উত্তর কোরীয় নেতা কিমের জীবনাবসান


ত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং-ইল (৬৯) গত শনিবার হূদেরাগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। দেশটির গণমাধ্যমে গতকাল সোমবার এ খবর জানানো হয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে ১৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। খবর এএফপি ও রয়টার্সের। ২৮ ডিসেম্বর কিম জংয়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে। ছোট ছেলে কিম জং-উন (২০) তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন। কিমের ‘মহান উত্তরাধিকারী’ হিসেবে জং-উনের নাম বর্ণনা


করে তাঁকে অনুসরণের জন্য ক্ষমতাসীন দলের সদস্য, সেনাবাহিনী ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সির (কেসিএনএ) খবরে জানানো হয়, কিম জং-ইল রাজধানীর বাইরে ট্রেনে সফরের সময় গত শনিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আটটার দিকে মারা যান। খবরে নতুন নেতা জং-উনকে সমর্থনের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। উনকে গত বছর সেনাবাহিনীর পাঁচ তারকাবিশিষ্ট জেনারেল ও রাষ্ট্র-স্বীকৃত একমাত্র রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির শীর্ষ নেতার পদ দেওয়া হয়।
টেলিভিশনে প্রচারিত খবরে বলা হয়, দেশের ঐক্য অটুট রাখতে দলের সব সদস্য, সেনাবাহিনীর সদস্য ও জনগণকে বিশ্বস্ততার সঙ্গে কমরেড উনের নেতৃত্ব অনুসরণ করে চলা উচিত। কিমের মৃত্যুর কারণ হিসেবে কেসিএনএর খবরে ‘মাওকার্দিয়াল ইনফ্র্যাকশন’ ও হূদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধের কথা বলা হয়েছে। তবে ২০০৮ সাল থেকেই তিনি পক্ষাঘাত রোগে ভুগছিলেন বলে জানা গেছে। সে সময় বেশ কয়েক মাস তিনি জনসংযোগ থেকে দূরে ছিলেন। এমনকি তাঁর মৃত্যু নিয়েও বেশ কয়েকবার গুজব ছড়ায়।
মৃত্যুর খবর প্রচারিত হওয়ার পর পুরো উত্তর কোরিয়ায় শোকের ছায়া নেমে আসে। চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে শোকাহত লোকজনকে পিয়ংইয়ংয়ের রাস্তায় নামতে দেখা যায়। লোকজন দোকানপাট বন্ধ করে এবং জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রেখে শোক পালন করছে।
কেসিএনএ জানায়, ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে কিম জং-ইলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। তবে কোনো বিদেশি প্রতিনিধিকে ওই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে না। আর ১৭ থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
কিম জং-ইলের মৃত্যুতে উত্তর কোরিয়ার ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়বে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। প্রতিবেশী দেশগুলোতে তাঁর মৃত্যু নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। তাঁর মৃত্যুতে চীন গভীর শোক প্রকাশ করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া তার সেনাবাহিনী সতর্কাবস্থায় রেখেছে। দেশটি মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছে এবং দেশের জনগণকে শান্ত থাকতে বলেছে।
জাপান শোকবার্তা পাঠিয়েছে। একই সঙ্গে জরুরি নিরাপত্তা সভা আহ্বান করেছে দেশটি। প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিকো নোদা একটি সংকট ব্যবস্থাপনা টিম গঠন করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা কিম জং-ইলের মৃত্যুপরবর্তী পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ তাঁর মৃত্যুকে উত্তর কোরিয়ার জন্য ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এদিকে, উত্তর কোরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার প্রভাব পড়েছে স্টক মার্কেটে। গতকাল এশিয়ার স্টক মার্কেটগুলোতে বেশ দরপতন হয়েছে।
শেখ হাসিনার শোক: বাসস জানায়, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-ইলের মৃত্যুতে গতকাল গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোকবার্তায় তিনি কিম জং-ইলের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.