খালেদার জনসভায় যেতে বাধা ভাঙচুর আহত ২৫

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জনসভায় যাওয়ার পথে দলের নেতা-কর্মীদের সরকার সমর্থকরা বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল শনিবার দুপুরের আগে-পরে শ্রীপুর উপজেলার বরমী ও রাজাবাড়ী বাজার এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে বলে এলাকাবাসী জানায়।


স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন যুবলীগ-ছাত্রলীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতার নেতৃত্বে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বহনকারী বিভিন্ন ধরনের ২০-২২টি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। হামলায় তাদের অন্তত ২৫ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। হামলাকারীরা স্থানীয় সংসদ সদস্যের ছেলে জামিল হাসান দুর্জয়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। এক ঘণ্টা ধরে চলা হামলার সময় পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা নীরব ছিল।
পুলিশ বলেছে, হামলা ও ভাঙচুরের বিষয়টি তাদের জানা নেই। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, এ ঘটনায় তাঁদের কেউ জড়িত নয়।
আগের দিন রাতে ঢাকা-কাপাসিয়া সড়কে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানিয়ে লাগানো ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড ও তোরণ ভাঙচুর করা হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজেন্দ্রপুর বাজার থেকে কাপাসিয়ার ফকির মজনু সেতু পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে লাগানো হাজার হাজার ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড এবং তোরণ ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে দাবি করেছে বিএনপি।
বিএনপির নেতা-কর্মী ও স্থানীয় লোকজন জানায়, শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ী, বরমী এলাকার বালুঘাট ও পশ্চিম বাজার, কাপাসিয়ার সিংহস্রী বাজার, পাকুন্দিয়া রোড, টোক বাজার, আঁড়াল বাজার, হাতিরদিয়া রোডসহ বিভিন্ন স্থানে বাধাদান, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এসব স্থানে হামলার ঘটনা ঘটে। শ্রীপুরে উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি কমর উদ্দিন, রাজেন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আসকর আলী ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল হোসেন, বরমী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি শরীফ মৃধা ও ছাত্রলীগ ক্যাডার হিসেবে পরিচিত মিজানের নেতৃত্বে তাদের সমর্থক ও ক্যাডাররা হামলা চালায়। হামলাকারীরা বিএনপিকর্মীদের যানবাহন থেকে নামিয়ে পরনে থাকা দলীয় স্লোগান সংবলিত টি-শার্ট খুলে আগুন ধরিয়ে দেয়। হামলা-ভাঙচুরের কারণে আতঙ্কিত হয়ে বিএনপির অনেক কর্মী-সমর্থক ফিরে গেছেন বলেও দাবি করেন দলের নেতারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজাবাড়ী বাজারের কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, বড় বড় দা, লাঠি ও লোহার রড নিয়ে সরকারি দলের ক্যাডাররা পুলিশের সামনেই বিএনপি নেতাদের বহনকারী যানবাহন যেতে বাধা দেয় এবং সেগুলোতে হামলা চালায়।
বিএনপি নেতা ও গাজীপুরের কাশিমপুর ইউনিয়নের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান শওকত হোসেন সরকার সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, গতকাল দুপুর ১টার দিকে জনসভায় যাওয়ার সময় রাজাবাড়ী বাজারে সরকার সমর্থকরা তাঁর প্রাইভেট কারে হামলা চালায়। একই সময় তাঁর সমর্থকদের বহনকারী সাত-আটটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। তিনি জানান, গাজীপুর, কালিয়াকৈর ও আশপাশের নেতা-কর্মীদের বহনকারী গাড়ি রাজাবাড়ী পৌঁছালে একইভাবে হামলা করা হয়।
রাজাবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি কুতুব উদ্দিন জানান, যানবাহন আটকে দেওয়া এবং হামলার কারণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে অনেকেই ফিরে যেতে বাধ্য হন। পরে খবর পেয়ে শ্রীপুর থানার ওসি আক্তারুজ্জামান ও শ্রীপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মুসফিকুর রহমান রেজা অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং বিএনপি নেতা-কর্মীদের বহনকারী যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করেন।
এর আগে সাড়ে ১১টার দিকে জনসভায় যাওয়ার পথে বরমী এলাকার বালুঘাট ও পশ্চিম বাজারে যানবাহনে হামলা হয়। বরমী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি আকতারুজ্জামান মোল্লা শামীম জানান, হামলায় তাঁরটিসহ পাঁচ-ছয়টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। হামলায় তিনি নিজে, ইউনিয়ন ওলামা দলের সভাপতি রমজান মাস্টার ও সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক আহত হয়েছেন। এনামুল হকের ডান পা ভেঙে গেছে। তাঁকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়ছে।
জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সবুজ বলেন, 'বাধা দিয়ে আওয়ামী লীগ খালেদা জিয়ার সভা বানচালের চেষ্টা করেছে, কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। বাধা উপেক্ষা করে সর্বস্তরের মানুষ জনসভায় যোগ দেয়।'
অভিযোগ অস্বীকার করে রাজাবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, যানবাহনে বাধা ও হামলার সঙ্গে তাঁদের দলের কেউ জড়িত নয়।
শ্রীপুর থানার ওসি আক্তারুজ্জামান জানান, যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনা তাঁর জানা নেই। বিরোধীদলীয় নেতা এবং জনসভায় যোগদানকারী নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত ছিলেন তাঁরা।

No comments

Powered by Blogger.