রাষ্ট্রপতির সংলাপ উদ্যোগ-সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ কাম্য

তুন নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে আলোচনার জন্য রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি নিশ্চয়ই ব্যতিক্রমী ঘটনা। এই উদ্যোগ সফল করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো যথাযথ ভূমিকা রাখবে_এমন প্রত্যাশাও স্বাভাবিক। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদা এবং অপর দুই কমিশনার ছহুল হোসাইন এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেনের


মেয়াদ ২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি উত্থাপিত হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য তাদের এই দাবিও যৌক্তিক। সংগত কারণেই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। সেই আলোচনাটি রাষ্ট্রপ্রধানের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হওয়াটা স্বাভাবিক কারণেই অধিক গুরুত্ব বহন করছে। বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় জাতীয় পার্টি এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল_জাসদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই কর্মসূচি শুরু হতে যাচ্ছে। কিন্তু জাতীয় সংসদের বৃহত্তম বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এই সংলাপে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। তার পরও সংলাপে যাওয়ার ব্যাপারে তাদের অসম্মতি আছে, এমন বলা যায় না। সর্বশেষ পর্যায়ে তারা এই যুক্তি সামনে এনে সংলাপে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে না_এটাও স্বাভাবিক প্রত্যাশা।
রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগ বাংলাদেশের গণতন্ত্রচর্চাকে শক্তিশালী করবে, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। পাশাপাশি জাতীয় যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিংবা সমস্যা সমাধানে সবার মতামত গ্রহণ করার রেওয়াজও প্রতিষ্ঠা হবে। শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে এ ধরনের উদ্যোগ সরকারিভাবেও নিতে দেখা যায়। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, আমাদের দেশের সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে যোজন যোজন দূরত্ব থাকার কারণে তা সম্ভব হয় না। যে কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতেও সরকার এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। এর জন্য সরকারকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। আবার সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলে বিরোধী দলও যে এগিয়ে আসবে তার নিশ্চয়তা নেই। এটাই আমাদের এখানকার দুর্ভাগ্যজনক রাজনৈতিক সংস্কৃতি। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগ অবশ্যই একটি ইতিবাচক বিষয়। রাষ্ট্রপতি যেহেতু জাতীয় ঐক্যের প্রতীক, আমরা আশা করতে পারি, রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগ সফল করার জন্য সব মত ও সব পথের রাজনৈতিক দলগুলো আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসবে। তবে বিরোধী দলের দাবি অনুযায়ী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুটি জাতীয় সংসদে আলোচনার সুযোগ রয়েছে বিধায় সেখানেই আগে আলোচনা হওয়া উচিত। জাতীয় সংসদে আলোচনা করে যদি কোনো মীমাংসায় না পেঁৗছানো যায় তাহলে বিরোধী দলগুলো রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিতে পারে। তাই এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির আলোচ্যসূচিকে প্রাধান্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো যাতে সবাই সংলাপে অংশগ্রহণ করে তা নিশ্চিত করতে হবে। ইতিমধ্যে সরকারি দল এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে। বৃহত্তম বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে_এমন প্রত্যাশা করা যায়।

No comments

Powered by Blogger.