আমরা উদ্বিগ্ন, আমরা শঙ্কিত-সংঘাত নয়, সুস্থ রাজনীতি চাই

সোমবার একটি দলের কর্মসূচির পাশাপাশি রাজধানী ও রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক গাড়ি ভাঙচুর, বোমাবাজি ও অগ্নিসংযোগের যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে তাতে দেশবাসী উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। এ ঘটনায় যানবাহনের ব্যাপক ক্ষতি ছাড়াও ঢাকায় ও সিলেটে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আহত ও গ্রেপ্তারের ঘটনাও কম নয়। এর মাধ্যমে যে পক্ষই রাজনৈতিক ফায়দা আদায়ের চেষ্টা করুক না কেন, যে দুটি জীবন আমরা হারালাম তাদের স্বজনেরা কী সান্ত্বনা
পাবেন? লাশ নিয়ে আবারও টানাটানি শুরু হয়েছে। রাজনীতির এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।
রোববার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপি মুক্তিযোদ্ধাদের যে সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল, তা মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তাহলে রাজধানীজুড়ে এই তাণ্ডব ঘটল কেন? কারা ঘটাল? বিএনপি বলেছে, সরকার নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে পুলিশ দিয়ে গুপ্তহামলা করিয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দাবি, দলীয় কর্মসূচি সামনে রেখে বিএনপি ও জামায়াতের কর্মীরা বড় ধরনের নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আগেভাগে খবর পেয়ে সরকার তা বানচাল করে দেয়।
ঘটনা যারাই ঘটাক না কেন, তাদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব সরকারের। তারা যদি আগেই টের পেয়ে থাকে তাহলে গাড়ি ভাঙচুর, বোমাবাজি ও অগ্নিসংযোগ ঠেকাতে পারল না কেন? প্রশ্ন উঠেছে বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়েও। রোববারের কর্মসূচিতে সমাবেশ বা মহাসমাবেশের কথা ছিল না। তার পরও বিভিন্ন স্থান থেকে বাসভর্তি করে মানুষ ঢাকায় নিয়ে আসার কী কারণ? ঢাকার কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সিলেটে কেন বাসে আগুন দেওয়া হলো? কেন অন্যান্য স্থানেও ব্যাপক বাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটল?
কোনো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধা দিতে পারে না। আবার কোনো দল কর্মসূচি পালনের নামে জনগণকে জিম্মি করতে বা তাদের মধ্যে আতঙ্কও ছড়াতে পারে না। অথচ রোববার বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সেই ঘটনাই ঘটেছে। এর আগে তারা ঢাকায় মহাসমাবেশ করেছে, বিভিন্ন সড়কে লংমার্চ করেছে, যা আগেই দেশবাসীকে জানানো হয়েছিল। এবারও সেই ধরনের কোনো উদ্যোগ থাকলে তাদের উচিত ছিল জনগণকে জানানো। রোববার জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের কর্মসূচি না থাকা সত্ত্বেও তাদের নেতা-কর্মীদের রাজপথে তৎপর থাকতে দেখা গেছে। তারা কি সেপ্টেম্বরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চেয়েছিল? সুস্থ রাজনীতির স্বার্থে এসব প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া জরুরি।
আমরা মনে করি, রাজনীতির নামে কোনো সহিংস ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চলতে দেওয়া যায় না। হরতাল-অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতি কখনোই দেশ ও জনগণের মঙ্গল বয়ে আনে না। রাজপথে পরস্পরকে মোকাবিলার চেষ্টা না করে আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি যে সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছেন, আশা করি তাতে সব দল অংশ নেবে এবং সেটাই হতে পারে সমঝোতার ভিত্তি।

No comments

Powered by Blogger.