মা- একদিন প্রতিদিন by একরামুল হক শামীম

মে মাসের দ্বিতীয় রোববার পালিত হয় মা দিবস হিসেবে। সেই হিসেবে এ বছর ১৩ এপ্রিল মা দিবস। মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা জানাতে পালিত হয় এই দিবস। মা দিবসের প্রচলন নিয়ে কয়েকটি গল্প রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, মা দিবস পালনের ধারণা প্রথম দেন মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ড।


১৮৬০ সালে জুলিয়া ওয়ার্ড এই প্রস্তাব দেন। যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের সময় জুলিয়া দেশাত্মবোধক গান লিখেছিলেন। গৃহযুদ্ধের সময় এক মায়ের সন্তান অন্য মায়ের সন্তানকে হত্যা করছিল। তা বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের সব মাকে একত্রিত করতে চেয়েছিলেন জুলিয়া। এ জন্যই তিনি মা দিবস পালনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই আহ্বান ব্যাপক সাড়া না ফেললেও জুলিয়া ওয়ার্ডের নিজ শহরে মা দিবস পালিত হয়। তবে আধুনিক ঘরানার মা দিবসের প্রবর্তন করেন আনা জার্ভিস নামে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার এক স্কুলশিক্ষিকা। ১৯০৭ সালের মে মাসের দ্বিতীয় রোববার ছিল তার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী। এই দিনটিকে মা দিবস হিসেবে পালন এবং সরকারিভাবে তা ঘোষণা করার জন্য বিভিন্ন জনের কাছে চিঠি লিখেন আনা। ১৯০৮ সালে ফিলাডেলফিয়া রাজ্যে মা দিবস পালিত হয়। ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হতে থাকে মা দিবস। আনা জার্ভিস মা দিবসের পক্ষে প্রচার চালিয়ে যান। এক সময় সফলতা আসে। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মা দিবসের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করেন।
বিশ্বের সব দেশে অবশ্য একই তারিখে মা দিবস পালন করা হয় না। প্রায় ৪৬টি দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রোববারে মা দিবস পালিত হয়। এর বাইরে অনেক দেশে ৮ মার্চ মা দিবস পালন করা হয়। এর মধ্যে আছে আফগানিস্তান, বুলগেরিয়া, রাশিয়া, মরক্কো, আর্মেনিয়া। কিছু দেশে মে মাসের শেষ রোববারে মা দিবস পালিত হয়। এসব দেশের মধ্যে আছে ফ্রান্স, সুইডেন, তিউনিসিয়া, মরিশাস।
তবে মা দিবস উদযাপন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কেউ কেউ বলে থাকেন, করপোরেট বিষয়াবলিকে তুলে ধরে এই দিবস। উদযাপনের জনপ্রিয়তার দিক থেকে বড়দিন ও ভালোবাসা দিবসের পরেই মা দিবস। ১৯৮০ সাল থেকে মা দিবস উপলক্ষে গিফট বক্স প্রদান শুরু হয়। এই দিনটিকে ঘিরে কার্ড বিক্রেতারা নানা ধরনের অফার নিয়ে হাজির হয়। যুক্তরাষ্ট্রের একটি জরিপে দেখা গেছে, যেসব মা সন্তানদের থেকে আলাদা থাকেন, তাদের জন্য মা দিবস জরুরি। যেসব মা বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকেন, তারা এই একটি দিন উপলক্ষে প্রিয় সন্তানদের কাছাকাছি পান। আমাদের দেশেও ঘটা করেই মা দিবস পালন করা হয়। এ দিনে মায়েদের কার্ড ও ফুল দেওয়া হয়। মা দিবসের শুভেচ্ছাও জানানো হয়। তার পরেও আমরা বাংলাদেশিরা ভাবি, মা দিবসটা ঠিক আমাদের জন্য নয়। আমাদের মায়েরা আমাদের অস্তিত্বের খুব কাছাকাছি। তাদের জন্য প্রতিদিনই অনুভূতি কাজ করে। আলাদা দিনের কোনো দরকার নেই। তার পরেও দিবস একটা ডেভেলপ করেছে। মা দিবস বলে একটা দিন প্রচলিত আছে। ইন্টারনেটে মাদার্স ডে সার্চ দিলে অনেক অনেক তথ্য চলে আসে। হয়তো অধিকাংশ রেজাল্টই করপোরেট কিছু বিষয়কে বিজ্ঞাপিত করে। তার পরেও মায়ের জন্য একটা দিন!
মায়েদের জন্য জরুরি সন্তানদের সাহচর্য। মা দিবস একদিন উদযাপনের চেয়ে জরুরি মায়ের জন্য সব সময়ের ভালোবাসা। শেষ বয়সে যেন মাকে স্থান নিতে না হয় কোনো বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে।

No comments

Powered by Blogger.