জীবন ছিলো দাসত্বের তাই সুইসাইড?

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর খিলক্ষেতে রিজেন্সি হোটেলের একটি কক্ষে সাংবাদিক মিনার মাহমুদের মরদেহ পাওয়া যায়। মারা যাওয়ার আগে তিনি কক্ষে ৬ পৃষ্ঠার একটি নোট লিখে গেছেন। র‌্যাবের মিডিয়া ও লিগ্যাল উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল জানান, আমরা কক্ষে দেখেছি তিনি সেখানে ঘুমাননি।
কারণ তার বেডের ওপরে ওষুধ পড়েছিল। তিনি বেডের পাশে লাগানো চেয়ারে বসা ছিলেন। সম্ভবত মারা যাওয়ার আগে অজ্ঞান অবস্থায় তিনি চেয়ার থেকে পড়ে যান। তিনি জানান, মিনার মাহমুদের লিখে যাওয়া চিঠিটি তিনি পড়েছেন। সাংবাদিক জীবন ও আমেরিকার জীবন নিয়ে এই চিঠিতে তিনি অনেক কিছু লিখেছেন। আমেরিকার জীবনকে তিনি দাসত্বের জীবন বলে উল্লেখ করেছেন। তবে পরিবার নিয়ে তিনি কোনো অভিযোগ করেননি। শুধু পেশাগত বিষয়ে তিনি অনেক হতাশার কথা লিখেছেন।

চিঠিটি লিকেছেন স্ত্রীকে উদ্দেশ করেঃ
র‌্যাব ধারণা করছে মিনার সকালের দিকে তারা মারা গেছেন। কিন্তু হোটেলের সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের প্রধান মেজর ওয়াদুদ (অব.) বলেন, সকাল ১১টায় তিনি স্বাভাবিকভাবেই কক্ষে ঢোকেন। এর আগে খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামীম হাসান জানান, বুধবার সকালে ঢাকা রিজেন্সি হোটেলে ৭ তলার একটি কক্ষে অতিথি হিসেবে ওঠেন মিনার মাহমুদ। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত তার কোনো সাড়া না পেয়ে কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে সেখানে ফোর্স পাঠানো হলে তারা মিনারের মরদেহ উদ্ধার করে। তার বিছানার পাশে চেতনানাশক বড়ির খোসা পাওয়া গেছে বলেও তিনি জানান।

খিলক্ষেত থানার ওসি শামীম আহমেদ জানান, আমি জানতে পেরেছি গতকাল সকাল ১০টা ৪৭ মিনিটে তিনি রিজেন্সি হোটেলে এসে ৭ তলার ৭২৮ নম্বর কক্ষে ওঠেন। বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে হোটেল কর্তৃপক্ষ আমাকে মিনারের মৃত্যু সংবাদ জানায়। চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান।

মিনার মাহমুদের বাবার নাম মোস্তাফা ‍আলী খান। মা মৃত আয়োশা সিদ্দিকী। তাদের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর জেলার কোতয়ালি থানার আলীপুর গ্রামে। তারা চার ভাই তিন বোন। মিনার সবার বড়। বর্তমানে তিনি সস্ত্রীক রোড নম্বর ১৬, সেক্টর ৩, বাসা নম্বর ১৭, উত্তরা মডেল টাউনে থাকতেন। তার স্ত্রীর নাম লুবনা ওরফে লাজুক।

মিনার মাহমুদের ছোট ভাই মেহেদি হাসান জানান, তিনি ১৯ বছর আমেরিকায় ছিলেন। গত তিন বছর হলো তিনি দেশে বাস করছেন। তিনি ৩-৪ দিন আগে দৈনিক ‘আজকের প্রত্যাশা’র চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি আরও জানান, ‘সাত-আট মাস আগে তার মাথায় একটি মেজর অপারেশন করা হয়েছিল এবং গত ঈদের তিন চারদিন আগে মা মারা যাওয়ায় তিনি মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছিলেন। এছাড়া সাংবাদিকতা পেশার প্রতি তার অনেক ক্ষোভ জন্মেছিল।

ঘটনাস্থলে এসে তার স্ত্রী লাজুক সাংবাদিকদের দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং ছবি তুলতে নিষেধ করেন। মিনারের ভাই মেহেদি হাসান আরও জানান, মারা যাওয়ার আগে ভাই একটি চিঠি লিখে গেছেন, সেটা এখনও পড়তে পারিনি। তিনি উচ্চমাত্রার এন্টিবায়েটিক ওষুধ সেবন করতেন। এজন্য তিনি সবসময় রুক্ষ মেজাজে থাকতেন। এর আগেও কয়েকবার তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। পুলিশ জানায়, মিনার যে কক্ষে ছিলেন, সেখানে দেড় শ রিভোটট্রিল নামের ঘুমের বড়ি পাওয়া গেছে।

বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন ছিলেন তার প্রথম স্ত্রী।

No comments

Powered by Blogger.