প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অকার্যকর থাকার তদন্ত দরকার-নার্স-সংকট

দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় নার্স-সংকট নতুন খবর নয়। সরকারের এটা জানা বলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের ১৬ জুন সাত হাজার নার্স নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এখন তদন্ত দরকার এর বাস্তবায়ন হলো না কেন। অসাধু আমলাতন্ত্র যদি সরকার ডোবায়, তাহলে তার নিরাময় রাজনৈতিক সরকারকেই করতে হবে, না পারলে তার ষোলোআনা দায় নিতে হবে।


নার্সদের দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা দেওয়ার জন্য সরকারের সাধুবাদ প্রাপ্য। কিন্তু এখন সংশ্লিষ্ট লাল ফিতাওয়ালারা খোঁড়া অজুহাত তুলছেন। তাঁরা বলতে চাইছেন যে নার্স নিয়োগ এখন ওই কারণে সরকারি কর্মকমিশনের ওপর বর্তেছে। আর সেখানেই বেধেছে গোল। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং সরকারি কর্মকমিশনের মধ্যে চার দফা চিঠি চালাচালি হয়েছে। একটা তদন্ত দরকার শুধু এই কারণে যে এই চালাচালির মধ্যে চালবাজি কতটা আছে এবং তার জন্য কে কীভাবে দায়ী।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মজিবুর রহমান ফকিরও ২০১০ সালের ১০ এপ্রিল দুই মাসের মধ্যে ৩২ হাজার চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগের নির্দিষ্ট ঘোষণা দিয়েছিলেন। সরকারি প্রাক্কলন অনুযায়ী, দুই হাজার ৬৬৫ জন মানুষের জন্য একটি শয্যা, তিন হাজার ১২ জন রোগীর জন্য একজন চিকিৎসক এবং ছয় হাজার ৩৪২ জন রোগীর জন্য একজন নার্স রয়েছে। নার্স ও রোগীর অনুপাতে আমরা ভারতের চেয়ে ছয় গুণ পিছিয়ে। সেখানে এক হাজার ১০০ রোগীর জন্য একজন নার্স।
গতকাল ছিল বিশ্ব সেবা দিবস। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মদিনের সঙ্গে মিলিয়ে এই দিবসটি ১৮৪৬ সালে প্রথম পালিত হয়েছিল জার্মানিতে। গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত ডব্লিউএইচওর মানবসম্পদ প্রতিবেদন বলেছে, বিশ্বব্যাপী ডব্লিউএইচওর মোট পেশাদারি লোকবলের আড়াই শতাংশের বেশি পুষ্টিবিদ থাকলেও মাত্র দশমিক ৭ ভাগ নার্স। আমরা আশা করব, ডব্লিউএইচওর অপনোদন ঘটাবে। ডব্লিউএইচও মনে করে, নার্স ও চিকিৎসকের অনুপাত ৪: ১ হওয়া কাম্য।
বাংলাদেশে হাসপাতালের প্রতি আটটি বেডের জন্য একজন নার্স রয়েছে। বহু সরকারি হাসপাতালে অর্ধেক পদ খালি পড়ে থাকলেও কারও কোনো শিরঃপীড়া দেখা যায় না।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন কিংবা এই খাতের কোনো নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় পারতপক্ষে নার্সদের দূরে সরিয়ে রাখা হয়। এই মানসিকতা বদলাতে হবে। নার্সদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কিংবা বিশেষজ্ঞ জ্ঞান অর্জনের জন্য দেশে-বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রদানের বিষয়টিও আলোচনার বাইরে। অথচ তাঁরা চিকিৎসা পেশার মেরুদণ্ড এবং আর্তমানবতার জন্য আশার প্রতীক।

No comments

Powered by Blogger.