হাত নেই তবু মনিরের জীবনযুদ্ধে জয় by জাহেদুল আলম

নিরুল ইসলাম (৩৫) পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২ রাউজান অফিসে লাইম্যান হিসেবে চাকরি শুরু করেন ১৯৯৫ সালে নভেম্বর মাসে। পিতা মৃত ইয়াছিন ভূঁইয়া। মাতা মৃত আফিয়া খাতুন। গ্রামের বাড়ি ঢাকা জেলার সাভারের চাপাইন থানায়। ১৯৯৪ সালে এস.এস.সি পাস করেন কুমিল্লা ফুলতলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। উত্তীর্ণ হওয়ার পর উচ্চ মাধ্যমিক তথা এইচ.এস.সি তে ভর্তি হন কুমিল্লার জায়ারগঞ্জ কলেজে।

কিন্তু অভাবের কারণে তার এইচএসসি পাস করা হয়নি। পরিবারে অভাব মেটাতে লেখাপড়া বাদ দিয়ে চাকরি নেন পল্লীবিদ্যুতে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। চাকরি করতে গিয়ে শরীরের দু'হাত কেটে ফেলতে হবে তা তিনি কখনো ভাবে নি।

জানা যায়, ১৯৯৭ সালের ২১ জানুয়ারি মঙ্গলবার বেলা ৩টায় পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের আঁধারমানিকের ক্ষেতিপাড়া এলাকায় ১১ হাজার ভোল্টের খুঁটিতে কাজ করার সময় বিদ্যুতের শর্ট খেয়ে গুরুতর আহত হন মনির। আহত হওয়ার পর প্রথমে রাউজান স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্, পরে ওই দিন রাতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মনিরকে। অবস্থা আশংকাজনক হলে তৎকালীন জিএম এমদাদুল আকবর চৌধুরী ও এজিএম আমান উল্লাহ্ পাটোয়ারীর সহযোগিতায় আহত লাইনম্যানকে সুচিকিৎসার জন্য মহানগরের মেট্রোপলিটন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ একমাস চিকিৎসা নেওয়ার পর তার দুই হাতের বড় দুটি অংশ কেটে ফেলতে হয়।

অথচ এতো বড় দুর্ঘটনায় মনোবল হারাননি মনির।সেই দুর্ঘটনার পর আজ পর্যন্ত আট ঘন্টা ডিউটি পালন করে যাচ্ছেন। আশ্চর্য হলেও সত্য, দুই হাত ছাড়াই দৈনিক অভিযোগ খাতায় কলম দিয়ে লেখা, মোবাইল ফোন রিসিভ করা, খাতাপত্র আনা নেওয়াসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন নিয়মিত। মনির ভলিবল ও ক্যারাম খেলতে পারেন। চামচ দিয়ে ভাতও খান তিনি। বাথরুম সারার পর কীভাবে পানি ব্যবহার করেন জানতে চাইলে তিনি জানান, ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে একটি ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল। সেভাবেই তিনি বাথরুমের কাজ সারেন।

২০০২ সালে বিয়ে করেন মনিরুল ইসলাম। বর্তমানে স্ত্রী কন্যা থাকেন রাউজান পল্লীবিদ্যুতের স্টাফ কোয়ার্টারে। পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জিএম সাখাওয়াত উল্লাহ্ বলেন 'মনির খুব পারিশ্রমী কর্মী। কাজে কখনো অবহেলা করে না।' বিদ্যুৎ অফিসে তার এক সহকর্মী বলেন, 'মনিরের হাতের যে অবস্থা ছিল, তাতে তার ভিক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু বাঁচার তাগিদে পঙ্গু হাতকে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে নেয়ার উপযোগী করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।'

No comments

Powered by Blogger.