গুপ্তহত্যার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি


গুম বা গুপ্তহত্যার জন্য সরকারকে দায়ী করেছে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য নাগরিক আন্দোলন। একই সঙ্গে গুপ্তহত্যার বিষয়ে অবিলম্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি করা হয়। গতকাল সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এই দাবি জানানো হয়।সংগঠনের সদস্যসচিব মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে গুম, খুন ও হত্যা ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে। এ নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে


উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা বলছি, এর মূল দায় সরকারের। সবকিছুই সরকার করছে, সেটা বলছি না। তবে সরকারকেই প্রমাণ করতে হবে কে করছে। সম্মিলিতভাবে দোষীদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল সাম্প্রতিক কালের গুপ্তহত্যার চিত্র তুলে ধরে বলেন, এসব ঘটনার দায় উন্মোচন ও পুনরাবৃত্তি রোধে সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়ায় দেশে গুপ্তহত্যার পরিমাণ দিনে দিনে বাড়ছে। এ নিয়ে সারা দেশে আতঙ্কজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কিছুদিন ধরে এর জন্য বিরোধী দলকে দায়ী করছে। কিন্তু সরকারের প্রধান দায়িত্ব তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচন করা।
আসিফ নজরুল বলেন, যে সরকারের আমলে মানবাধিকার কমিশন গঠিত হয়েছে, যে সরকার জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছে এবং যে সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে, তার আমলে এ ধরনের গুরুতর ও ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন নাগরিকদের মনে চরম হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
সভাপতির বক্তব্যে সাবেক সাংসদ এস এম আকরাম গুপ্তহত্যার জন্য বিরোধী দলকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের উল্লেখ করে বলেন, বিরোধী দল যে করছে, সেটাও প্রমাণ করার দায়িত্ব সরকারের।
আইনজীবী শাহ্দীন মালিক আন্তর্জাতিক আইনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, গুপ্তহত্যার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জড়িত। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অবশ্যম্ভাবী ধারাবাহিকতা গুপ্তহত্যা। প্রথমে প্রকাশ্যে মারে, পরে গুপ্তহত্যা করে। যুদ্ধাবস্থায়ও নাগরিক গুম হলে তার দায় রাষ্ট্রের ওপর বর্তায়। অপারেশন ক্লিনহার্ট, ক্রসফায়ার ও গুমের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমরা অরাজকতার দারপ্রান্তে চলে এসেছি।’
গুপ্তহত্যার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিক নুরুল কবীর বলেন, ‘আমরা প্রধানত এ জন্য সরকারকে দায়ী করছি।’
দাবি: সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষে দাবিগুলো তুলে ধরেন অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন ছাড়াও অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে, গুমের অভিযোগ পাওয়ামাত্র তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এ বিষয়ে সর্বদলীয় পরামর্শসভার আয়োজন করা। গুমের শিকার ব্যক্তিকে উদ্ধার ও তার হদিসের বিষয়ে ব্যর্থতার পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা, রাজনৈতিক দলগুলোকে গুম ও গুপ্তহত্যা বিষয়ে অহেতুক দোষারোপের রাজনীতি থেকে বিরত থাকা, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এ বিষয়ে তদন্ত করা। বিরোধী দলকে সংসদে গিয়ে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দেওয়ারও দাবি জানানো হয়।

No comments

Powered by Blogger.