উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে চাপের মুখে অর্থনীতি :মুহিত-আন্তর্জাতিক বাজারের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নীতিগত অনেক কারণ দায়ী

চ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের অর্থনীতি চাপের মুখে পড়েছে বলে স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গতকাল সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আন্তর্জাতিক এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় অর্থনীতি বেশ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। আর দেশের এ উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নীতিগত অনেক কারণ দায়ী বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক, ইউএন ডেসা ও ইউএন এসক্যাপের যৌথ আয়োজনে 'মূল্যস্ফীতির পেছনের কারণ : স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি কার্যকর উন্নয়নের জন্য বিকল্প নীতি ও কাঠামো' শীর্ষক চার দিনের এ আন্তর্জাতিক কর্মশালা গতকাল শুরু হয়েছে। কর্মশালায় বাংলাদেশসহ ২৭টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধি ছাড়াও বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, জাতিসংঘের বিভিন্ন শাখা প্রতিষ্ঠান, গবেষক ও কূটনীতিকরা অংশ নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফেন প্রিজনার, রিসোর্স পারসন অধ্যাপক জন লাক্সলি, জাতিসংঘ অর্থনীতি এবং সামাজিক কর্মসূচির প্রতিনিধি আয়নুল হাসান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী।
অর্থমন্ত্রী বলেন, টেকসই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য দেশের মুদ্রা ও আর্থিক নীতিতে আরও সমন্বয় দরকার। সেটি না থাকায় দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। আর উচ্চ মূল্যস্ফীতির ফলে দেশের অর্থনীতি বেশ সমস্যার শিকার হচ্ছে। এ জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নীতিগত অনেক কারণ দায়ী। বাজেট ভর্তুকিতে বরাদ্দ জিডিপির ২ দশমিক ৭ শতাংশ ধরা হলেও বাস্তবে তা আরও বাড়ছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও সারে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ভর্তুকি অনেক বেড়ে গেছে। তাই শুধু আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের উচ্চ মূল্যের কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে_ এমন ধারণা ঠিক নয়। তবে মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের এসব ভর্তুকির কারণে শিল্প-কারখানার বেশ উন্নতি ঘটেছে। যার প্রভাবে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বাজেট প্রণয়নের সময় মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কে রাখার কথা বলা হয়েছিল। তবে তা বাস্তবায়নটা এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে যে কোনো মূল্যে এটি এক অঙ্কে আনার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, টেকসই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য মুদ্রা এবং আর্থিক নীতিতে আরও সমন্বয় দরকার। বিশেষ করে সামগ্রিক অর্থনীতি ব্যবস্থাপনা, অর্থনৈতিক খাতকে আরও গুরুত্ব দেওয়া, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, দেশের প্রায় ১৫ কোটি মানুষের জন্য মাত্র ৭ হাজার ব্যাংক শাখা রয়েছে। সম-উন্নয়নের জন্য ব্যাংকিং সেবার পরিধি আরও বাড়ানো দরকার।
গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, নির্দিষ্ট মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মুদ্রা সরবরাহের অত্যধিক নিয়ন্ত্রণ বা শিথিলতা উৎপাদন ও কর্মসংস্থান ব্যবস্থায় অস্থিতিশীলতার কারণ হতে পারে। মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে মুদ্রানীতির অতিরিক্ত শিথিলতার কারণে নিম্ন মূল্যস্ফীতির উন্নত দেশে আর্থিক খাতে ব্যাপক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে। উন্নত বিশ্বের সব কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণকে তাদের মুদ্রানীতির একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেনি। তিনি বলেন, আর্থিক সেবাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কাছে পর্যাপ্ত ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ব্যাপকভিত্তিক আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। মুদ্রা ব্যবস্থাপনা ও নীতিনির্ধারণে এ ধরনের কর্মশালা কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াবে বলে তিনি মনে করেন।
স্টিফেন প্রিজনার বলেন, টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কার্যকর মুদ্রা নীতি দরকার। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সেটি অনেকাংশে দেখা যায় না। এ ছাড়া সুষম বাণিজ্যের অভাবে অনেকাংশে তারা পিছিয়ে থাকে। আয়নুল হাসান বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বিশ্বে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। হুমকির মুখে রয়েছে অর্থনীতি। অনেক মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়েছে। এর মোকাবেলা করতে কৃষি উৎপাদন ও পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.