চাকরির নামে প্রলোভন

রাজধানীসহ সারাদেশে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের চাকরির লোভনীয় প্রস্তাবের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হচ্ছেন অসংখ্য বেকার যুবক-যুবতী। রাজধানীতে মূলত গ্রাম থেকে আসা বেকাররাই এ চক্রের ফাঁদে পড়ছেন। এ ছাড়া কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও প্রতারিত হচ্ছেন। আকর্ষণীয় নামে প্রতিষ্ঠান খুলে পার্টটাইম বা ফুলটাইম চাকরি দেওয়ার নামে অভিনব কায়দায় টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এসব চক্র। মার্চেন্ডাইজার, কিউএম, কিউসি, সুপারভাইজার,


অডিটর, কোম্পানি ম্যানেজার, সহকারী ম্যানেজারসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিভিন্ন সংবাদপত্র, বাস, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক, রাস্তার পাশে দেয়ালে বা বিদ্যুতের খুঁটিতে এসব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখা যায়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চাকরির বিজ্ঞপ্তিদাতার ফোন ছাড়া ঠিকানা দেওয়া হয় না। ফোন করলে বলা হয়_ কাগজপত্রসহ অতি তাড়াতাড়ি যোগাযোগ করুন। চাকরির মিডিয়া সেন্টারগুলোতে চাকরি পেতে প্রথমে কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য রিসিপশনেই জমা দিতে হয় ৩০০-৫০০ টাকা। সেখান থেকে যে স্যারের কাছে পাঠানো হয় তিনিও দাবি করেন টাকা। এভাবে টাকার পরিমাণ ও স্যারের সংখ্যা বাড়তে থাকে। কোথাও কোথাও আবার চাকরি দেওয়ার নামে জামানতের টাকা দাবি করে। অনেকে চাকরির আশায় সেই টাকাও জমা দেন। এরপর চাকরির জন্য তাদের কাছে গেলে নানাভাবে ঘোরাতে থাকে। একদিন দেখা যায় ওই ঠিকানায় কেউ নেই। অনেক জায়গায় চাকরির বিজ্ঞাপনে প্রশিক্ষণ শেষে চাকরির নিশ্চয়তা দেওয়া থাকে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের প্রশিক্ষণ শেষে প্রতারিত হন প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীরা। বনানীর এআইসিসি কলসেন্টার থেকে সনদপ্রাপ্ত রাহুল বলেন, 'আমি এখান থেকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিন মাসের প্রশিক্ষণ নিই। ভর্তি হওয়ার আগে আমাকে বলা হয়, প্রশিক্ষণ শেষে এ প্রতিষ্ঠানেই আমাকে চাকরি দেওয়া হবে। আমার প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। কিন্তু এখনও চাকরি হয়নি।' স্নাতক পাস আজিজুর রহমান বলেন, 'চার মাস আগে মিরপুর-১০ নম্বর সেকশনের দেয়ালে টানানো একটি চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে লেখা ছিল_ অভিজ্ঞতা ও জামানতের দরকার নেই। এরপর ফার্মগেটের ঠিকানায় যোগাযোগ করি। তারা জানায়, প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এ জন্য তিন হাজার টাকা দিতে হবে। অনেক কষ্ট করে টাকা জোগাড় করে জমা দিই। তারপর জানানো হয়, জামানতের জন্য আরও পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। সে পাঁচ হাজার টাকাও জমা দিই। আমাকে বলা হয়, দুই সপ্তাহ পরে স্থায়ী ঠিকানায় চিঠি দিয়ে জানানো হবে। এভাবে কেটে গেছে দুই মাস। একদিন বাধ্য হয়ে ওই ঠিকানায় গিয়ে জানতে পারি, প্রতিষ্ঠানটি এক মাস আগে অন্য জায়গায় চলে গেছে। অনেক ঘোরাঘুরি করেও সে ঠিকানার খোঁজ পাইনি।'
চাকরি নিয়ে প্রতারণা প্রসঙ্গে মহাখালীর ড্যাজল ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক আবদুল হান্নান বলেন, 'রাজধানীতে এসব প্রতারণামূলক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক বেশি। এ ব্যাপারে সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন। '
কাউছার খোকন

No comments

Powered by Blogger.