চারদিক-অংশ নিন ‘বাংলা ম্যারাথনে’ by সজল খালেদ

প্রায় সবার ধারণা যে একটানা ৪০ কিলোমিটার না দৌড়ালে বুঝি তা ম্যারাথন হয় না। ধারণাটি ঠিক নয়। অলিম্পিকের নিয়ম অনুযায়ী আয়োজনে কেউ ৪২ দশমিক ১৯৫ কিলোমিটার পথ সর্বোচ্চ ৮-১০ ঘণ্টায় কোনো অতিরিক্ত সাহায্য না নিয়ে দৌড়ে, লাফিয়ে, হেঁটে, হামাগুড়ি দিয়ে অথবা গড়িয়ে, একভাবে গেলেই তাকে ম্যারাথন সম্পন্নকারী বলে মেনে নেওয়া হয়।


আর ম্যারাথনের অর্ধেক পথ ২১ দশমিক এক কিলোমিটার দূরত্বকে বলা হয় আধা ম্যারাথন (যদিও আধা ম্যারাথন কোনো অলিম্পিক ইভেন্ট নয়)। কাজেই কখনোই ভাববেন না যে আপনাকে দিয়ে ম্যারাথন হবে না। তবে হ্যাঁ, যদি বিশ্বমানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চান, তাহলে আপনাকে তার জন্য নিয়মিত চর্চা করতে হবে।
বেশ কয়েক শ বছর আগে ফেডিফেডাস নামের একজন গ্রিক সৈনিক যুদ্ধজয়ের সংবাদ জানাতে ম্যারাথন শহর থেকে এথেন্স শহরে দৌড়ে এসে ক্লান্তিতে মৃত্যুবরণ করেন। ম্যারাথন থেকে এথেন্সের দূরত্ব হিসাব করে ১৮৯৬ সাল থেকেই অলিম্পিক গেমসের অন্যতম ইভেন্ট হিসেবে স্থান করে নেয় ম্যারাথন। এখন বিশ্বের প্রায় প্রতিটি বড় শহরেই আন্তর্জাতিকমানের বার্ষিক ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়।
পৃথিবীর প্রায় সব দেশের বড় বড় শহরের নামে নিয়মিত ম্যারাথন আয়োজন করা হয়। এমনকি ম্যারাথন আয়োজন করা হয় পাহাড়, জঙ্গল, বরফ, বৃষ্টি, কাদামাটি, গরমসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যে। সব দেশেই কিছু ক্ষ্যাপাটে মানুষ আছেন, যাঁরা পৃথিবী ঘুরে ঘুরে নিয়মিত এসব ম্যারাথনে অংশ নেন। এমন দিন খুব বেশি দূরে নয়, যখন ঢাকা ম্যারাথনসহ আমাদের সব ম্যারাথনে কয়েক হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করবেন এবং বিদেশ থেকে অনেক মানুষ আসবেন শুধু আমাদের দেশের ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করতে। বিশ্বাস হয় না? তাকিয়ে দেখুন দিল্লি আর কাঠমান্ডু ম্যারাথনের দিকে!
২০০৭ সাল থেকে ‘বাংলা ম্যারাথন’ নামে বাংলাদেশে নিয়মিত ম্যারাথন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে ‘প্রশিক্ষণকেন্দ্র এক্সট্রিমিস্ট’। এ বছর স্বাধীনতা দিবসে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ রোডে আবার আয়োজিত হতে যাচ্ছে ‘বাংলা ম্যারাথন ২০১০’।
পৃথিবীর দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকতের পাড় দিয়ে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ রোডের সমকক্ষ কোনো জায়গা এ দেশে পাওয়াই যায় না। পিচঢালা মেরিন ড্রাইভ রোডে ম্যারাথন পরিবেশের বিন্দুমাত্র ক্ষতি করে না। একপাশের জীবন্ত সবুজ পাহাড়, অন্যদিকে দুহাত বাড়ানো শান্তিময় নীল সমুদ্র ম্যারাথনের প্রচণ্ড চাপকে সহনীয় করে দেয়। দীর্ঘ পরিশ্রমে সবাই কোনো না কোনো জায়গায় ভেঙে পড়ে। এই হাল ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারটি কিন্তু পুরোটাই মানসিক। চৈত্রের গরম যদি আপনাকে কাবু করতে চায়, পাশের সমুদ্রে একটু গা-মাথা ভিজিয়ে এলে কেউ আপনাকে কথা শোনাবে না। প্রতি তিন কিলোমিটার পর পর আমাদের স্বেচ্ছাসেবকেরা আপনার জন্য পানি আর হাল্কা নাশতা নিয়ে অপেক্ষা করবে। অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি, সাত থেকে সত্তর, বয়স কাউকে দমিয়ে রাখতে পারে না।
ভোর ছয়টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের উপস্থিতিতে শুরু হওয়া বাংলা ম্যারাথন শেষ হবে বিকেল চারটায়। ম্যারাথন শেষে নিয়ম মেনে সমাপ্তকারী প্রতিযোগীদের বিশেষ বাংলা ম্যারাথন পদক এবং সনদপত্র দেওয়া হবে যা একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি চ্যানেল সরাসরি সম্প্র্রচার করবে। নারী-পুরুষ উভয় বিভাগের স্থান অর্জনকারীর জন্য থাকবে আকর্ষণীয় পুরস্কার। আর ম্যারাথনে প্রথম স্থান অর্জনকারী নারী-পুরুষ প্রত্যেকে পাবেন নগদ ৫০ হাজার করে টাকা। আধা ম্যারাথনে প্রথম স্থান অর্জনকারী নারী-পুরুষের জন্যও রয়েছে নগদ অর্থ পুরস্কার। ম্যারাথন শেষে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীদের অংশগ্রহণে চমত্কার একটি কনসার্ট এবং জমকালো আতশবাজি অবশ্যই আপনার ম্যারাথন ক্লান্তি দূর করে দেবে।
বাংলা ম্যারাথনে অথবা আধা ম্যারাথনে যতজন ইচ্ছা নারী-পুরুষ প্রতিযোগী রেজিস্ট্রেশন করে নিজ দায়িত্বে অংশ নিতে পারবেন। তবে প্রথম আগ্রহী ১০০ জন প্রতিযোগী ২৫ ও ২৬ মার্চ কক্সবাজারে আমাদের সঙ্গে হইচই করে থাকতে পারবেন। রেজিস্ট্রেশন করতে হবে ২৩ মার্চের মধ্যে অথবা তাত্ক্ষণিকভাবে ২৫ মার্চ কক্সবাজারের মোটেল লাবণীতে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ছয়টা পর্যন্ত। রেজিস্ট্রেশন ফি ৫০০ টাকা (নিজ দায়িত্বে থাকা খাওয়া) এবং ২৫০০ টাকা (ম্যারাথনসহ দুদিন থাকা-খাওয়া), কক্সবাজারে পৌঁছানোর দায়িত্ব কিন্তু আপনার। সব প্রতিযোগীকে ২৫ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে রিপোর্ট করতে হবে কক্সবাজারের মোটেল লাবণীতে। রেজিস্ট্রেশন ফরম নেওয়া ও জমা দেওয়া যাবে বেইলি রোডের সুইস বেকারি এবং দেশব্যাপী আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, যশোর, বগুড়া ও রাজশাহীর বিভিন্ন শাখায়।
দৌড়ে ম্যারাথনের প্রস্তুতির জন্য সপ্তাহে তিন দিন ২০ কিলোমিটার করে দৌড় চর্চা করে ধীরে ধীরে সময় কমিয়ে আনুন এবং ম্যারাথনের এক সপ্তাহ আগে সব রকম দৌড় চর্চা বন্ধ করে দিন। আর হেঁটে ম্যারাথন করতে চাইলে সপ্তাহে দুদিন একটানা আট ঘণ্টা করে দ্রুত হাঁটা চর্চা করুন। নিয়মিত ম্যারাথন এবং অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের প্রস্তুতির জন্য যোগাযোগ করে নির্দ্বিধায় চলে আসতে পারেন রমনা পার্কের শিমুল ছাউনিতে, প্রশিক্ষণকেন্দ্র এক্সট্রিমিস্টে।

No comments

Powered by Blogger.