অভিমত ভিন্নমত

ঘড়ির কাঁটা: সরকারকে ধন্যবাদ অবশেষে ঘড়ির কাঁটা পরিবর্তনের সিদ্ধান্তটি সরকার বাতিল করেছে। সরকারকে অনেক ধন্যবাদ। ঘড়ির কাঁটা পরিবর্তন করলে দেশের বা জনগণের ক্ষতি হতো, সেই ক্ষতি এড়াতেই সরকার তা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এল এবং সে কারণেই সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি—বিষয়টি এ রকম নয়।


বরং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, গ্রীষ্ম মৌসুমে যখন দিবাভাগ বড় এবং রাত ছোট, তখন ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে আনলে বাস্তবিক কিছু সুবিধাই পাওয়া যায়। খুব বেশি না হলেও কিছু বিদ্যুতের সাশ্রয় অবশ্যই ঘটে। কিন্তু বহু যুগের অভ্যাসবশত বাংলাদেশের অনেক মানুষ ঘড়ির কাঁটাকে যেন এক অপরিবর্তনীয় বিষয় বলে মনে করে, এর পরিবর্তন চায় না—এমন অভিজ্ঞতাই দেখা গেল গত বছর, যখন প্রথমবারের মতো এই পরিবর্তনটি আনা হয়েছিল। সরকার এটি করেছিল ভালো উদ্দেশ্যেই। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ তা গ্রহণ করেনি। বিশেষ সমস্যা হয়েছিল ঘড়ির কাঁটা আবার পিছিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি সিদ্ধান্তে বিলম্ব করায়। যাই হোক, পূর্বনির্ধারিত সময়ের পরে হলেও সরকার ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা পিছিয়ে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ায় জটিলতার অবসান ঘটেছিল।
এ বছর আবার এপ্রিলের শুরু থেকে ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে আনার ঘোষণা প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা মহলে প্রতিবাদ উঠল। স্কুলগামী শিশুদের অভিভাবক, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর্মরত মানুষসহ নানা মহল থেকে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা হলো। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও এর বিরুদ্ধে অনেক লেখালেখি চলল। এসবের মধ্য দিয়ে একটি বিষয় ফুটে ওঠে। সেটা হলো: আমরা সহজে কিছু বদল করতে চাই না, চিরাচরিত অভ্যাসের ওপর আমাদের নির্ভরতা প্রায় অনড়। ইউরোপের অনেক দেশে বছরে দুবার একদমই বিনা আওয়াজে, অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে যে কাজটি সব মানুষ করে থাকে (ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে আনা ও পিছিয়ে দেওয়া), আমাদের দেশে সেটি নিয়ে এত জটিলতা, এত ঝামেলার কারণ হলো আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রবণতার ওই অনড়তা। আমরা যেন ধরেই নিয়েছি, ঘড়ির কাঁটা স্থির করে দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা; এর নড়চড় করা চলবে না।
এ রকমই যদি হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমত, তাহলে আর কী করা! গণতন্ত্রে জনমতের চেয়ে বড় কিছু নেই। সরকারকে ধন্যবাদ এ জন্য যে, জনমতকে উপেক্ষা না করে বরং জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ঘড়ির কাঁটা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত থেকে তারা সরে এসেছে। জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার গুরুত্ব অনেক। নির্বাচনে প্রচুর ভোট পেয়ে যাঁরা সরকার গঠন করেন, তাঁরা সাধারণত মনে করেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ম্যান্ডেট তাঁরা পেয়ে গেছেন, এখন নিজেদের ইচ্ছামতো যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, নতুন করে জনমত যাচাই করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আসলে তা ঠিক নয়। সরকারের বড় বড় সিদ্ধান্তের প্রতি অধিকাংশ মানুষের সমর্থন আছে কি নেই, তা যাচাই করা এবং সে অনুযায়ী বিচার-বিবেচনা করে চলাই একটি গণতান্ত্রিক সরকারের সঠিক আচরণ। অনেক সময় সরকারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগুলো এ রকম রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচার করে যে, সরকার সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে, একবার এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, পরে তার উল্টো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এসব কথা বলা হয় রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে। সে জন্য সরকারও নিজের নেওয়া সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অনড় থাকতে চায়, ব্যাপক প্রতিবাদ সত্ত্বেও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারতপক্ষে চায় না।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ঘড়ির কাঁটা পরিবর্তনের বিষয়ে রাজনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বা সরকারের মুখরক্ষার বিষয়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে জনমতকে। এটা খুব ভালো একটা লক্ষণ। সরকারের পথচলা অনেক সহজ, জটিলতামুক্ত ও গণমুখী হয়ে উঠতে পারে জনমতকে সঙ্গে নিয়ে চলার এই নীতি অনুসরণ করলে। সোমবারের মন্ত্রিসভার একই বৈঠকে এ রকম আরও একটি ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন করে বৈদ্যুতিক খুঁটি কেনা ও পোঁতা নিষিদ্ধ করেছেন। আগের দিন প্রথম আলোয় এ সম্পর্কিত একটি সচিত্র প্রতিবেদনের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকৃষ্ট হওয়ার সুফল এটি। ওই খবরে প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর কাছে কৈয়ফিতও চেয়েছেন। সংবাদমাধ্যমে জনমতেরই প্রতিফলন ঘটে। জনমতকে গুরুত্ব দিলে, শ্রদ্ধা করলে সরকারের ভুলভ্রান্তি কম হবে; সব ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত মাত্রায় সাফল্য অর্জন না করলেও জনগণের মনে হবে, সরকার অন্ততপক্ষে তাদের কথা শোনার চেষ্টা করছে। এই নীতিই হোক সরকারের বাকি মেয়াদের পাথেয়।
আহমেদ তারিক, শ্যামলী, ঢাকা।

বেকারদের সঙ্গে প্রতারণা?
পড়াশোনা শেষ করে চাকরি নামের সোনার হরিণের পেছনে ঘুরতে হচ্ছে, আর আত্মীয়স্বজনকে বলতে হচ্ছে, ‘ভাই, বেকার আছি। একটা চাকরি দেন না।’ এই কথাটি কতজনকে যে বলা হয় তার আর হিসাব নেই। এই বেকারদের কাছ থেকেও টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল করে কিছু প্রতিষ্ঠান।
কিছু ব্যাংক, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ কিছু প্রতিষ্ঠান দু-একটি পদে লোক নিয়োগের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে। সে জন্য আবেদনপত্রের সঙ্গে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার জমা দিতে বলে। কিছু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অ্যাডহক ভিত্তিতে কর্মরতদের চাকরি স্থায়ী করার জন্যও বিজ্ঞাপন দেয়। কিছু প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আর পরীক্ষার জন্য ডাকে না। অনেক প্রতিষ্ঠান টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়। তাদের অফিস আর খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেক প্রতিষ্ঠান জিপিও বক্সের নম্বর দিয়ে আবেদনপত্র আহ্বান করে।
এ ছাড়া অনেকভাবে টাকা-পয়সা খরচ হয়। সকল সনদপত্রের ফটোকপি করতে হয়, ছবি তুলতে হয়, কুরিয়ার বা ডাকযোগে আবেদনপত্র পাঠাতে টাকা খরচ হয়। এত কষ্টের পরও অনেক সময় ইন্টারভিউ কার্ড পাওয়া যায় না। আমার প্রশ্ন হলো, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান কেন আবেদনপত্রের সঙ্গে ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার আহ্বান করে। এটা কি তাদের ব্যবসা? অনেক বেকার ইন্টারভিউ কার্ড পেয়ে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ঢাকা শহরে ইন্টাভিউ দিতে আসে নিজের টাকা খরচ করে।
বেকারদের নিয়ে আরেকটি প্রতারণার ফাঁদ হলো শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা নেওয়া হয় যোগ্যতাসম্পন্ন লোক যাতে শিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পান। লাখ লাখ বেকার লোক আবেদন করেন। সরকার এই পরীক্ষার জন্যও বেকারদের কাছ থেকে ব্যাংক ড্রাফট নেয়। এ পরীক্ষায় পাস করার পরও কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য আবার ইন্টারভিউ দিতে হয়।
টাকা হাতিয়ে নেওয়ার আরেকটি কৌশল হলো নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করার পর যে সনদপত্র দেওয়া হয় তার মেয়াদ পাঁচ বছর। এই সময়ের মধ্যে কেউ কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ না পেলে সনদপত্রের কোনো গুরুত্ব থাকবে না। তাঁকে আবার নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে হবে। এ নিয়মটা বাতিল করুন। সরকারের কাছে অনুরোধ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শূন্যপদের তালিকা সংগ্রহ করে নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করা লোকদের চাকরির ব্যবস্থা করা হোক।
বিভিন্ন দেশে বেকারদের সরকার ভাতা দেয় আর আমাদের দেশে নতুন নতুন কৌশলের মাধ্যমে বেকারদের কাছ থেকে সরকারি ও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান টাকা হাতিয়ে নেয়। বেকারদের বেকারত্ব দূর করার জন্য সুন্দর পরিকল্পনা গ্রহণ করার জন্য সরকারে কাছে আকুল আবেদন করছি।
মো. সোয়েব মেজবাহউদ্দিন
মাস্টার কটেজ, লালমোহন, ভোলা।
soyeb4@yahoo.com

বিদেশি শ্রমবাজারে সংকট
বাংলাদেশের শ্রমবাজারের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি বলে প্রচুরসংখ্যক মানুষ জীবিকার তাগিদে বিদেশে যায়। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কুয়েত, ওমান ও সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য দেশে এ দেশের অনেক মানুষ কর্মরত। কয়েক মাস ধরে এসব দেশে শ্রমিক ছাঁটাই চলছে, নতুন শ্রমিক নিয়োগও কমে গেছে। বৈশ্বিক মন্দার পাশাপাশি ওসব দেশের স্থানীয় লোকদের কর্মসংস্থান বাড়ানোর ফলেও বিদেশি শ্রমিক ছাঁটাই চলছে। এক যুগ আগে উপসাগরীয় দেশগুলো সিদ্ধান্ত নেয় একটি দেশে বিদেশি শ্রমিকের মোট সংখ্যা সে দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের বেশি হবে না। এবং কোনো একটি দেশ থেকে আসা শ্রমিকের সংখ্যা মোট বিদেশি শ্রমিকের ১০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। ২০১৩ সালের মধ্যে উপসাগরীয় দেশগুলো এই লক্ষ্য অর্জনের সময়সীমা নির্ধারণ করে। এই নীতি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ারও অন্যতম ফলাফল সেসব দেশ থেকে বিদেশি শ্রমিকদের ছাঁটাই করা। উল্লেখ্য, ওই সব দেশে বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ওই দেশগুলোর নির্ধারিত সীমা ছাড়িয়ে গেছে। অতিরিক্ত ব্যক্তিরাই এখন চাকরি হারিয়ে স্বদেশে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছে।
বিদেশে কর্মসংস্থান থেকে জাতি উপকৃত হয়। বেকার সমস্যা কমে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। এখন বৈদেশিক কর্মসংস্থান সংকুচিত হলে জাতীয় অর্থনীতিতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। এটা ঠেকাতে অতি দ্রুত সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও কুয়েতে প্রতিনিধি পাঠাতে হবে। এসব দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসকেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। জনশক্তি রপ্তানির নতুন নতুন বাজার খুঁজতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যখন আইন করেই বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ কমিয়ে দিচ্ছে, তখন আমাদের শ্রমিক পাঠানোর জন্য বাজার খুঁজতে হবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে। এ কাজে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিশেষ করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বিদেশে পাঠানোর আগে শ্রমিকদের ভাষা ও পেশাগত প্রশিক্ষণসহ সেসব দেশের আইনকানুন, রীতিনীতি, সামাজিক প্রথা, মূল্যবোধ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন।
কাজী শেখ ফরিদ
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ময়মনসিংহ।

বিশ্ববিদ্যালয়টি খুলে দিন
১৩ মার্চ প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ছাত্রলীগের আন্দোলনে তিন মাস বন্ধ, ভর্তি পরীক্ষাও হচ্ছে না’ প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী হিসেবে এ বিষয়ে কিছু লেখার জন্য কলম হাতে তুলে নিয়েছি।
আমাদের ক্যাম্পাস আজ ছাত্রলীগ নামধারী কিছু শিক্ষার্থীর হাতে জিম্মি। তারা আদৌ ছাত্রলীগের কর্মী কি না সে বিষয়টি আসলেই বিতর্কিত। কারণ, তাদের কাউকেই এর আগে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতায় আসার পর এরা মাথাচাড়া দেয় এবং ব্যক্তিগত স্বার্থোদ্ধারের লক্ষ্যে ছাত্রলীগের ব্যানার ব্যবহার করে। তাদের ‘উপাচার্য হঠাও’ আন্দোলনটি উদ্দেশ্যমূলক এবং তাদের ২১ দফা দাবির বেশির ভাগই অযৌক্তিক। ২১ দফা দাবি নিয়ে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার পর দাবি মেনে নেওয়ার সময় শেষ হওয়ার আগেই তারা আন্দোলনে নামে। তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে, চাকরি ও অন্যান্য সুবিধার লোভ দেখিয়ে এবং অনেক সময় জোরপূর্বক এ আন্দোলনে ব্যবহার করে। আন্দোলনে ইন্ধনদানকারী ছাত্রলীগ নামধারী নেতাদের সবাই স্নাতক শেষ করে স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত। মূল ভুক্তভোগী হচ্ছে স্নাতক অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। একে তাঁরা তিন মাসের সেশনজটের শিকার, তার ওপর এবারের বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে না। এ ছাড়া শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভারতে ট্রেনিং কোর্সটিও এখন হুমকির মুখে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা সবাই অবিলম্বে ক্যাম্পাস খোলার পক্ষে। কিন্তু ছাত্রলীগ নামধারী ২০-২২ জন শিক্ষার্থী এখনো তাদের ব্যক্তি স্বার্থোদ্ধারে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভুক্তভোগী হওয়ার বিষয়টি ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের কেউই গুরুত্ব দিচ্ছে না।
এ প্রতিক্রিয়া লিখতে গিয়ে নিজেদের নাম প্রকাশেও আমরা ভয় পাচ্ছি। কারণ ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং সরকার কাউকেই নিরাপদ বলে মনে হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের আকুল আবেদন, আর নির্বিকার না থেকে আমাদের দিকে তাকান। তিন মাসের সেশনজটে আমরা আমাদের স্বপ্নগুলো হারাতে বসেছি। দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা।

বৈসাবি উৎসবে ছুটি
পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের প্রধান উৎসবগুলো হলো বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক। পুরোনো বছরের শেষ দিনটিকে মূল বিজু, তার আগের দিনকে ফুল বিজু এবং নতুন বছরের প্রথম দিনকে গোজ্যাপোজ্যা বিজু বলা হয়।
ব্রিটিশ আমলে বিজু উৎসব উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এক মাস ছুটি থাকত। তাই সে ছুটিকে বিজু বন্ধ বা বিজু উৎসব উপলক্ষে ছুটি বলা হতো।
পাকিস্তান হওয়ার পর সেটা কমিয়ে এক মাসের রমজানের ছুটি অর্থাৎ পবিত্র রোজা উপলক্ষে এক মাসের ছুটি চালু করা হয়। এ ছাড়া ব্রিটিশ আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামে ডেপুটি কমিশনারের অফিস, কোর্ট-কাছারি এবং অন্যান্য অফিস ১০ দিন বন্ধ থাকত। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের বৈসুক, সাংগ্রাই, বিজুকে কেন্দ্র করে অনন্ত ১০ দিন ছুটি ঘোষণা করা প্রয়োজন।
পাটটুরু টুরু চাঙমা
patturu969¦yahoo.com

স্বদেশপ্রেম ও রাজনীতি
১০ মার্চ প্রথম আলোয় ‘সাপ্তাহিক হালচাল’ কলামে আব্দুল কাইয়ুম সাহেবের লেখায় রাজনীতি সম্পর্কে একটি পর্যবেক্ষণ ছিল চমত্কার: ‘রাজনীতি যে এক ধরনের শিল্পকলা, মূর্ত রূপে সুন্দরের প্রকাশ ঘটানো, ক্ষমতা না থাকলে যে রাজনীতি চলে না। এ ব্যাপারে আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা সম্ভবত উদাসীন।’
আমার সাধারণ চিন্তায় রাজনীতি বলতে আমি যা বুঝি তা হলো পিছিয়ে পড়া সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা, সে জন্য সংগ্রাম করা। অন্যের উপকারে নিঃস্বার্থভাবে আত্মনিয়োগই হচ্ছে রাজনীতি। কিন্তু বর্তমানে অনেক রাজনীতিবিদের মধ্যে ত্যাগের বদলে ভোগের প্রবণতাই বেশি। এবং নিজের কল্যাণের স্বার্থেই তাঁরা ক্ষমতারধরদের গুণকীর্তনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। আমার আম্মা প্রায়ই বলেন, ষাট ও সত্তরের দশকের রাজনীতিকেরা রাজনৈতিক দলের মূল আদর্শ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংগ্রাম করতেন। আমার পিতা কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরীর বক্তব্য শোনার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। ‘একদিন মুক্তিযুদ্ধের মূল্যায়ন হবে, মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন হবে।’ সালটা ছিল ১৯৯০, ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর তাঁর স্বপ্নের কথাগুলো বর্তমান প্রেক্ষাপটে কাছ থেকে দেখতে পাব ভাবতেই অবাক লাগে। ‘সপ্তাহের হালচাল’ কলামে লেখক আব্দুল কাইয়ুম জাতীয় সংসদের নেতাদের বক্তব্য সম্পর্কে বাস্তব চিত্রই তুলে ধরেছেন। এখানে অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের চর্চার ক্ষেত্রটি এত ক্ষীণ যে তা আমাদের হতাশ করে।
রাস্তায় বের হলেই যানজটের মধ্যে বসে দেখতে পাই বড় বড় বিলবোর্ড, ব্যানার এবং তোরণ। এগুলোর লেখা পড়লে বোঝা যায়, দুঃখ বা আনন্দ প্রকাশ—উদ্দেশ্য যা-ই হোক না কেন, বড় উদ্দেশ্য নিজের চেহারার পরিচিতি। এ যেন বিজ্ঞাপনের এক ‘মহারাজনীতি’। কিন্তু সত্য কথা হলো, যাঁরা চেহারার রাজনীতি করার জন্য এ ধরনের ব্যয়বহুল বিলবোর্ড, ব্যানার, তোরণ তৈরি করেন, তাঁদের নিয়ে সংশয় থাকে সাধারণ মানুষের। কারণ, রাজনীতি সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য, নিজের উন্নয়নের জন্য নয়।
কেয়া চৌধুরী, হবিগঞ্জ।
kchodhowry@gmail.com

প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির সমস্যা
আমার ছয় বছরের নাতনি এবার প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য পরীক্ষার্থী ছিল। এ কারণে ঢাকা শহরের অনেক নামীদামি স্কুলের ভর্তি-সংক্রান্ত আধুনিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হলো।
ক. বয়সের সঙ্গে সংগতি রেখে মেধার ধারাবাহিক বিকাশের মাধ্যমে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ ও মনোবিজ্ঞানীদের দিয়ে কারিকুলাম, সিলেবাস ও পাঠ্যবই প্রস্তুত করা হয়। এ কাজে সরকারের বিপুল অর্থও ব্যয় হয়। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষাগুলো সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে তৃতীয় শ্রেণীর বা কোনো কোনো সময় আরও ওপরের শ্রেণীর সিলেবাস থেকে প্রথম শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন করা হচ্ছে (ভিকারুননিসা স্কুলের এ বছরের প্রশ্নপত্র)। শিশুদের ওপর কেন এ চাপ? এটা কি নৈতিক? এটা এক ধরনের অপরাধ নয় কি? নাকি কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যোগসাজশ—সেখানে যেতেই হবে?
খ. পরীক্ষার দিন লক্ষ করলাম, পরীক্ষার হলের প্রবেশপথে পরীক্ষার্থীর লাইনের চেয়ে কাঁঠালগাছের কাছে, দোলনার কাছে, বিভিন্ন জায়গায়, কোচিং সেন্টারগুলোর পরীক্ষার্থীর লাইন অনেক বড়। জানতে পারলাম, পরীক্ষার হলে কোনো আসনব্যবস্থা নেই। কোচিং সেন্টারের পরীক্ষার্থীরা যাতে একই কক্ষে বসতে পারে এবং নির্দিষ্ট ইনভিজিলেটর পেতে পারে, হয়তো বা তা নিশ্চিত করার জন্যই এ অভিনব পদ্ধতি। কোনো কোনো কোচিং সেন্টার তো ছাত্রদের একই কক্ষে বসানোর জন্য একসঙ্গে ফরম কেনে ও জমা দেয়।
গ. মণিপুর, আইডিয়াল ও ভিকারুননিসা স্কুলের মতো নামীদামি স্কুলে ভর্তি-বাণিজ্যের কথা আমরা ব্যাপক ও গণহারে শুনতে পাচ্ছি। এক স্কুলে তো নোটিশ দিয়ে ৫০ হাজার টাকা ডোনেশন চাওয়া হয়েছে। যুক্তি দেখানো হয়েছে বিল্ডিং না বানালে ছাত্ররা কোথায় বসবে? সুতরাং টাকা দরকার। আমরা তো কারও ওপর জোর করছি না। অতীতে অভিভাবকদের কাছ থেকে কোনো প্রকার ডোনেশন না দিয়েই এ স্কুলটি বর্তমানে দেশের সেরা অবস্থানে এসে থাকলে এখন ডোনেশন লাগছে কেন? এত বিল্ডিং, এত ছাত্র ভর্তিই বা কেন? অন্য এলাকায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে অসুবিধা কোথায়? ইব্রাহিমপুরে মণিপুর স্কুল, বনশ্রী ও আজিমপুরে ভিকারুননিসা ও বনশ্রীতে আইডিয়াল স্কুলের শাখা কেন? এটা কি ব্যবসা? নাকি শাখা স্কুল খুলে ঢাকা শহরের ভর্তি সমস্যার সমাধানের একক এজেন্সি নেওয়া?
ঘ. পরীক্ষার দিন প্রত্যক্ষদর্শীরা লক্ষ করেছে, ভিকারুননিসা স্কুলের চত্বর ও স্কুলসংলগ্ন রাস্তাগুলো বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের তিন-চার কালারের পোস্টার ও লিফলেটে ছেয়ে ছিল। এক-দেড় ইঞ্চি প্রচারপত্রের ওপর দিয়ে মানুষ জুতা পায়ে চলাচল করেছে। লাখ লাখ টাকার খেলা, অপচয় কিসের লোভে? কিসের জন্য কোচিং সেন্টারগুলো এত টাকা খরচ করতে সাহস পায়? অথচ হলিক্রস স্কুলের পরীক্ষার দিন একটি পোস্টারও দেখিনি। কারণ, সেখানে কোনো লিখিত পরীক্ষা নেই।
ঙ. দেড় ঘণ্টার পরীক্ষার জন্য সকাল আটটায় পরীক্ষার কক্ষে ঢুকিয়ে সাড়ে তিনটায় সর্বশেষ পরীক্ষার্থীকে বের করে দেওয়া হয়, যা কোমলমতি পরীক্ষার্থীদের ওপর জুলুম ও অমানবিক। এটি নিঃসন্দেহে স্কুলের কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও হটকারিতা। আজিমপুর সেকশনে তো তিনটি শিশু না পেয়ে অভিভাবকেরা থানায় খবর দেন এবং পরবর্তী সময়ে পরীক্ষার কক্ষ থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করা হয় (পত্রিকায় প্রকাশিত খবর)।
শুধু প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির এ নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি, অনিয়ম ও দুর্নীতি দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাচ্ছি। সরকারি স্কুলগুলোর মতো ক্যাটাগরিভিত্তিক প্রি-স্কুলের পাঠ্যবই থেকে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিয়ে নির্দিষ্ট স্কুলে পরীক্ষার্থী সিলেকশন করা যেতে পারে।
সরকারি তদারকির মাধ্যমে প্রি-স্কুল পাঠ্যবই থেকে (প্রয়োজন হলে সিলেবাস করে দেওয়া যেতে পারে) প্রশ্নপত্র তৈরি করে বিভিন্ন স্কুলে সরবরাহ করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। আসনসংখ্যার বেশি পরীক্ষার্থী শতভাগ নম্বরপ্রাপ্ত হলে লটারির মাধ্যমে সিলেকশন করা যেতে পারে।
হলিক্রস স্কুলের মতো প্রথম শ্রেণীর ভর্তির জন্য অনেক বড় বা বেশি ছোট পরীক্ষার্থীদের বাদ দেওয়ার জন্য শিক্ষকদের নিয়ে ছোট ছোট কমিটি করে প্রিলিমিনারি সিলেকশন করে লটারির মাধ্যমে প্রয়োজনীয়সংখ্যক আসন পূরণ করা যেতে পারে।
মো. শামসুল হক, মিরপুর, ঢাকা।

লিখুন, পাঠিয়ে দিন
প্রিয় পাঠক, প্রথম আলোয় প্রকাশিত সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, প্রতিবেদন ইত্যাদি নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া/ভিন্নমত আমাদের লিখে পাঠান। সমসাময়িক অন্যান্য বিষয়েও আপনার অভিমত, চিন্তা, বিশ্লেষণ সর্বোচ্চ ৪০০ শব্দের মধ্যে লিখে
পাঠিয়ে দিন এই ঠিকানায়:

অভিমত, সম্পাদকীয় বিভাগ, প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা।
ই-মেইল: obhimot@prothom-alo.info

No comments

Powered by Blogger.