সব ধর্ষককে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করুন-খিলগাঁও বিভীষিকা

১৫ বছরের কিশোরীকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে ১০ নরপশু। খিলগাঁওয়ের পশ্চিম নন্দীপাড়ায় এক বাড়ির একটি ঘরে বড় বোনের সঙ্গে ভাড়া থাকত ওই কিশোরী। নরপশুদের হামলার মুখে ওই কিশোরীকে নিয়ে তার বড় বোন আশ্রয় নিয়েছিলেন বাড়ির তত্ত্বাবধায়কের ঘরে। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি।


তত্ত্বাবধায়কের সামনেই তাকে তুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ওই বাড়িতেই, অন্য এক ঘরে কিশোরীর ওপর চলে অমানুষিক বর্বরতা।
রোববারের প্রথম আলোর ২১ পৃষ্ঠায় এক প্রতিবেদনে ছাপা হয়েছে সেই বর্বরতার বিবরণ। পোশাক-কর্মী বড় বোনটি তাঁর ১৫ বছরের কিশোরী-বোনকে সঙ্গে নিয়ে ওই বাড়ির একটি ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে কোনো পুরুষ থাকে না বলে বখাটেরা বলে তাঁরা ‘খারাপ মেয়ে’। আর কী বিস্ময়, কী করুণ অসহায়ত্ব যে, বখাটে যুবকেরা বড় বোনকে আটকে রেখে ছোট বোনটিকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় নিজেদের ঘরে। তারপর কিশোরীর আর্তচিত্কার শোনা যায়। কিন্তু বখাটে যুবকদের ভয়ে কেউই মেয়েটির সাহায্যার্থে এগিয়ে যায়নি। অল্প কিছু সময় আর্তচিত্কারের পর আর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি।
নিশ্চয়ই তারপর নেমে এসেছিল এক ভয়াবহ নৈশব্দ। এমন নৈশব্দ ব্যঙ্গ করে রাষ্ট্র, সরকার, সমাজের সমস্ত নীতি-আদর্শকে। মানুষ হিসেবে, নারী হিসেবে, রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকার, স্বাভাবিক জীবন যাপন করার ন্যূনতম অধিকার যখন এভাবে ধূলিসাত্ হয়, তখন নির্বাক হতে হয়।
পুলিশের বর্ণনামতে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের ওই এলাকাগুলোয় মূলত নিম্নবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষের বাস, যেখানে মাদকদ্রব্যের অবৈধ ব্যবহার যথেষ্ট। নারী ধর্ষণ ও তাঁদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনা ওই এলাকায় অপেক্ষাকৃত বেশি। গত কয়েক বছরে সেখানে স্কুলছাত্রী ও পোশাকশিল্পের নারী-কর্মীদের ওপর নির্যাতনের বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। কর্তৃপক্ষ যেন ধরেই নিয়েছে, এলাকাটির জন্য এসবই স্বাভাবিক।
কিন্তু এভাবে চলতে পারে না। ধর্ষণের শিকার কিশোরীটি বাদী হয়ে ১০ ধর্ষক ও তাদের দুই সহযোগীসহ মোট ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেছে। এক ধর্ষককে গ্রেপ্তার এবং দুই সহযোগীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। আসামিদের একজন রাজীব খিলগাঁও থানা কৃষক লীগের সভাপতির ছেলে। সরকারি দল বা তার অঙ্গসংগঠনগুলোর সঙ্গে জড়িত লোকদের আইন প্রয়োগে গড়িমসি চলে। এ ক্ষেত্রে যেন তা না হয়। অবিলম্বে রাজীবসহ বাকি সব ধর্ষককে গ্রেপ্তার করা হোক। সেই সঙ্গে ধর্ষণের শিকার কিশোরী ও তার বোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।

No comments

Powered by Blogger.