তবে তা শুধু নড়া নয়, ঝাঁকি দিয়ে ওঠা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.