কাপাসিয়ার জনসভায় খালেদা জিয়া-গুম-খুনের জন্য বিশেষ বাহিনী গড়েছে সরকার by তানভীর সোহেল ও মাসুদ রানা

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অভিযোগ করেছেন, সরকার বিএনপির দক্ষ সংগঠকদের টার্গেট করে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। এমনকি খুন-গুমও করছে। এ কাজের জন্য দলীয় ব্যক্তি, গোয়েন্দা সংস্থা ও র‌্যাব-পুলিশ দিয়ে বিশেষ বাহিনী গড়ে তুলেছে। র‌্যাব-পুলিশকে হত্যার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।


গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত বাহিনীকে সতর্ক করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এ সরকার শেষ সরকার নয়। তখন আপনাদের কে রক্ষা করবে? এ সরকার বিদায় নিলে এসব বাহিনীর কোনো সদস্যই রেহাই পাবে না। তাদেরকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।’
গতকাল শনিবার বিকেলে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার ঘাগটিয়াচালা এলাকায় ওয়েলফেয়ার ক্লাব মাঠে বিএনপি আয়োজিত এক জনসভায় খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান প্রমুখ।
বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘সরকারের এক মন্ত্রী বস্তা ভর্তি টাকাসহ ধরা পড়েছেন। ওই মন্ত্রীর দুর্নীতিকে আড়াল করতে তারা ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে।’ তিনি বলেন, দেশে এখন গুম ও খুনের রাজত্ব চলছে। সরকার বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের খুন ও গুম করে এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে আন্দোলন স্তব্ধ করতে চাইছে। তারা জানে না, জনগণের মাঝে যে আগুন জ্বলছে, তা নেভানো সম্ভব নয়। এ আগুনের মধ্য দিয়ে জনগণ বেরিয়ে এসে তাদের দাবি প্রতিষ্ঠিত করবে।
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, দেশকে বাঁচাতে হলে বর্তমান সরকারকে হটাতে হবে, আর তা করতে হবে ভোটের মাধ্যমে। এ জন্য প্রয়োজন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনে যাবে না। কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, অতীতে সন্ত্রাস, খুন ও দুর্নীতির কারণে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ২১ বছর প্রত্যাখ্যান করেছিল। এবার ক্ষমতা হারালে আওয়ামী লীগ ৪২ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না।
দুর্নীতি ফাঁসের ভয়ে মন্ত্রীদের বাদ দিচ্ছে না: বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় অনেক মন্ত্রীকে সরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীদের সরিয়ে দেওয়ার সাহস নেই বর্তমান সরকারের। এ জন্য দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে বাদ দেওয়া হয়নি। সরকারের দুর্নীতির কারণে সোহেল তাজ পদত্যাগ করলেও তিনি সব বলে দেবেন ভেবে তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হচ্ছে না। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, তাঁকে মন্ত্রী থেকে বাদ দিলে তিনি সব খবর বলে দেবেন। এরপর তাঁকে রেলমন্ত্রী থেকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হয়েছে। আবুল হোসেনকে অন্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতুর কাজ হচ্ছে না। হবেও না। এই দুর্নীতির সঙ্গে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা জড়িত।
সরকারপ্রধানের গোপন তথ্য ছিল সাগর-রুনির কাছে: বিরোধীদলীয় নেতা অভিযোগ করেন, দেশে কোনো মানুষ নিরাপদ নয়। সরকারের দুর্নীতি প্রকাশ পাওয়ার আশঙ্কায় আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে দেশের ১৪ জন সাংবাদিককে খুন করেছে। তারা সাগর-রুনিকেও খুন করেছে। অথচ এখনো খুনিরা ধরা পড়েনি। তিনি বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার পেছনে বিরাট রহস্য রয়েছে। সরকারপ্রধান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির গোপন তথ্য তাঁদের কাছে ছিল। এ জন্য তাঁদের হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগই খুনিদের দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
ইউনূস ও তাজউদ্দীনের পরিবারকে অসম্মান করছে: আওয়ামী লীগ দেশের মানুষকে সম্মান দিতে জানে না। তারা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রতিনিয়ত নানাভাবে অসম্মান করছে। তারা তাজউদ্দীন ও তাঁর পরিবারকে অসম্মান করেছে। তাই তাজউদ্দীনের ছেলে সোহেল তাজ প্রথমে মন্ত্রিসভা থেকে, পরে সংসদ থেকেও পদত্যাগের চিঠি জমা দিয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ অনেক ওয়াদা করেছিল, কিন্তু তা রক্ষা করেনি। তাই মানুষ আর তাদের বিশ্বাস করে না।
দুর্নীতির টাকার পাই পাই হিসাব দিতে হবে: খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই সরকারের ওপর দেশের মানুষের কোনো আস্থা নেই। বিদেশিদের সঙ্গেও সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভারতের অর্থমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, তাঁরা কোনো দলের সঙ্গে নয়, এ দেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চান।’ তিনি বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের অনেকে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। ব্যাংক করেছেন, শেয়ারবাজার থেকে লুট করেছেন। কুইক রেন্টালের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হচ্ছে। এর পাই পাই হিসাব দিতে হবে। এত সহজে কেউ ছাড়া পাবে না। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী অনেককে গালাগাল করেন, কিন্তু তাঁর সেক্টরের অবস্থাও ভালো নয়।

No comments

Powered by Blogger.