রাষ্ট্রপতির সংলাপে যোগ দেবে বিএনপি by লোটন একরাম

নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির জিল্লুর রহমানের আহূত সংলাপে সাড়া দেবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। সংলাপে যোগ দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের বিষয়টি সুরাহা করতে বলবে বিএনপি। চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সবার আগে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে রাষ্ট্রপতিকে সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানাবেন তারা। দলের নীতিনির্ধারক নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে। সংলাপে আমন্ত্রণ পাওয়ার পর


বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সমকালকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে চাইছেন। তারা মনে করেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল প্রয়োজন। কারণ কোনো দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
নির্বাচন কমিশন অসহায়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনই তার প্রমাণ। কমিশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েন চাইলেও সরকার দেয়নি। কাজেই আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফয়সালা না করে নির্বাচন কমিশন গঠনের সংলাপ ফলপ্রসূ নাও হতে পারে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের উদ্যোগ নিলে তা ফলপ্রসূ হতো বলে মনে করেন তারা।
বিএনপির সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতির সংলাপে যোগদানের ব্যাপারে ইতিমধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময় করেন। এ সময় সংলাপে যোগ দেওয়া ও না দেওয়ার লাভ-লোকসান নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন তারা। ওই নেতারা খালেদা জিয়াকে সংলাপে যোগদান করে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিকে উদ্যোগ নেওয়া অনুরোধ জানিয়ে আসার ব্যাপারে মত দেন। জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, ইস্যুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন নেতা সমকালকে বলেন, নীতিনির্ধারক কমিটির বৈঠকে সংলাপে যোগ দেওয়ার পক্ষে মত দেবেন তারা। সংলাপে যোগদানের পক্ষে তাদের যুক্তি তুলে ধরবেন। তাদের মতে, দেশের মানুষ দেখবে তারা রাষ্ট্রপতির আহ্বানকে সম্মান দেখিয়েছেন। পাশাপাশি নিজেদের দাবি-দাওয়াও রাষ্ট্রপতির কাছে লিখিতভাবে পেশ করার সুযোগ পাবেন। এতে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে বলে মত দেন তারা।
সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে প্রকাশ্যে কঠোর সমালোচনা করলেও ভেতরে ভেতরে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগকে 'ইতিবাচক' হিসেবে দেখছে বিএনপি হাইকমান্ড। তারা মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমে চলমান রাজনৈতিক 'সংকট' উত্তরণ সম্ভব। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করতে হবে। রাষ্ট্রপতি দেশ, গণতন্ত্র ও জনগণের স্বার্থে যদি কাণ্ডারির ভূমিকা পালন করেন তাহলে বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিরসন হবে বলে আশা করেন তারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও সমকালকে বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ অর্থহীন হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে রাষ্ট্রপতি সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শুধু নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করলে হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমকালকে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু সমাধানের আগে নির্বাচন কমিশন গঠনের সংলাপকে তারা গুরুত্বহীন মনে করেন। তারপরও রাষ্ট্রপতির সংলাপে আমন্ত্রণ পেলে তারা দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
মধ্য জানুয়ারি সংলাপ শেষ করবেন রাষ্ট্রপতি : নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান আগামী জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সংলাপ সম্পন্ন করবেন। এ জন্য তিনি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত এবং সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবেন। তবে জামায়াতে ইসলামীকে সংলাপে ডাকা হবে না।
রাষ্ট্রপতির কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করবেন রাষ্ট্রপতি। তিনি ওই দিন সকাল ১১টায় জাতীয় পার্টি এবং দুপুর ১২টায় জাসদ নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করবেন। এরপর ধারাবাহিকভাবে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি এবং রোববার বড়দিনের ছুটি থাকায় এ তিন দিন সংলাপ হবে না। আগামী সোমবার থেকে দ্বিতীয় দফায় সংলাপ শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। ওই দিন সিপিবি এবং এলডিপির সঙ্গে সংলাপ হতে পারে।
অবশ্য কোন দিন কোন দলের সঙ্গে সংলাপ হবে তা নির্ধারণ করা হয়নি। আজকালের মধ্যে দিনক্ষণ ঠিক করে সেটা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হবে।
সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ছাড়া প্রতিদিন দুটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধির সঙ্গে সংলাপ করবেন রাষ্ট্রপতি। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ১০ জন প্রতিনিধি সংলাপে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন।
আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে সংলাপ শেষ করবেন রাষ্ট্রপতি। তিনি এর আগের দিন সংলাপ করবেন বিএনপির সঙ্গে। সংলাপে শুধু নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়েই আলোচনা করবেন রাষ্ট্রপতি।
এ ক্ষেত্রে সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো লিখিতভাবে তাদের মতামত এবং সুপারিশ জানাতে পারবেন। সেটা না হলে তাদের বক্তব্য রেকর্ড করা হবে। সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নির্বাচন কমিশনের সদস্য হিসেবে তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের নাম চাওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.