বিদ্যুতের কষ্ট আরও তিন মাস! by হামিদ উল্লাহ

চট্টগ্রামে বিদ্যুতের অস্বাভাবিক ঘাটতি আরও দুই থেকে তিন মাস চলবে। বোরো মৌসুম শেষ হলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির ইতিবাচক উন্নতি হবে বলে এর আগে কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিলেও তা হয়নি। সরবরাহ ব্যবস্থার তেমন উন্নতি না হওয়ায় এখন গরমের মধ্যে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। এতে ক্ষোভ ও হতাশা বেড়েছে গ্রাহকদের মধ্যে।


বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, আগামী তিন মাসের মধ্যে সিলেট থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত একটি নতুন বিদ্যুৎ লাইন তৈরির কাজ শেষ হবে। এতে সিলেটের উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। তখন চট্টগ্রামেও সরবরাহ বাড়বে। বর্তমানে চট্টগ্রামে বিদ্যুতের ঘাটতি গড়ে ২৫০ থেকে ২৭০ মেগাওয়াট।
পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. রইস উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সিলেটে এ মুহূর্তে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ রয়েছে। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে বিয়ানিবাজার হয়ে কুমিল্লার মধ্যে একটি এক্সপ্রেস লাইন নির্মাণকাজ শেষ হবে। এ লাইন দিয়ে ওই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হলে চট্টগ্রামের জন্যও কিছু বরাদ্দ বাড়বে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হতে আরও তিন মাস লাগতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে একাধিক গ্রাহক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, তিন মাস পরে বর্ষাকাল। তখন বৃষ্টির কারণে এমনিতেই তাপমাত্রা অনেক কম থাকবে। সে সময় অতিরিক্ত বিদ্যুৎ পেয়ে কী লাভ। প্রয়োজনের সময় তো পিডিবি বিদ্যুৎ দিতে পারছে না। প্রধান প্রকৌশলী গত মার্চ মাসে জানিয়েছিলেন, বোরো মৌসুম শেষ হলেই বিদ্যুৎ পরিস্থিতির ইতিবাচক উন্নতি হবে। তখন সেচকাজে ব্যবহূত এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আবাসিক ও শিল্প-কারখানায় ব্যবহার করা যাবে।
জানা গেছে, ইতিমধ্যে বোরো মৌসুম শেষ হয়েছে। কৃষকেরা ধানও প্রায় তুলে ফেলেছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং করে বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবিলা করছে পিডিবি। দিনের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকে না। এ ছাড়া সন্ধ্যা, মধ্যরাত, এমনকি নগরের কোথাও কোথাও শেষরাতেও বিদ্যুৎ চলে যায়। শহরের মানুষ এক ঘণ্টা পর বিদ্যুতের দেখা পেলেও গ্রামের কোনো কোনো এলাকায় একদিন পর পর বিদ্যুতের দেখা মেলে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রইস উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ ঢাকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বসছে। এতে বিদ্যুতের চাপ আরও বাড়িয়ে চট্টগ্রামে অধিক বিদ্যুৎ দেওয়ার একটি সিদ্ধান্ত আসছে। এটা হলে চট্টগ্রামের গ্রাহকদের আরও বেশি বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছি।’
পিডিবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামে বিদ্যুতের ঘাটতি গড়ে ২৫০ থেকে ২৭০ মেগাওয়াট। আর বিভিন্ন শিল্প-কারখানা গ্যাস দিয়ে নিজস্ব জেনারেটরের মাধ্যমে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করত, গ্যাসের অভাবে অনেক কারখানায় তা বন্ধ আছে। এভাবে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণও প্রায় ২০০ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। পিডিবির হিসাবে বর্তমানে চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা সাড়ে ৭০০ মেগাওয়াট। তবে চট্টগ্রাম পিডিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিদ্যুৎ সংযোগ আছে, এমন সব মানুষ বা স্থাপনাকে প্রকৃত হিসাবে আনলে চাহিদা এক হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে।’
সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে বর্তমানে গড়ে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, জাতীয় গ্রিডের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের সাড়ে ১১ শতাংশ চট্টগ্রামে সরবরাহ হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে সরবরাহ পাওয়া যায় অনেক কম। সরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি ফার্নেস তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে গড়ে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসার কথা। কিন্তু অনেক বেশি ব্যয়বহুল হওয়ায় এগুলো কেবল সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চালানো হয়। ফার্নেস তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রতি ইউনিটে খরচ পড়ে সাড়ে ১১ থেকে ১৭ টাকা। আর গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়ে মাত্র তিন টাকা। কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ আরও কম। ইউনিটপ্রতি প্রায় এক টাকা। ফলে দেখা যায়, ফার্নেস তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হলে সরকারকে ভর্তুকিও বাড়িয়ে দিতে হয়। এ জন্য এসব কেন্দ্র কেবল সান্ধ্যকালীন পিক আওয়ারে চালু থাকে।
চট্টগ্রামে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন হিসাব করে দেখা যায়, কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প (কাপ্তাই) থেকে ৯০ মেগাওয়াট, রাউজান তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুই ইউনিট থেকে ২০০ মেগাওয়াট, শিকলবাহা পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ১৩০ মেগাওয়াট, দোহাজারী বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৯০ মেগাওয়াট এবং হাটহাজারী থেকে ৪০-৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এর বাইরে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে মালঞ্চ হোল্ডিংস থেকে ১৫ মেগাওয়াট, রিজেন্ট পাওয়ার থেকে ১৯ মেগাওয়াট এবং জুলদা পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ৩৫-৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পিক আওয়ারে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হয়।

No comments

Powered by Blogger.