সুহৃদ :৩০০ সংখ্যা পূর্তি by আকাশ মামুন

কুজ্ঝটিকার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসার খোঁজ নেই সকালের সূর্যটার। ঘড়ির কাঁটা বলে দিচ্ছে সময় গড়িয়েছে বেশ। অপেক্ষা করতে করতে শেষতক বেরিয়ে পড়েছে যে যার কাজে। হাত বন্ধনী, পা বন্ধনী, কান বন্ধনী আর গরম কাপড়ে আগাগোড়া মুড়িয়ে ছুটছে হন্তদন্ত। শিশিরের বিন্দু নিয়মতান্ত্রিক তাচ্ছিলতায় নয়তো চরম আবেগে ছুঁয়ে যাচ্ছে বালিকার গাল আর বালকের চুল। মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানে জড়ো হয়েছে পাড়ার বুড়ো আর জোয়ানেরা।


দেখতে যেন চাঁদের দেশের প্রাণী। আপাদমস্তক ঢাকা। কান বন্ধনীর ফাঁক গলিয়ে বেরিয়ে আসা সাদা শ্মশ্রুধারী বুড়োটি কোণের বেঞ্চিতে চুপটি করে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছেন। বোঝার উপায় নেই ওটা কোনো জীবিত প্রাণী, নাকি মূর্তি। কথার ফাঁকে ফাঁকে মুখ দিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। কেউ কেউ সুড়ূত-সুড়ূত ফুঁক দিচ্ছে চায়ের কাপে। পাড়ার দুষ্ট নেংটা ছেলেদের দল সাত সকালে যারা পাড়া মাতাতো তাদের দেখা নেই। মনে হতে পারে হঠাৎই সব পাজির শিরোমণি ছেলে কাপড়ে আচ্ছাদিত হয়ে সভ্য জগতে প্রবেশ করেছে। একেক জন হয়ে উঠেছে বাবা-মার একান্ত বাধ্য আর শান্ত ছেলে। আদতে এসবের কিছুই নয়। সবাই প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় কুঁকড়ে আছে। প্রতীক্ষায় আছে তেজদীপ্ত এক সূর্যের। কিন্তু সূর্য মহাশয়ের যেন ভ্রূক্ষেপই নেই। মোয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনি কিংবা মন্দিরের ঘণ্টির ধ্বনি যে তার কানে পেঁৗছায়নি তা নয়। গিয়েছিল সেই ভোরেই। তবুও অলস বালকের মতো গরম কাপড়ের ওম নিয়ে বিছানায় পড়ে ঘুমানোর লোভ সংবরণ করতে পারেনি। তাই তো মুখ দেখাতে এত দেরি। কিন্তু সেই কুজ্ঝটিকার আড়াল অলসতার বৃত্তে বন্দি করতে পারেনি সপ্তাহের সুহৃদ সমাবেশের পাতা। সূর্য ওঠার প্রতীক্ষায় না থেকে সপ্তাহান্তে ঘরে ঘরে ঠিকই পেঁৗছে গেছে তিনশ'তম সংখ্যা। সাহিত্যের মানদণ্ডে পরিপূর্ণ একটি পাতা সুহৃদ সমাবেশ। গত ৭ বছর ধরে যা সারাদেশের তরুণ লেখক তৈরিতে অগ্রণী এবং বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে। বিজয়ের মাসে সুহৃদ সমাবেশ তিনশ'তম সংখ্যায় পেঁৗছায় জানাই রক্তিম শুভেচ্ছা। আশা করি, তার এই পথচলা হবে সাবলীল ও গতিশীল। দীর্ঘ সাত বছর ধরে প্রতিশ্রুতিশীল আগামী প্রজন্ম গঠন করতে কাজ করে যাচ্ছে সুহৃদ সমাবেশ পাতা। সুহৃদ সমাবেশ পাতা শুধু একটি পাতাই নয়, এটি হয়ে উঠেছে একটি মুক্ত চিন্তার খেলাঘর। যে ঘর থেকে বেরিয়ে আসবে এক একটি তেজি তরুণ। যারা আগামী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করবে। ক্ষয়িষ্ণু তরুণ সমাজ মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির যুগে নেশার কালো ছোবলের কাছে হার মেনে দিন দিন নেমে যাচ্ছে পচা কাদায়। সেই হতাশার দিনেও কিছু প্রদীপ্তপ্রাণা তরুণ চর্চা করে যাচ্ছে মেধা আর মননের। সেই সুযোগ করে দিচ্ছে পাতাটি।
গত মহাসমাবেশে সারাদেশ থেকে আগত তরুণদের মধ্যে যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখেছি, তাতে আমি গর্ব করেই উচ্চবাচ্য করছি, হে দেশমাতা এখনও কিছু তরুণ আমরা আছি তোমার সেবায়। কেননা আমরা যে তাদেরই বংশধর, যারা তোমার জন্য অকাতরে প্রাণ দিয়েছিল। আমাদের আরও তৈরি হতে হবে। আমাদের শানিত মেধা চর্চায় ভরে উঠুক সুহৃদ সমাবেশের আগামীর পাতাগুলো। তাই প্রত্যাশা থাকবে।
সুহৃদ, ঢাকা

No comments

Powered by Blogger.