উত্তপ্ত রাজনৈতিক অঙ্গন-সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি কাম্য নয়

প্রধান বিরোধী দল সরকারি বিরোধিতার আন্দোলন জোরদারের জন্য লংমার্চ এবং সভা-সমাবেশের মতো কর্মসূচির প্রতি গুরুত্ব দিতে থাকলে সব মহল থেকেই স্বাগত জানানো হতে থাকে। সংবাদপত্রেও হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির বিকল্প পথে চলার জন্য তাদের উৎসাহ দেওয়া হয়। কিন্তু রোববার বিএনপি রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় যেভাবে 'গণবিক্ষোভ' সফল করতে চেয়েছে তা সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।


বোমা-ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো এবং যানবাহন ভাংচুর ও অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান হয় 'ধরে আনতে বললে বেঁধে আনার' মতো। রোববারের কর্মসূচি প্রসঙ্গে প্রায় সব সংবাদপত্র অভিন্ন ভাষায় লিখেছে_ বিএনপির পরিকল্পনা ছিল রাজধানীতে আচমকা গণজমায়েত, তারপর টানা অবস্থান ও গণবিক্ষোভ ঘটিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন বেগবান করা। এ জন্য ঢাকায় বিভিন্ন জেলা থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের আনার ব্যবস্থা করা হয়। বাংলাদেশে গণবিক্ষোভ সৃষ্টি করে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি এমনকি সরকার পতন ঘটানোর একাধিক নজির রয়েছে। ১৯৯০ সালে এইচএম এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে জনগণ কী বিপুলভাবে সাড়া দিয়েছিল, সে অভিজ্ঞতা বিএনপি নেতৃত্বের রয়েছে। আবার তাদের ক্ষমতার সময়ে ১৯৯৬ সালের মার্চ এবং ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসে বিরোধী পক্ষের আন্দোলনের স্মৃতিও তাদের কাছে সতেজ থাকার কথা। বিএনপি নেতৃত্ব অবশ্যই উপলব্ধি করেন যে, গণঅভ্যুত্থান চাইলেই সংঘটিত করা যায় না। এর আবশ্যকীয় শর্ত হচ্ছে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। এতে সন্দেহ নেই যে, জনগণের উল্লেখযোগ্য অংশ সরকারের কর্মকাণ্ডে হতাশ এবং অনেকে ক্ষুব্ধও। দেশ ভালোভাবে চলছে_ এমন দাবি শাসক দলের ঘোর সমর্থকরাও করবে না। কিন্তু চাইলেই সরকারের পতন ঘটানো যায় না। তবে অরাজক-বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি করা বড় রাজনৈতিক দলের পক্ষে অসম্ভব নয়। কিন্তু এর পরিণতি দেশের জন্য ভালো হয় না। বিএনপি একাধিকবার ক্ষমতায় ছিল। এ দলে অনেক বিচক্ষণ ও দূরদর্শী নেতা রয়েছেন। তারা নিশ্চয়ই গণবিক্ষোভ ও রাজনৈতিক গোলযোগ-বিশৃঙ্খলার পার্থক্য বুঝতে পারেন। সরকারের বিরুদ্ধে যে জনমত রয়েছে তার রাজনৈতিক সুফল পেতে কোন পথে অগ্রসর হতে হবে, সেটা তাদের ভালোভাবেই জানা আছে। দেশে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের ধারা চালু রয়েছে এবং এর বাইরে অন্য যে কোনো পথ অসাংবিধানিক হিসেবে চিহ্নিত এবং বর্তমানে চালু সংবিধান অনুযায়ী কঠোর শাস্তিযোগ্য। সংবিধান থেকে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার বিষয়টি বিএনপি মেনে নেয়নি এবং এতে তাদের যুক্তিও জোরালো। কিন্তু এর সমাধান হতে পারে কেবল আলোচনার মাধ্যমে। রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতেও এ ধরনের আলোচনা হওয়ার সুযোগ রয়েছে এবং তার সূত্রপাত নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনার প্রক্রিয়াতেও হতে পারে। দেশবাসী আশা করবে, রাজনৈতিক দলগুলো সর্বদা সংলাপ ও গঠনমূলক কর্মসূচির পক্ষে থাকবে। বিরোধী পক্ষের আন্দোলন কর্মসূচি অবশ্যই থাকবে এবং তা মোকাবেলায় সরকারকে সংযত থাকা চাই। কিন্তু সব পক্ষকে এটা মনে রাখতে হবে, সরকার পরিবর্তনের পথ একটাই_ সাধারণ নির্বাচনে জনগণের রায় গ্রহণ। এ ক্ষেত্রে অবশ্যকরণীয় হচ্ছে, রায় প্রদানের জন্য নির্বিঘ্ন পরিবেশ সৃষ্টি করা। এর ব্যত্যয় গ্রহণীয় হয়নি, হবে না।

No comments

Powered by Blogger.