সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা-জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণের বিষয়ে আদেশ আজ

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে দেওয়া কয়েকজন সাক্ষীর জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার আদেশ দেবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল বুধবার আসামিপক্ষের শুনানি শেষে এ দিন ধার্য করেন।


আসামির কাঠগড়ায় সাঈদীর উপস্থিতিতে গতকাল ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে আসামিপক্ষ সাক্ষীদের জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ না করার পক্ষে তাদের যুক্তি দেয়। আসামিপক্ষের আইনজীবী তানভীর আহমেদ আল-আমীন লিখিত জবাবে বলেন, এ ধরনের আবেদনের কথা ফৌজদারি কার্যবিধিতে আগে শোনা যায়নি। সাক্ষীদের জেরার সুযোগ না পেলে আসামিপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সাক্ষীদের অবস্থা নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা যে প্রতিবেদন দিয়েছেন, তা নির্ভরযোগ্য নয়। বক্তব্যের সমর্থনে আইনজীবী ২৭ মার্চ দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বলেন, এই প্রতিবেদনে কয়েকজন সাক্ষী ও তাঁদের স্বজনের বক্তব্য রয়েছে।
এ সময় ট্রাইব্যুনাল অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, কোনো সাংবাদিকের কি সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলার অধিকার আছে? বিচারাধীন একটি বিষয়ে সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে কথোপকথন হুবহু তুলে দেওয়া হচ্ছে, সাংবাদিকেরা কি এটা করতে পারেন? এটা কি বিচারাধীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ নয়?
শুনানির আরেক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, বিভিন্ন পত্রিকায় বিচারাধীন বিষয় নিয়ে সঠিক খবর প্রকাশিত হয় না। ট্রাইব্যুনাল খবর প্রকাশের বিষয়ে সাংবাদিকদের আরও সতর্ক হতে বলেন।
লিখিত জবাবের পর আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ না করার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, সাক্ষীদের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য সত্য নয়। কারণ, তাঁরা এর সমর্থনে একটিও প্রমাণ দেখাতে পারেননি। তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদন মনগড়া। কোনো সাক্ষী মারাও যাননি।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে উল্লিখিত ২০ থেকে ৪৬ নম্বর পর্যন্ত সাক্ষীদের বিষয়ে আবদুর রাজ্জাক বলেন, এই সাক্ষীদের বেশির ভাগই সমাজের নামকরা ব্যক্তি। তাঁরা চাইলেই আসতে পারেন। কিন্তু তাঁদের জেরা করা হলে তাঁদের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এই মামলার ৪৬ জন সাক্ষীর অবস্থা জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ২০ মার্চ এই আবেদন করে। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এর ১৯(২) ধারা অনুসারে এই আবেদন করা হয়। মঙ্গলবার আবেদনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনকালে রাষ্ট্রপক্ষ বলেন, এই মামলার ১৯ সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা দুরূহ, ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। কয়েকজন সাক্ষী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ভয়ে আত্মগোপনে আছেন, কয়েকজন নিখোঁজ ও ভারতে চলে গেছেন, একজন শারীরিকভাবে অসুস্থ ও তাঁর স্মৃতিশক্তি বিলুপ্তপ্রায়। রাষ্ট্রপক্ষ বক্তব্যের সমর্থনে এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদন পড়ে শোনায়।
ট্রাইব্যুনাল আইনের ১৯(২) ধারা অনুসারে, তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে দেওয়া কোনো ব্যক্তির জবানবন্দি ট্রাইব্যুনাল সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারবেন, যদি তিনি মামলা বিচারাধীন অবস্থায় মারা যান, অথবা যাঁকে হাজির করতে অনেক সময় বা অর্থ ব্যয় করতে হবে বলে ট্রাইব্যুনাল মনে করবেন।
আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সৈয়দ হায়দার আলী পাল্টা যুক্তি দেন। তিনি বলেন, এই আবেদনের মূল বিষয় হলো মামলায় দেরি হচ্ছে। সাক্ষীদের অবস্থা আইনের ১৯(২) ধারার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ, এ জন্য তাঁদের জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায়।
শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল আদেশের জন্য আজ দিন ধার্য করেন।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে আসামিপক্ষের শুনানি শুরু: জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগের বিষয়ে আসামিপক্ষের শুনানি গতকাল শুরু হয়েছে। তাঁকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন উপস্থাপন শুরু করেন আইনজীবী মুন্সী আহসান কবীর। শুনানি অসমাপ্ত অবস্থায় বিকেলে মামলার কার্যক্রম আগামী ২ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে আসামিপক্ষের শুনানি ১ এপ্রিল: জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগের বিষয়ে আসামিপক্ষের শুনানির জন্য আগামী ১ এপ্রিল দিন পুনর্নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দিন পুনর্নির্ধারণ করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.