‘স্পেনের মতো দল দেখিনি’

ইংল্যান্ডের সাবেক স্ট্রাইকার গ্যারি লিনেকার এখন টিভি উপস্থাপক। তবে বিশ্ব ফুটবলের হালহকিকত তাঁর নখদর্পণে। ফিফাডটকমকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা বলেছেন, ২০১২ ইউরোয় ইংল্যান্ডের সম্ভাবনা, স্পেনের জাদুকরি ফুটবল ও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের মান নিয়ে


 ২০১২ ইউরোয় ইংল্যান্ডের সুযোগ কেমন?
গ্যারি লিনেকার: প্রত্যাশার পারদটা এবার খুব বেশি ওপরে তোলা উচিত বলে মনে করি না আমি। বেশির ভাগ সময়ই আমরা নিজেদের ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলে ধরলেও আমার মনে হয় না এবার সেই ব্যাপারটি আছে। আমরা দেখেছি, খুব ভালো খেলোয়াড়দের একটা প্রজন্ম শেষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একঝাঁক তরুণ সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়ও পেয়েছি আমরা। তবে এই দুয়ের মাঝে রুনি ছাড়া খুব বেশি বিশ্ব মানের খেলোয়াড় নেই। সামনে কঠিন দিন। তবে আমরা যদি একটু কম প্রত্যাশা নিয়ে যাই ও একটু সাবধানী ফুটবল খেলি, বলা যায় না কী হয়। কারণ, আমাদের রক্ষণভাগে চারজন ভালো খেলোয়াড় ও মধ্যভাগে ধরে খেলার মতো গোটা দুই খেলোয়াড় আছে। স্পেনের বিপক্ষে (প্রীতি ম্যাচে) আমরা এভাবে খেলেই সাফল্য পেয়েছি। সেই ম্যাচে আমরা নিজেদের আন্ডারডগই ভেবেছিলাম। আমাদের আক্রমণভাগে তেমন কেউই নেই। তা ছাড়া প্রথম দুই ম্যাচে রুনিও থাকছে না। তবে আমরা যদি রক্ষণভাগ সামলে কাউন্টার অ্যাটাক করি, অনেক দূর যেতে পারি।
 বলছেন প্রত্যাশা কম করাটাই ইংল্যান্ডের জন্য ভালো হবে?
লিনেকার: প্রত্যাশা খুব বেশি না হলে চাপ তো কিছুটা কমবেই। আমি মনে করি, কৌশলগতভাবে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা খুব বেশি আক্রমণাত্মক খেলতে পারি না। কারণ, তাতে হেরে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। সব দলই বুদ্ধিমান ও কৌশলী। আর আমরা জানি, অন্য কিছু দেশের মতো আমরা কৌশলের দিক দিয়ে অতটা কার্যকর নই।
তবে আমরা যদি ওই ধরনের ফুটবল খেলতে পারি, যাকে বলা হয় ‘সুন্দর ফুটবলের পুনরাগমন’, সেটা দারুণ হবে।
 টুর্নামেন্ট কারা জিতবে বলে মনে করেন?
লিনেকার: স্পেন ছাড়া কারও নাম বলা মুশকিল। তারা এমন ধরনের ফুটবল খেলে, যেখানে প্রায় ম্যাচের ৭০ ভাগ সময়ই বল থাকে তাদের দখলে। আমি কখনো অন্য কোনো দলকে এভাবে খেলতে দেখিনি। তারাই এই স্টাইলে খেলার প্রচলন করেছে, যেটা এগিয়ে নিচ্ছে ফুটবলকে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, অন্য দলগুলোও তাদের অনুসরণ ও সমকক্ষ হওয়ার চেষ্টা করছে। আমি মনে করি, এটা খেলাটাকে এগিয়ে নেবে। এটা সত্যিই সুন্দর। এই ধরনের ফুটবলের আবির্ভাব হলেই বলা যাবে সুন্দর ফুটবল ফিরে এসেছে। গত কয়েকটা বিশ্বকাপের দিকে তাকালেই দেখা যাবে দলগুলোর মধ্যে একটা ভয় কাজ করত এবং নেতিবাচক খেলা হতো। কিন্তু হঠাৎ করেই দেখতে পেলাম একটি দল প্রতিপক্ষের সীমানায় খেলছে, বল ধরে রাখার চেষ্টা করছে, উপভোগ করছে ও নিজেদের প্রকাশ করছে, এটা সত্যিই চমৎকার। স্পেনের বাইরে জার্মানিও উঠে আসছে। তাদের বেশ কয়েকজন ভালো খেলোয়াড়ও আছে। হল্যান্ডের ভালো সম্ভাবনা আছে, ফ্রান্সও চ্যাম্পিয়ন হতে পারে।
 ২০১১-১২ মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
লিনেকার: উত্তেজনার দিক দিয়ে এটা অন্যতম সেরা মৌসুম। মানের দিক দিয়ে এর চেয়ে ভালো কয়েকটা মৌসুম হয়তো ছিল কিন্তু এবার আমরা অসাধারণ কিছু ঘটনা দেখেছি। কিছু বেশি গোলের ম্যাচ, কিছু পাগুলে ম্যাচ, স্কোলসের ফিরে আসা, মুয়াম্বার অলৌকিক ঘটনা ইত্যাদি। এমন কোনো কাহিনি ছিল না, যার মঞ্চায়ন হয়নি আর আমরা এখন সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ সমাপ্তি দেখতে যাচ্ছি। সম্ভবত প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ম্যাচটাও দেখলাম। প্রতিবারের মতো এবারও নিচের দিকে ভালো লড়াই ছিল।
 সাম্প্রতিক বছরগুলোয় প্রিমিয়ার লিগের মান কি কিছুটা কমে গেছে?
লিনেকার: ইউরোপে আমাদের পারফরম্যান্স দেখে মনে হতে পারে আমরা আর আগের মতো শক্তিশালী নই। চেলসিই শুধু ব্যতিক্রম, টিকে রইল শেষ পর্যন্ত। স্পেনকে দেখুন, দুটি সেমিফাইনালে (চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ইউরোপা লিগ) ওদের পাঁচটি দল ছিল, আমদের মাত্র একটা, যারা আবার বেশ কষ্ট করেই ওখানে গেছে। আমাদের ম্যানচেস্টারের বড় দুই দল ইউরোপা লিগ থেকে বাদ পড়ে গেল। এগুলো বলে দেয়, আমরা আর আগের মতো শক্তিশালী নই।
 কাপ প্রতিযোগিতাকে দলগুলো যেভাবে দেখছে তাতে ফুটবলে কি পরিবর্তন এসেছে?
লিনেকার: ভাবার মতো একটা বিষয়। নিজেদের সব সময় লিগের অবস্থান দিয়েই বিচার করা উচিত। কারণ, কাপে যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। লিভারপুলকে দেখুন, তাদের ইতিহাস বলছে, তাদের শুধু কাপের দল হিসেবে বিচার করা উচিত নয়। লিগে তারা খুব খারাপ করেছে, কিন্তু তারা কিছু ট্রফি জিতেছে। অনেক দিন হলো লিগে তাদের কোনো সাফল্য নেই। কেনি যখন দায়িত্ব নিল, তখন শিরোপা থেকে যে দূরত্বে ছিল, লিভারপুল এখনো সেই দূরত্বেই আছে। একটা দল ধীরে ধীরে একটা ইউনিট হিসেবে গড়ে ওঠে। এর জন্য সমর্থকদের সমর্থন দরকার। দলের ধারাবাহিক ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠার জন্য একসময় সবাই কেনিকে কোচ হিসেবে চেয়েছে, কিন্তু এখন তারাই আবার তাঁকে দলছাড়া করতে চায়। ফুটবল খেলাটা এমনই! গত ১৫ বছরে এই দেশে ধারাবাহিক সাফল্য পেয়েছে মাত্র দুটি ক্লাব, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও আর্সেনাল। ভালো দুই কোচের সঙ্গেই গাঁটছড়া দুই দলের।
 ভাষান্তর: সোলায়মান পলাশ

No comments

Powered by Blogger.