বহদ্দারহাট থেকে এক কিলোমিটার-১০ মিনিটের পথ এক ঘণ্টায় by মিঠুন চৌধুরী

ভাঙা রাস্তা, ধুলাবালু, সড়কের অর্ধেকজুড়ে চলতে থাকা ফ্লাইওভারের কাজ আর তীব্র যানজট—সব মিলিয়ে নগরবাসীর কাছে এখন ভোগান্তির আরেক নাম বহদ্দারহাট মোড়। ১০ মিনিটের পথ যেতে সময় লাগছে এক ঘণ্টা। শিগগিরই এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলছে না পথচারী ও যাত্রীদের।


সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ শেষ হলেই বহদ্দারহাট মোড়সংলগ্ন সড়কগুলোর সংস্কারকাজ পুরোদমে শুরু হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নগরের বহদ্দারহাট মোড়ে সড়কের মাঝ বরাবর চলছে ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ। মোড় থেকে শুলকবহরের দিকে কিছু অংশে সড়কের অবস্থা বেহাল। রাস্তাজুড়ে বড় বড় গর্ত। ছোটবড় সব ধরনের গাড়ি চলাচল করছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে।
অন্যদিকে বহদ্দারহাট-তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু সংযোগ সড়কের চান্দগাঁও থানা পর্যন্ত অংশে পলেস্তারা পুরোপুরি উঠে গেছে। এখন আর ইটের অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যায় না। সড়কটির এ অংশে যানবাহন চলাচল বন্ধ। এ কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী সব ধরনের যানবাহন বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল হয়ে চলাচল করে। ফলে আরাকান সড়কে যানবাহনের চাপ আগের তুলনায় দ্বিগুণ। কিন্তু মোড়ের বেশির ভাগ অংশজুড়ে চলছে ফ্লাইওভারের কাজ। এ কারণে এ জায়গায় এসে গাড়ির গতি কমাতে হয়। মূলত সড়কের এ অংশ থেকেই শুরু হয় যানজট। নগরের খতিবের হাট এলাকার বাসিন্দা জিয়াউল কবির প্রথম আলোকে বলেন, বহদ্দারহাটের আশপাশের এলাকায় এখন সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা চালকেরা যেতে চান না। গেলেও অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বহদ্দারহাট মোড়ে যানজট লেগেই থাকে। একবার যানজট শুরু হলে অতিরিক্ত আধা ঘণ্টা পর্যন্ত সময় নষ্ট হয়। প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে যানজট হয় মধ্যরাত পর্যন্ত।
যানজটের সঙ্গে যোগ হয়েছে ধুলা। বহদ্দারহাট মোড়সংলগ্ন এলাকায় পথচারীদের অনেকেই নাক-মুখ ঢেকে চলাচল করেন। নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসিন্দা শারমিন সুলতানা বলেন, চকবাজার বা মুরাদপুরের দিক থেকে বহদ্দারহাট মোড়ে পৌঁছালেই ভয় লাগে। বড় বড় গর্তে বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চলে। মোড় পার হলেও শান্তি নেই। আরাকান সড়কের অবস্থাও বেহাল।
এদিকে বহদ্দারহাট-তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু সংযোগ সড়ক আংশিক বন্ধ থাকায় কষ্টে আছেন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। বলিরহাটের বাসিন্দা রিদোয়ানুল ইসলাম বলেন, রাস্তা বন্ধ থাকায় কোনো যানবাহন চলে না। রিকশা চলাচল করলেও ভাঙা রাস্তায় চড়া যায় না। তাই হেঁটেই বহদ্দারবাড়ি মসজিদ পর্যন্ত আসতে হয়। এ গরমে শিক্ষার্থী আর বয়স্কদের হেঁটে চলাচল করতে বেশি কষ্ট হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর দিক থেকে আসা সব যানবাহন চান্দগাঁও থানার মোড় থেকে ঘুরে বহদ্দারহাট টার্মিনালের দিকে চলে যায়। ১ নম্বর সিটি বাস, রাইডার, টেম্পোও এই পথে চলাচল করে। এ কারণে বিকেলে থানার মোড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।
সড়ক সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে বহদ্দারহাট-তৃতীয় কর্ণফুলী সংযোগ সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক জুলফিকার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ শেষ হলে সিডিএ রাস্তার এ অংশটুকু আমাদের হস্তান্তর করবে। এরপর রাস্তাটি খুলে দেওয়া হবে। তখন আমরা সংস্কারকাজ শুরু করব।’
সড়ক ও জনপথ সূত্র জানায়, সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পটি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ চলায় সৃষ্ট নিত্যদিনের যানজটের বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাজ করতে গেলে কিছুটা যানজট হবেই। ট্রাফিক বিভাগ সব সময় এ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। বহদ্দারহাট কাঁচা বাজারসংলগ্ন ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের কাজ চলছে।’ উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ২০১১ সালের মার্চ মাসে ফ্লাইওভারটির নির্মাণকাজ শুরু করে। ৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন চার লেইনবিশিষ্ট ফ্লাইওভারের প্রস্থ হবে ১৪ মিটার ও দৈর্ঘ্য এক হাজার ৩৩২ মিটার। এ বছরের ডিসেম্বরে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
বহদ্দারহাট মোড়ে যানজটের বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (যানবাহন, উত্তর) এ কে এম এমরান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা তিন পালায় ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করে। সাধারণত নগরে রাত ১১টার পর ট্রাফিক পুলিশ থাকে না। আমরা চাই, যানবাহন যেন একদম থেমে না থাকে। সংযোগ সড়কের সম্মুখভাগ বন্ধ থাকায় আরাকান সড়কে যানবাহনের চাপ বেশি। এর সঙ্গে রাতে যোগ হয় ভারী যানবাহনের চাপ। আমরা চেষ্টা করি, রাস্তায় যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। এ জন্য নয়জন ট্রাফিক পুলিশ প্রতি পালায় দায়িত্ব পালন করেন।’

No comments

Powered by Blogger.