ঢাকা টেস্ট-শ্রমের মূল্য দুই উইকেট by সঞ্জয় সাহা পিয়াল

বেচারা মোহাম্মদ আকরাম। স্যুট-টাই পরা পাকিস্তানি এ ধারাভাষ্যকারকে বেচারাই মনে হয়েছিল কাল দুপুরে। 'কী ভেবেছিলাম, আর হলোটা কী? আগের দিন স্পিনারদের টার্ন পাওয়া দেখে সকালে পিচ রিপোর্টে বলেছিলাম বল ঘুরবে; কিন্তু কোথায় কী? সূর্যের মতো দেখছি উইকেটেরও দেখা নেই মিরপুরে...'_ ধারাভাষ্য দেওয়ার ফাঁকে প্রেসবক্সের সামনে এসে নিজের ধোঁকা খাওয়ার গল্প শোনাচ্ছিলেন আকরাম। শুধু আকরাম নন, মুশফিকরাও এদিন ধোঁকা


খেয়েছেন কুয়াশায় মোড়া সূর্যের মতো। সারাদিন ৬৯ ওভারের শ্রম দিয়ে ২ উইকেটের সম্মানী! ফিল্ডাররা যখন ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে ফুলহাতা শার্টটাকেও টেনেটুনে কব্জি লুকাচ্ছিলেন, তখন চায়ের পেয়ালায় চুমুক দেওয়ার মতোই আয়েশি ঢংয়ের ব্যাটিং করছিলেন পাকিস্তানিরা। তৌফিক উমরের ১৩০ রানের ওপর ভর করে ৩ উইকেটে তাদের পুঁজি ২৯২। বাংলাদেশ থেকে এখনও ৪৬ রান দূরে থাকলেও হার জাতীয় আশঙ্কা থেকে মুক্ত তারা। 'আমাদের হাতে যে মানের বোলার রয়েছে, তাতে দুই সেশন পেলেও বাংলাদেশিদের অল আউট করার ক্ষমতা আছে।' তৌফিক উমরের এমন বিশ্বাসের সঙ্গে যোগ হয়েছে কুয়াশা আর অন্ধকার। দু'দলের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যাওয়া এ আবহাওয়া প্রতিদিনই সকাল আর বিকেল থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা মেয়াদ কমিয়ে আনছে। এ অবস্থায় সাদা চোখে ঢাকা টেস্টের ভাগ্যে ড্র লেখাটাই পড়া যাচ্ছে।
কিন্তু বাংলাদেশ দলকে নিয়ে আর যা-ই হোক আবহাওয়ার মতো পূর্বাভাস দেওয়া যায় না। যেটা কি-না এরই মধ্যে টের পেয়েছেন ধারাভাষ্য দিতে আসা বিশেষজ্ঞরা। মাঝে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উইকেটের চরিত্র অন্যরকম মনে হয়েছে তাদের কাছে। স্পিনাররা টার্ন পাচ্ছেন না, পেসাররাও সুইংয়ের ধারে-কাছ দিয়ে যাচ্ছেন না। ঠাণ্ডায় জবুথবু হওয়া এমন দিনে গা-ঝাড়া দেওয়ার মতো ঘটনা ছিল তাই হাতেগোনা কয়েকটি। যার মধ্যে একটি অবশ্যই ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে টেস্ট খেলা। আইসিসি দিন-রাতের টেস্ট চালানোর একটি কথা বলেছে ঠিকই, কিন্তু এদিনই বোধহয় প্রথম সেই সম্ভাবনার ট্রায়াল হয়ে গেল মিরপুরে। সূর্যের মুখ লুকিয়ে থাকায় ফ্লাডলাইট দিয়েই চললো পুরো দিনের খেলা। মাঠে আসা হাজার চারেক সমর্থক নতুন এ ব্যাপারটিকে উপভোগ করলেও মুশফিকের একটি বোকামি ভালোভাবে নিতে পারেননি। ইনিংসের ৩৬.৩ ওভারে সাকিবের একটি বল তৌফিক উমরের ব্যাট ছুঁয়ে মুশফিকের গ্গ্নাভসে ধরা পড়ে। ক্যাচ ধরার আনন্দে মুশফিক এতটাই বিভোর ছিলেন যে, তৌফিককে স্টাম্পিং করার সুযোগ হাতছাড়া করেন। ৫৯ রানে থাকা সেই তৌফিকই পরে তার ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি করে নেন। এরপর ৬৬ রানেও একটি জীবন পেয়েছিলেন তৌফিক। লাঞ্চের পর প্রথম বলেই রবিউলকে গালিতে পাঠান তৌফিক; কিন্তু সে ক্যাচটিও ধরতে পারেননি ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া ফিল্ডার নাজিমউদ্দিন। ক্যাচ মিসের ঘটনা এরপরও দুটি ঘটেছিল এবং দর্শক বিরক্ত হয়ে দু'কথা শুনিয়েও দিয়েছিলেন। যার একটি_ ডিপ মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকা ফিল্ডার শাহাদাত হোসেন রাজিব হাত থেকে ফেলে দেন ১৫ রানে থাকা ইউনিসকে। আরেকটি_ শেষবেলায় স্কয়ার লেগে দাঁড়িয়ে তৌফিককে ছেড়ে দেন শাহরিয়ার নাফীস।
দিনের প্রথম ওভারেই শাহাদাতের কাছ থেকে ১১ রান নিয়ে শুরু করা ইনিংসটি শেষ পর্যন্ত বিরক্তিতে ঠাসা ছিল। ধীরে, আরও ধীরে চলো_ নীতিতে ব্যাট করছিলেন পাকিস্তানিরা। দ্বিতীয় উইকেটে তৌফিক আর আজহার আলী ১২৭ রান করেছিলেন ওভারপ্রতি ২.৬৭ রান নিয়ে। জাভেদ ওমর বেলিমকে মনে করিয়ে দেওয়া পাকিস্তানের আজহার আলী অবশ্য ফিরে গিয়েছিলেন ১৪৭ বলে ৫৭ রান নিয়ে সাকিবের বলে মুশফিকের হাতে ক্যাচ নিয়ে। এরপর তৌফিক উমরকে অফ স্টাম্প ঘেঁষে যাওয়া বলে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে পাঠিয়েছিলেন নাজমুল। তিনিও ইউনিসের সঙ্গে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৯৫ রান নিয়েছিলেন ওভারে ২.৯৫ রান নিয়ে। বুমবুম পাকিস্তানিদের কাছ থেকে এতটা ভাবলেশহীন ব্যাটিং লাহোর থেকে আসা সাংবাদিকও হাসিমুখে নিতে পারেননি। যেখানে হাতে মাত্র দু'দিন, সেখানে ম্যাচ জেতার জন্য আরও তেড়েফুঁড়ে ব্যাট করা উচিত ছিল বলে মনে করেন জিও টিভির সাংবাদিক মোহাম্মদ সোহেল।
এমনিতে শাহাদাত রাজিবের নো বলে ঠাসা, নিয়ন্ত্রণহীন বোলিং; তার ওপর আবার তৌফিক উমরদের নিষ্প্রাণ ব্যাটিং। ঠাণ্ডায় বাড়ি থেকে গরম কাপড় নিয়ে মাঠে আসা দর্শকদের কাছে বিনোদন বলতে ছিল তাই শেষবেলায় নাসিরের স্পিনার থেকে মিডিয়াম পেসার হয়ে যাওয়ার ঘটনা।
ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া গ্যালারিকে যা কিছুক্ষণের জন্য নাড়া দিয়েছিল; কিন্তু তা পাকিস্তানিদের ধীরে চলো নীতি থেকে কোনোভাবেই টলাতে পারেনি। আজ হয়তো দুটি সেশনে বড় একটা লিড নেওয়ার পরই তামিমকে ফের ব্যাট করার সুযোগ দেবেন মিসবাহ। সে পর্যন্ত এ ঠাণ্ডাতেই অপেক্ষা করতে হবে মুশফিকদের।

No comments

Powered by Blogger.