মৃদুকণ্ঠ-ধর্ম ধার্মিকের, রাষ্ট্র নাগরিকের by খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

কাত্তরের ডিসেম্বর বিজয় নিয়ে এসেছিল। স্বাধীনতা নিয়ে এসেছিল। ৯ মাস রক্ত ঝরানোর পর রক্তপিপাসু পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করেছিল ১৬ ডিসেম্বর। বাঙালিরা আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ছিনিয়ে এনেছিল এই ডিসেম্বর মাসেই। এ মাসেই বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। আধুনিককালে বাঙালি জাতির স্বরাষ্ট্র শাসন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। নিজ ভাষা, স্বকীয় সংস্কৃতি, মানবতাবাদী চেতনা এবং ঐতিহ্যগত সত্তা নিয়ে


মুক্তিযুদ্ধ সৃষ্ট বাংলাদেশের মুক্তযাত্রার শুরু সেই ডিসেম্বর থেকে। এরপর প্রতিবছরই ডিসেম্বর আসে, ডিসেম্বর যায়। আমরা আনুষ্ঠানিকতা পালন করি। আমরা কি মূল্যায়ন করি, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের চলার পথের রোডম্যাপ কেমন ছিল? সঠিক পথে এগোচ্ছি, নাকি পথভ্রষ্ট হয়েছি? কতটা এগিয়েছি, কতটা কক্ষচ্যুত হয়েছি। আমরা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের লাখ লাখ শহীদের কাছে দায়বদ্ধ, অঙ্গীকারবদ্ধ। কক্ষচ্যুতি বা পথভ্রষ্ট হওয়ার নৈতিক অধিকার আমাদের নেই। স্বাধীনতার পর চলি্লশবার ডিসেম্বর এসেছে এবং বিদায় নিয়েছে। চলি্লশ বছরান্তে পেছন ফিরে তাকাই। কোন গন্তব্যের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু হয়েছিল। এখন কোথায় দাঁড়িয়ে আছি।
পাকিস্তানের ভিত্তি ছিল ধর্মভিত্তিক জাতীয়তা, যা বাস্তবভিত্তিক ছিল না। ধর্মভিত্তিক জাতীয়তা বলতে বাস্তবে কিছু থাকলে, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান কেন এক জাতি বা এক রাষ্ট্র হলো না? সৌদি আরব আর সিরিয়া কেন এক রাষ্ট্র হলো না? ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো খ্রিস্টান অধ্যুষিত হলেও কেন একটি রাষ্ট্রে পরিণত হলো না? ভারত এবং নেপাল উভয়েই হিন্দুপ্রধান রাষ্ট্র হয়েও কেন এক রাষ্ট্র হলো না? এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজলে বোঝা যাবে যে ধর্ম একটি বিশ্বাস এবং রাষ্ট্র একটি সমাজ-শাসনব্যবস্থা। ধর্মবিষয়ে প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব বিশ্বাস-অবিশ্বাসের অধিকার রয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র গঠনে সমচিন্তক একটি জাতিগোষ্ঠীর সহ-অবস্থানের মানসিকতা থাকতে হবে। এ কারণে ধর্ম আর রাষ্ট্র পৃথক। ব্যক্তি যা বিশ্বাস করে, সেটাই তার ধর্ম। কিন্তু রাষ্ট্রের ধর্ম হলো প্রতিটি নাগরিকের প্রতি সম-আচরণ করা, সে যে ধর্মে বিশ্বাসী হোক না কেন? নাগরিকদের প্রতি যথাযথ আচরণ হচ্ছে না, এমন ধারণা জন্ম নিলেই রাষ্ট্র বিভক্ত হয়ে পড়ে। স্বেচ্ছায় রাষ্ট্র বিভক্তির ঘটনা যুগে যুগে অঞ্চলে অঞ্চলে ঘটে এসেছে। নরওয়ে, সুইডেন ও ডেনমার্ক একসময় একটি রাষ্ট্র ছিল। তিনটি দেশেরই জনগোষ্ঠী খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী। কিন্তু পৃথকভাবে রাষ্ট্র গঠনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছিল বলেই এক রাষ্ট্র ভেঙে তারা তিনটি রাষ্ট্র গঠন করল। এর জন্য কেউ ধর্ম ত্যাগ করেনি বা রাষ্ট্রবিভাজনে ধর্ম কোনো বাধা হয়েও দাঁড়ায়নি। উল্লেখ করা যেতে পারে, রাষ্ট্রবিভাজনে তারা পরস্পর যুদ্ধ-বিগ্রহ করেনি। গণভোট করেছে। জনমতের ভিত্তিতে পারস্পরিক সম্মতি ও সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে তাদের রাষ্ট্রবিভাজন সম্পন্ন হয়েছে। সাম্প্রতিককালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে অনেক স্বাধীন রাষ্ট্র জন্ম নিয়েছে। যুদ্ধ করতে হয়নি। রক্ত ঝরাতে হয়নি। পারস্পরিক ইচ্ছা ও সম্মতিতে রাষ্ট্র ভেঙে রাষ্ট্র গঠন হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান 'ইসলাম রক্ষার' নামে বাংলাদেশে মুসলমানদের ওপর আক্রমণ করেছিল। হত্যা, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগ, ইত্যাকার অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছিল বাঙালি হিন্দু-মুসলমানসহ সব ধর্মের মানুষের ওপর। পাকিস্তানি আক্রমণ প্রতিরোধে মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান নির্বিশেষে সব বাঙালি একসঙ্গে যুদ্ধ করেছিল ধর্মের ভিত্তিতেও নয়, ধর্মের বিরুদ্ধেও নয়। বরং ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে পৃথক করার জন্য। যে কাজটি ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো অনেক আগেই করে ফেলেছিল। অনেক আগে ইউরোপীয় রাষ্ট্রে গির্জার প্রচণ্ড প্রভাব ছিল। ইউরোপীয়রা গির্জাকে ধর্মের কাজে আবদ্ধ করেছে। রাষ্ট্রকে মুক্ত করেছে গির্জার প্রভাব থেকে। গির্জা ধর্মের জন্য। আর রাষ্ট্র নাগরিকের জন্য। রাষ্ট্র ধর্মের অধীন নয়। ধর্মও রাষ্ট্রের অধীন নয়। রাষ্ট্র সেই থেকে নিয়োজিত রয়েছে নাগরিকের কল্যাণে। ধর্ম রক্ষার্থে নয়।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের বকধার্মিকতা থেকে রাষ্ট্রকে মুক্ত করার চিন্তাচেতনা প্রতিফলিত হয়েছিল। এই চেতনাকে বাস্তবে রূপ দিতে বাঙালিকে রক্ত ঝরাতে হয়েছিল। অনেক মূল্য দিয়ে আধুনিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর।
'ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার'_এমন আলোকিত চেতনা থেকে যে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, চেতনার সেই পুষ্পকুঁড়িটি কি স্বাভাবিকভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছিল জন্ম-পরবর্তী বছরগুলোতে? না, হয়নি। পঁচাত্তরে গণহত্যার আঘাতে ফুলকুঁড়িটিকে দুমড়ে-মুচড়ে দেওয়া হয়েছিল বেয়নেটের দ্বারা। এবার আর অবাঙালি পাকিস্তানিরা নয়। এবার সংহারকের ভূমিকায় নেমেছিল বাঙালি 'পাকিস্তানিরা'। এরা হলো 'বাংলাদেশি ন্যাশনালস অব পাকিস্তান'। 'যে ফুল না ফুটিয়ে ঝরিল ধরণীতে... যে নদী মরুপথে হারাল ধারা',_এই হলো পঁচাত্তর-পরবর্তী সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের করুণ পরিণতি।
একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর যে শিশুরাষ্ট্রটি রক্তস্নাত হয়ে জন্ম নিয়েছিল, পঁচাত্তরের আগস্টে তার চেহারা বিকৃত করে পঙ্গু করা হয়েছিল। যে রাষ্ট্রটি ছিল সব ধর্মের নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত এবং সব ধর্মাবলম্বীর প্রতি নিরপেক্ষ আচরণের জন্য দায়বদ্ধ, তার শরীরে একটি ধর্মের লেবাস পরানো হলো। রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ধর্মনিরপেক্ষতা বিসর্জন দিয়ে ধর্মনির্ভরতাকে গ্রহণ করা হলো পাকিস্তানি স্টাইলে। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ পরিণত হলো পাকিস্তানি বাংলাদেশে। তার পরও ডিসেম্বর এলে আমরা বিজয় দিবস উদ্যাপন করে এসেছিলাম। রাষ্ট্রের মূলনীতি বিসর্জন দিয়ে বিজয় দিবস পালনের নৈতিক অধিকার আমাদের ছিল কি? ১৯৭৫ থেকে এই খেলা খেলতে খেলতে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে এসে গণতান্ত্রিক অস্ত্র প্রয়োগ করল। গ্রেনেড নয়, বেয়নেট নয়, কামান-বন্দুক নয়। অহিংস মোক্ষম অস্ত্রটির নাম ভোট। মোট ভোটারসংখ্যার ৮৭.১৬ শতাংশ মানুষ ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট দিয়েছেন। সাধারণ নির্বাচনে এত বেশিসংখ্যক ভোটার সাধারণত ভোট দিতে আসেন না। তাঁরা এসেছিলেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একাট্টা হতে। তাঁরা এসেছিলেন রাষ্ট্রের মূল চরিত্র ফিরিয়ে আনতে। তাই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত মহাজোটকে তাঁরা একচেটিয়া ভোট দিলেন। মহাজোট তিন-চতুর্থাংশ আসন পেয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করল। মহাজোট আরাধ্য কাজে আংশিক সফলতা অর্জন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের মূল সংবিধানের রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি তারা পুনঃ স্থাপন করেছে। তদনুযায়ী সংবিধান ও রাষ্ট্রযন্ত্রের সব কিছু সংশোধন করা এখনো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কারণ ১৯৭৫ সাল থেকে পরবর্তী ৩৫ বছরে এত আবর্জনা-জঞ্জাল এবং বৈপরীত্যের সমাহার ঘটেছিল, যে এক ধাক্কায় সব কিছু ঠিক করা কষ্টকর। মূলনীতি প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এখন মূলনীতির সঙ্গে সংগতি রেখে সব নীতি ও কর্মের সামঞ্জস্য ফিরিয়ে আনতে হবে। শুধু সংবিধান আর আইন সংশোধন করলেই হবে না, সেই সঙ্গে সমাজ পরিবর্তনও জরুরি। ঘুণেধরা সমাজ বিজ্ঞানমনষ্ক হবে না। সর্বাগ্রে প্রতিটি নাগরিককে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। শিক্ষাই সমাজ পরিবর্তনের প্রধানতম উপাত্ত। নতুন শিক্ষানীতি সঠিক পথেই চলেছে। প্রয়োজন গতিসঞ্চারের। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে দুর্বলভাবে হলেও যেটুকু করতে পেরেছে, তাতে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে বিজয় দিবস পালনের নৈতিক অধিকার কিছুটা হলেও আমরা ফিরে পেয়েছি।
আলোচনা হচ্ছিল ধর্ম ও রাষ্ট্রের পার্থক্য নিয়ে। পাকিস্তান-ভারত উপমহাদেশের অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, এতদাঞ্চলে ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারে যারা আত্মনিয়োগ করেছিলেন, সেসব মনীষী স্রষ্টার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য নিয়ে সৃষ্টির সেবায় নিজেদের নিয়োজিত রেখেছিলেন। কখনোই রাষ্ট্রক্ষমতা দখল বা মসনদে বসার চেষ্টা করেননি। সিয়াসত বা রাজনীতির প্রতি তাঁরা ছিলেন বিমুখ। এমনকি রাজা-বাদশাহরা তাঁদের কাছে ক্ষমতা সমর্পণ করতে চাইলেও তাঁরা সম্মত হননি। হজরত খাজা মঈনউদ্দিন চিশতি (রহ.) ছিলেন আধ্যাত্মিক ক্ষমতাধর ওলিআল্লাহ। তিনি রাজাকে পরাস্ত করেছিলেন রাজার অত্যাচার থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য। তাই তিনি মানুষের হৃদয় জয় করে মহান আল্লাহর মহব্বতের শিক্ষা দিয়েছেন। সাধারণ জীবন যাপন করেছেন। সুযোগ পেয়েও রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেননি। বরং ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এরপর উল্লেখ করা যায়, মুজাদ্দেদে আলফে-সানি হজরত শায়েখ আহমদ ফারুকী (রহ.)-এর কথা। ইসলাম ধর্মের দুর্দশার সময় হজরতের আবির্ভাব ঘটেছিল। তখন রাষ্ট্রক্ষমতায় কিন্তু মুসলমান বাদশাহ ছিলেন। মোগল আমল। মোজাদ্দেদ হজরত শায়েখ আহমদ ফারুকী (রহ.) বিকৃতি থেকে ইসলামকে রক্ষা করেছিলেন, মুসলমানদের হৃদয়ে আল্লাহর মহব্বত প্রজ্বলিত করেছিলেন। তিনিও মুসলমান বাদশাহর কোপানলে পড়ে জেলে প্রেরিত হন। জেলে বসে কয়েদিদের তিনি শিক্ষা দিতে লাগলেন। স্বপ্ন দেখে একদিন বাদশার ভুল ভাঙল। তিনি হজরত মুজাদ্দেদে আলফে-সানি (রহ.)-কে মুক্ত করে দিলেন, মাফ চাইলেন এবং তাঁর হাতে ক্ষমতা অর্পণ করে তাঁর খেদমতে নিজেকে সমর্পণ করতে চাইলেন। জামানার মুজাদ্দেদ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বললেন যে মানুষকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য আল্লাহ তাঁকে পাঠিয়েছেন, রাষ্ট্র চালনার জন্য নয়। বাদশাহ রাষ্ট্র চালনা করতে লাগলেন আর আল্লাহর ওলি বান্দাদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে লাগলেন। নিকট-অতীতের একটি ঘটনা মনে পড়ছে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একজন বড় কর্মকর্তা নারিন্দার পীর সাহেব হজরত শাহ সৈয়দ আবদুস সালাম আহমদ (রহ.)-কে গভর্নর হাউসে আমন্ত্রণ জানালে তিনি বিনিয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, 'ফকিরেরা গভর্নর হাউসে যাতায়াত শুরু করলে, ফকিরির কোনো মর্যাদা থাকে না।' পীর সাহেব (রহ.) আরেক দিন বলেছিলেন, 'ফকিরের দরবারে যাওয়া আমিরের জন্য ভালো। কিন্তু আমিরের দরবারে যাওয়া ফকিরের জন্য অনুচিত।' যাঁরা মানুষকে হেদায়েতের পথে পরিচালনা করেছেন, এই হলো তাঁদের শিক্ষা, তাঁদের জীবনবোধ, তাঁদের হালত। রাষ্ট্রক্ষমতা তো দূরের কথা, ধন-দৌলত, সামাজিক মর্যাদা_কোনো কিছুই তাঁদের আকর্ষণ করেনি। কবিগুরুর ভাষায়, 'কি ধনে হইয়া ধনী, মনিরে মান না মনি।'
এই উপমহাদেশে যাঁরা ইসলাম প্রচার করেছিলেন, কোটি কোটি মানুষের প্রাণে ধর্মের আলো জ্বেলেছিলেন, তাঁরা আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের সমর্পণ করেছিলেন এবং রাষ্ট্রক্ষমতা, রাজনীতি, ধন-দৌলত_এসব থেকে নিজেদের সম্পূর্ণ দূরে রেখেছিলেন। এসব বালাই থেকে নিজেদের সদা-সর্বদা হেফাজত রেখেছিলেন। তাঁদের অস্ত্র ছিল ভালোবাসা। ভালোবাসা দিয়ে তাঁরা মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন। অস্ত্র দিয়ে কোনো দিন রাষ্ট্র জয় করেননি। তাঁরাই শিক্ষা দিয়ে গেছেন যে ধর্ম ধার্মিকের জন্য, রাজ্য রাজার জন্য। এ দুটি তেল আর জলের মতোই পৃথক। রাষ্ট্রনেতার ধার্মিক হতে বাধা নেই। কিন্তু ধর্মযাজকের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা বিষবৎ পরিত্যাজ্য। অতি সাম্প্রতিককালে গ্রেনেড চার্জ করে, বিচারক হত্যা করে, বোমা ফাটিয়ে, হত্যা-নির্যাতন-সন্ত্রাস করে যারা ধর্মরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল, তারা প্রকৃতপক্ষে জালেম। তারা ধার্মিক নয়।
ধর্ম এবং রাষ্ট্রের মধ্যে কোনো সংঘাত নেই। মিলও নেই। ধর্মের মূল শিক্ষা পরিবর্তনযোগ্য নয়। রাষ্ট্র নিয়তই পরিবর্তনশীল। ধর্ম ও রাষ্ট্র দুটি ভিন্ন স্রোতধারা, যার জন্ম ভিন্ন উৎপত্তিস্থল থেকে, লক্ষ্যও ভিন্ন পরিণতির দিকে, গতিবিধিও ভিন্ন। ধর্মের পবিত্রতা এবং রাষ্ট্রের জনকল্যাণ ক্ষমতা সংরক্ষণের জন্যই মুক্তিযুদ্ধের রক্তস্নাত বাংলাদেশের চেতনাবোধের পুনর্জাগরণ প্রয়োজন। বাংলাদেশের নিজস্ব চেতনাসমৃদ্ধ পরিচিতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ভাষায় চমৎকার ফুটে উঠেছে_'বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ, ধর্মীয়ভাবে মুসলিম এবং সংস্কৃতিতে বাঙালি।'
লেখক : সাবেক ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ
ব্যাংক ও কলামিস্ট

No comments

Powered by Blogger.