জবুথবু শীতে ঝিমানো ক্রিকেট
শীতটা এবার যেন আচমকাই জেঁকে বসেছে। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে প্রকৃতি পুরো বদলে গেছে। আবহাওয়ার এ পরিবর্তনটা যেন মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়েছে। কনকনে ঠা ার সঙ্গে হিমেল হাওয়া। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা পাওয়া যায় না। ১৭ ডিসেম্বর থেকে পুরো দেশে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বইছে। আর গতকাল সেটা তীব্র আকার ধারণ করে। এ আবহাওয়া মিরপুরে নিয়ে এসেছিল যেন ইংলিশ কন্ডিশন।
ঢাকার অন্য এলাকার তুলনায় মিরপুরে শীত যেন একটু বেশিই। আর গতকাল মৌসুমের সবচেয়ে বেশি শীত এসে ভর করেছিল মিরপুরে। ঢাকার অন্যান্য অংশে দুপুর নাগাদ সূর্য উঠে গেলেও গতকাল শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে রোদের দেখা মেলে বিকেল ৩টা নাগাদ। মিরপুরের ঠা ায় কাবু হয়ে পাকিস্তানি ধারাভাষ্যকার রমিজ রাজা সকালেই টুইট করেন, 'ঠা ায় আমার দাঁতে দাঁত লেগে যাচ্ছে! ক্রিকেটাররা সাবধান!'
অন্যদিনের তুলনায় গতকাল শীতটা একটু বেশি হলেও খেলা শুরু হয় সকাল পৌনে ১১টার দিকে। তবে পাঁচ ওভার খেলা চালানোর পরই দুই আম্পায়ার আলো মাপামাপিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন বিলি ডক্টরভ এবং থারাপোরে। তারা মুশফিককে সম্ভবত বলেন, যদি পেসার দিয়ে বোলিং করানো হয় তাহলে এ আলোয় হবে না, ফ্লাডলাইট লাগবে। স্পিন বোলাররা বল করলে লাগবে না। তবে আম্পায়ারদের মুশফিক জানিয়ে দেন, তিনি পেসার দিয়ে আক্রমণ চালাবেন। এমন কন্ডিশনে কোনো অধিনায়কই এ সুযোগ হাতছাড়া করবে না। তাই সকাল সোয়া ১১টার দিকেই ফ্লাডলাইট জ্বালানো হয়। দুপুর ৩টার দিকে সূর্যের দেখা মিললেও দিনের প্রায় পুরোটা সময় কৃত্রিম আলোতেই খেলা হয়েছে। তবে ফ্লাডলাইট দিয়েও নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ করা যায়নি। বিকেল থেকেই শুরু হওয়া কুয়াশার কারণে ১৮ ওভার আগেই দিনের খেলা বন্ধ করতে বাধ্য হন আম্পায়াররা।
এমন ঠা ায় জমে গিয়েছিলেন দু'দলের ক্রিকেটাররাও। সারা দিনে মাত্র দুটি উইকেট হারালেও পাকিস্তানের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনের রান তোলায় গতি ছিল না। গতকাল তারা ৬৯ ওভারে ২০৫ রান তুলেছে। যা ওভারপিছু মাত্র ২.৯৭। তবে সফরকারীদের তুলনায় বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা সম্ভবত একটু বেশি জমে গিয়েছিলেন। এমন পেস সহায়ক কন্ডিশন পেয়েও প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার মতো বোলিং করতে পারলেন বাংলাদেশের তিন পেসার। এর মাঝে আবার বেশ কয়েকটি ক্যাচ ফেলেছেন ফিল্ডাররা। লাঞ্চের পর প্রথম বলেই গালিতে তৌফিক উমরের ক্যাচ ফেলেন নাজিমউদ্দিন। তখন পাকিস্তানি ওপেনারের রান ৬৬। সেঞ্চুরি করার পরও সুযোগ দিয়েছিলেন তৌফিক; কিন্তু শর্ট লেগে ক্যাচ নিতে পারেননি শাহরিয়ার নাফীস। এ ছাড়া ইউনুস খানের রান যখন ১৫, তখন ডিপ মিড উইকেটে তার একটি সহজ ক্যাচ ফেলেন শাহাদাত হোসেন রাজিব।
তবে এমন ঠা ায়ও সোয়েটার-চাদর মুড়িয়ে মাঠে এসেছিল হাজার দুয়েক দর্শক। বাংলাদেশিদের উইকেট না পাওয়া এবং পাকিস্তানের ধীরগতির ব্যাটিং আনন্দের উপলক্ষ এনে দিতে পারেনি তাদের। একেবারে ম্যাড়ম্যাড়ে ক্রিকেট হয়েছে গতকাল। এ সিরিজের নামকরণ 'কুল অ্যান্ড কুল' যেন গতকাল সার্থকতা পেল!
No comments