জিঞ্জিরা আমাদের জাপান

বাংলার জাপান, দ্বিতীয় জাপান কিংবা মেইড ইন জিনজিরা ইত্যাদি নানা নামেই পরিচিত রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ উপকণ্ঠের দ্বীপ-জনপদ জিনজিরা। প্রশাসনিক ভাবে এটি বর্তমানে ঢাকা জেলার কেরাণীগঞ্জ উপজেলার একটি ইউনিয়ন। স্থান হিসেবে জিনজিরার এসব বিশেষণ দীর্ঘ সময়ের নয়, বড়জোর তিন চার দশকের।
এর পূর্বে জিনজিরায় ঘটে যাওয়া বেশ কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা স্থানটির স্থায়ী ও উজ্জ্বল পরিচয় মেলে ধরেছে ইতিহাসের পাতায়। খ্যাতি আর কুখ্যাতি, সব মিলিয়ে জিনজিরার নাম এখন মানুষের মুখে মুখে।
বাংলার নবাবি আমল, ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে জিনজিরা ঢাকার অন্যতম প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত হলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এটি আরো সক্রিয় হয়ে উঠে।

এসময়ে প্রায় সব ধরণের হার্ডওয়্যার সামগ্রী, মেলামাইন, প্রসাধনী ইত্যাদি তৈরিতে জিনজিরা রীতিমত অপ্রতিদ্বন্ধী হয়ে উঠে। ঠিক একই সময় জিনজিরার কারিগররা নামিদামি ব্র্যান্ডের পণ্য হুবুহু নকল করছে বলে দুর্নামেরও সূচনা ঘটে। মানুষের মুখে মুখে আর বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি দ্রুত সর্বত্র চাউর হয়ে যায়। এ বিষয়ে স্থানীয়দের দাবি, অন্য এলাকার কারিগররা নকল করে জিনজিরার নাম ভাঙ্গিয়েছে। কিন্তু তারপরও নকলের দুর্নাম এখনো ঘুঁচাতে পারেনি জিনজিরাবাসী।

জিনজিরার কারিগরেরা জানালেন, বিভিন্ন সামগ্রী তৈরিতে বিশ্বে বর্তমানে অপ্রতিদ্বদন্ধী যে জাপান, এক সময় তারাও অন্যের অনুকরণ (নকল) করে বানাতেন সেসব জিনিস। তাদের দক্ষতার প্রতি সম্মান দেখিয়ে সেদেশের সরকার পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার ফলেই ক্রমশঃ তারা বিকাশ লাভ করে আজকের পর্যায়ে পৌঁছাতে পেরেছে।

জিনজিরার কারিগরদের দাবি, আমাদের সরকার যদি জিনজিরার কারিগরদের দক্ষতার স্বীকৃতি দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে ওঠা এখানকার ক্ষুদ্র শিল্পগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতো, তাহলে তাচ্ছিল্য ভরে ডাকা ‘মেড ইন জিঞ্জিরা’র পণ্যই জাপানা কোরিয়ার পণ্যের সমকক্ষ  ‘দ্বিতীয় জাপান বা বাংলার জাপান’ মেড ইন জিঞ্জিরা বিশেষণ এক সময় বাস্তবে পরিণত হতো। 

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
স্থান হিসেবে জিঞ্জিরার ঐতিহাসিক পরিচিতি বিধৃত রয়েছে একাধিক ইতিহাসগ্রন্থে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জিনজিরার ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহুলাংশে বৃদ্ধি পায় বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ উদ-দৌলার বিয়োগান্তক হত্যাকাণ্ড পরবর্তী ঘটনা ঘিরে। ঐতিহাসিক পলাশী যুদ্ধের পর ঢাকার বড় কাটরা দূর্গের দক্ষিণ পার্শ্বে বুড়িগঙ্গা নদীর অপর তীরে মুঘল সুবাদার দ্বিতীয় ইব্রাহীম খান প্রতিষ্ঠিত প্রমোদকেন্দ্রে(হাবেলী বা হাউলী প্রাসাদ) সিরাজ উদ-দৌলার মাতা আমেনা বেগম, স্ত্রী লূৎফা বেগম, কন্যা কুদসিয়া বেগম ওরফে উম্মে জোহরা ও খালা ঘসেটি বেগমকে কড়া পাহাড়ায় বন্দী করে রাখা হয়।

ঐতিহাসিকদের তথ্যমতে, তাদের শিকল (জিঞ্জির) পরিয়ে বন্দি করে রাখা হয়। অনেকের ধারণা এই জিঞ্জির থেকেই পরবর্তীতে এ অঞ্চলের নাম হয় জিনজিরা।  নবাব সিরাজ উদ-দৌলার স্বজনদের বন্দী করে রাখা জিঞ্জিরার নওগোরার দালান এখনো জরাজীর্ণ অবস্থায় কালের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বাংলাপিডিয়ার সংকলক মুয়ায্যম হুসায়ন খান উল্লেখ করেছেন, ‘মুর্শিদাবাদ নিযামতের শেষ বছরগুলিতে সংঘটিত বেদনাবিধূর ঘটনার নীরব সাক্ষী জিঞ্জিরা প্রাসাদ। নওয়াব সফররাজ খানের (১৭৩৯-৪০) পতনের পর তাঁর মাতা, স্ত্রী, ভগ্নি, পুত্রকন্যাসহ হারেমের কতিপয় মহিলাকে এ প্রাসাদে অন্তরীণ রাখা হয়। মুর্শিদাবাদের রাজপথে হোসেন কুলি খানের হত্যাকাণ্ডের পর (১৭৫৪) এ প্রাসাদে বসবাসরত তাঁর পরিবার পরিজনকেও বন্দিজীবন যাপন করতে হয়।

অদৃষ্টের এ এক নির্মম পরিহাস যে, সিরাজদ্দৌলার পতনের পর তার স্বজনদের একই পরিণতি হয়। এরূপ জনশ্রুতি আছে, মীর জাফর আলী খানের পুত্র মীর সাদেক আলী খান ওরফে মিরনের নির্দেশে ঘসেটি বেগম ও আমেনা বেগমকে প্রাসাদ থেকে নৌকায় তুলে নিয়ে ধলেশ্বরী নদীতে নৌকা ডুবিয়ে হত্যা করা হয় (জুন ১৭৬০)।     

বাণিজ্য নগরী জিঞ্জিরা
নদীমাতৃক বাংলাদেশের এক সময়ের ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য প্রধানত যোগাযোগ মাধ্যম ছিল নদীপথ। বাংলায় নবাবি আমল থেকে ঢাকার প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে জিঞ্জিরা প্রসিদ্ধ হয়ে উঠে। নৌপথে বিভিন্ন স্থান থেকে হরেক পণ্য বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে বিক্রির জন্য এখানকার ‘হাটে’ তোলা হতো। ব্রিটিশ আমলে জিঞ্জিরা হাট কাঁচাপাট, পাটজাত দ্রব্য, টিনজাত সামগ্রী, মশলা, গজারি লাকরি (খুঁটি), বিভিন্ন প্রকারের সাইজ কাঠ, বাঁশ ইত্যাদির জন্য বিখ্যাত ছিল। এছাড়া মৃৎশিল্প, লৌহ সামগ্রীর জন্যও জিঞ্জিরা একই সময়ে প্রসিদ্ধ হয়ে উঠে। এর ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান আমলে জিঞ্জিরা ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি বেশ কিছু শিল্প গড়ে উঠে। এসবের মধ্যে আলকাতরা, নারিকেল তেল, সাবান, ডিটারজেন্ট, শাড়ি-লুঙ্গি অন্যতম। স্বাধীনতা পরবর্তী কেমিক্যাল নির্ভর ভোগ্যপণ্য, মেলামাইনসহ আরও অনেক পণ্যের কারখানা গড়ে ওঠে এবং ক্রমেই এর প্রসার বাড়তে থাকে।

যেভাবে ‘মেইড ইন জিঞ্জিরা’
ঢাকার শিল্প বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র জিঞ্জিরার অগ্রসরমান ধারা ৮০’র দশকের পর থেকেই কিছুটা বাধাগ্রস্থ হতে থাকে ‘নকল’ করার দুর্নামকে ঘিরে। বহুল আলোচিত-সমালোচিত এ বিষয়টি জানতে সরেজমিন জিঞ্জিরা ও আশপাশের এলাকা ঘুরে জানা গেল এর নানা কথা। কেরাণীগঞ্জের প্রবীণ সাংবাদিক সাইফুল ইসলামের মতে- জিঞ্জিরা কে নিয়ে যতো কথা বলা হয়, তার সব সত্য নয়। এগুলো এক ধরনের অপ্র-প্রচার।
তার জানান, স্বাধীনতার পরে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘নকলের রাজ্যে কিছুক্ষণ’ শিরোনামে ধারাবাহিক প্রতিবেদনে জিঞ্জিরার কারিগরদের দ্বারা নকল পণ্য তৈরির অভিযোগ উঠে। নামিদামি দেশি ও বিদেশি ব্র্যান্ডের সাবান, কমমেটিক্স ইত্যাদি নকল করে সেসব ব্র্যান্ডের নামেই চালিয়ে দেয়ার যে অভিযোগ করা হয় তার বেশির ভাগ পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার, চকবাজার ও বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী বিভিন্ন চরে তৈরি হতো বলে জানা গেছে।

সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে চতুর নকলবাজরা পণ্য তৈরি করে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যেত, কোনও প্রমাণ বা উপকরণও রাখতো না।

তবে ৫/৬ বছর পূর্বে জিনজিরা বাজারের পশ্চিমে চররঘুনাথপুর এলাকায় পাঁচ টাকার কয়েন তৈরির সরঞ্জামসহ বিপুল কয়েন উদ্ধারের পর থেকে ওই এলাকায় এজাতীয় তৎপরতার খবর পাওয়া যায়নি।’ 

কেরাণীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মাইন উদ্দিন খান জানান, ‘অনেক পূর্বে জিনজিরাতে নকল পণ্য তৈরির কথা মানুষের মুখে শুনেছি। তবে বর্তমানে এ ধরণের কোনও অপরাধ এখানে হচ্ছে না।’   

বদনাম থেকে রেহাই পেতে চাই!
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বংশ পরম্পরায় জিঞ্জিরার কারিগরদের দক্ষতা কমেনি। তাদের দাবি, বিদেশী পণ্যের আদলে মান সম্পন্ন সামগ্রী তৈরি করতে পারলে দোষের কিছু নয়। এখানকার কারিগরেরা মাত্র ২০/৩০ হাজার টাকা মূল্যের যন্ত্রে প্লেনশিট থেকে যে মানের ঢেউ টিন তৈরি করেন গুণগত মানে তা কোনও অংশে খারাপ নয়। জাপানে এরকম টিন তৈরির জন্য কোটি কোটি টাকার প্রজেক্ট নিতে হয়।’
স্থানীয় বীরমুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ হাজী সেলিম আহাম্মেদ জানান, ‘জিঞ্জিরার নকল সামগ্রী তৈরির বদনাম আমাদের সম্মানহানি করেছে। বর্তমানে এসব নিয়ে কিছই আর নেই। তাই আমরা এ থেকে রেহাই পেতে চাই। এখানকার শিল্প উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগই এখন দেশের বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক। এখানে বর্তমানে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। লৌহ সামগ্রী ছাড়াও মেলামাইন, আলকাতরা, নারিকেল তৈল, শাড়ি-লুঙ্গি ইত্যাদিও জন্য জিঞ্জিরা এখন প্রসিদ্ধ। এছাড়া জিঞ্জিরার কালিগঞ্জ দেশিয় গার্মেন্টস, বিশেষ করে জিন্স প্যান্ট তৈরিতে সুনাম অর্জন করেছে। দেশিয় বাজারের জিন্সের প্রায় ৮৫ ভাগ চাহিদা কালিগঞ্জ থেকে পূরণ হচ্ছে।’
জিঞ্জিরা বাজারের তাওয়াপট্টির ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শরীফ হোসেন জানান, ‘বর্তমানে জিঞ্জিরা বাজারে প্রায় ২ শতাধিক বিভিন্ন লৌহ সামগ্রী তৈরীর কারখানা রয়েছে। জিঞ্জিরার এসব কারখানা দেশের হার্ডওয়্যার পণ্যের বিশাল চাহিদা পূরণ করছে। এর মাধ্যমে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। দেশীয় অর্থনীতিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’  

জিঞ্জিরার কারখানায় তৈরি হওয়া বিভিন্ন সামগ্রীর মধ্যে ঢেউটিন, স্ক্রু, নাট-বল্টু, ক্লাম, তারকাটা, জিআই তার, আলতালা, হ্যাসবোল্ট, কব্জা, দা-বটি, শাবল, বালতি, চাপাতি, কুড়াল, কোদাল, কুন্নি, বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, ডেকোরেটর সরঞ্জাম, ওয়াশিং টব, পিতলের বার্নার(কেরোসিন চুলা), পিতলের ডেগ, কলসি, তামার ডেগ, ক্রোকারিজ, তাওয়া, টিফিন ক্যারিয়ার, চাইনিজ সাইলেন্সার/ডাব্বু, আশকল ডুম্বরি, নিক্তিকাঁটা, সাটার, কেচি গেট, লোহার জানালা, দরজা, অ্যালুমিনিয়ামের জগ-মগ ইত্যাদি অন্যতম। ব্যবসায়িদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনও পরিসংখ্যান না থাকলেও প্রতি মাসে জিঞ্জিরা থেকে কোটি কোটি টাকার গৃহস্থালি পণ্য ও যন্ত্রপাতি দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে বলে জানান তারা।  

এসব সামগ্রী তৈরিতে স্থানীয় কারিগররা দক্ষতা অর্জন করেছেন মূলত ‘দেখে দেখে’। জিঞ্জিরা বাজারের আলামিন মেটালের কারিগর নাজমুল ইসলামের(২৬) সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব কারখানায় তৈরি মালের কাঁচামাল আসে নবাবপুর, নারায়ণগঞ্জ, ফতুল্লা, পুরান ঢাকা প্রভৃতি এলাকা থেকে। এছাড়া জাহাজ ও বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টরির ওয়েস্টেজও (বর্জ্য) ব্যবহার হয় এসব পণ্য তৈরিতে। কারিগর নাজমুলের মতে, তাদের তৈরী সামগ্রী  যথেষ্ঠ টেকসই।

সম্ভাবনা অসীম তবে সরকার উদাসীন

জিঞ্জিরার এসব ক্ষুদ্র শিল্প বিকাশের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকলেও সরকারিভাবে এর উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য কোনও পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। স্থানীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের তথ্যমতে, ৮০’র দশকে বিসিক জিঞ্জিরার ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশে ১শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়। কিন্তু কিছু ঋণ বিতরণের পর বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পের কার্যক্রম। বর্তমানে কেবল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে।

আবাসনসহ সম্ভাবনাময় কিছু শিল্প
জিঞ্জিরার ক্ষুদ্রশিল্প ক্রমশঃ বিকশিত হয়ে জন্ম দিয়েছে বেশ কিছু সম্ভাবনাময় শিল্পের। বিকশিত এসব শিল্প অভ্যন্তরীণ বাজারের দেশিয় পণ্যের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচিয়ে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। জিঞ্জিরার কালিগঞ্জের গার্মেন্টস শিল্প, রোহিতপুরের লুঙ্গি, জয়পাড়ার শাড়ী উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠের জনপদ জিঞ্জিরা তথা কেরাণীগঞ্জে উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে আবাসন শিল্পের। কোটি মানুষের ঠাঁই দিতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে যে ঢাকা, তাকে স্বস্থি দিতে সহায় হতে পারে এই দ্বীপ জনপদ।

হার্ডওয়্যার সামগ্রী তৈরিতে জিঞ্জিরার ব্যাপক পরিচিতির বাইরে কালিগঞ্জের গার্মেন্টস শিল্প এ ‌এলাকার নতুন পরিচয় এনে দিয়েছে। বিশেষতঃ কালিগঞ্জের ২ সহাস্রাধিক কারখানায় তৈরি জিন্স প্যান্ট দেশের প্রায় সিংহভাগ চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে।

কেরাণীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির অফিস সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জিন্স তৈরির কারখানাসহ কালিগঞ্জে প্রায় ৫ সহস্রাধিক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি রয়েছে। সারা বছর ধরে এখানে পোশাক তৈরি হলেও দুই ঈদে ও শীত মৌসুমে উৎপাদন ও বেচাকেনা বেশি। এখানকার উৎপন্ন কাপড় মূলতঃ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করছে। জিন্স ছাড়াও এখানে পাঞ্জাবি, বিভিন্ন লেডিস আইটেম ও শিশুদের পোশাক তৈরি হয়।’

তিনি আরো জানান, ‘বর্তমানে চায়না থেকে পোশাক আমদানির ফলে এখানকার শিল্প মার খাচ্ছে। দেশি পণ্য গুণগত মানে খারাপ না হলেও ক্রেতারা বিদেশি পন্যের প্রতি বেশি আগ্রহী। এছাড়া এখানকার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা নিজেদের চেষ্টাতেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সম্ভাবনাময় এই শিল্পকে। সরকারি সহায়তা পেলে কালিগঞ্জের গার্মেন্টস শিল্প দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করাও সম্ভব হতো।’
কালিগঞ্জের ক্ষুদ্র গার্মেন্টস শিল্পের প্রাণকেন্দ্র জেলা পরিষদ মার্কেটের তালুকদার প্যান্ট হাউসের স্বত্ত্বাধিকারী আমিনুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘ত্রুটিযুক্ত (রিজেক্ট বা বাতিল পণ্য) ফেব্রিক্স কিনে এনে আমাদের কারিগরেরা দেশি-বিদেশি মডেল দেখে এসব কাপড় তৈরি করেন। সবসময় ভাল দাম পাই না, উপযুক্ত মজুরি দিতে না পারায় সব সময় কারিগরও পাওয়া যায় না।’

জিঞ্জিরা ও আশপাশের এলাকাতে বহু শিল্প গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকলেও গ্যাস এবং বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারায় তা সম্ভব হয়ে উঠছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- রোহিতপুরে ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশে পরিকল্পিত বিসিক স্টেট গড়ে তোলা হলেও গ্যাস-বিদ্যুত সমস্যা উদ্যোক্তাদের হতাশ করছে। 

স্থানীয়রা মনে করেন, জিঞ্জিরার কারিগরদের দক্ষতাকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিলে দুর্নাম কাটিয়ে নিকট ভবিষ্যতেই স্থানটি সত্যিকারের দ্বিতীয় জাপান হয়ে উঠবে।

No comments

Powered by Blogger.