জনরায়ে ইঙ্গিত by মো. মেফতাউল ইসলাম

১৫ জুন অনুষ্ঠিত চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হওয়ায় রাজনীতির ময়দানে নতুন করে হিসাব কষতে হচ্ছে।
এই নির্বাচনী ফলাফল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয়ের জন্যই কিছু ইতিবাচক ফল নিয়ে এসেছে। বিএনপি বলছে, জনগণ বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকারি দলকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। আবার আওয়ামী লীগ বলছে, এ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হলো দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। সুতরাং দল দুটির বিপরীতমুখী অবস্থানের জন্য আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
এবারের নির্বাচনকে স্থানীয় নির্বাচন বলার তেমন সুযোগ নেই। এ নির্বাচন স্থানীয় মোড়কে হলেও বাস্তবে দেখা গেছে জাতীয় ইস্যুই জনগণকে প্রভাবিত করেছে বেশি এবং দলীয় পরিচয়ই পালন করেছে মুখ্য ভূমিকা। যে কারণে কেউ কেউ ব্যক্তিগত ইমেজ, কাজ, উন্নয়নের দ্বারা নন্দিত, সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও হয়েছেন পরাজিত।
এ নির্বাচন আগামী জাতীয় নির্বাচনকেও প্রভাবিত করবে কিনা তা নিয়ে অনেকেই চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। আমার মনে হয়, এই নির্বাচন অবশ্যই আগামী জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। এ জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনেকে সরকারকে আগামীতে আর কোনো নির্বাচন না দিতে পরামর্শ দিচ্ছেন। ফলে ঈদের পর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হলো। বিশেষত ঢাকা সিটি নির্বাচনে পরাজিত হলে তা নেতাকর্মীদের চরমভাবে হতাশ করে তুলতে পারে। তাই জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগ এ ধরনের রিস্ক নেবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এসব প্রার্থীই জনগণের ব্যাপক ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। তাই প্রশ্ন, মাত্র সাড়ে চার বছরের ব্যবধানে তাদের এ ভরাডুবি কেন? তারা কি জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিলেন? নাকি আওয়ামী লীগের জাতীয় পর্যায়ে ব্যর্থতা তাদের পরাজয়ে নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছে? আমার মনে হয়, আওয়ামী লীগের সার্বিক কর্মকাণ্ডের কাছেই পরাজিত হয়েছেন তাদের সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ, শেয়ারবাজারে কেলেঙ্কারি, হলমার্ক ও ডেসটিনি গ্রুপের অর্থ লুটপাট, ছাত্রলীগের বাড়াবাড়ি, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গুম, নির্যাতন, গণগ্রেফতার, তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে স্বেচ্ছাচারিতা, সাংবাদিক নির্যাতন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে টালবাহানা ইত্যাদি জনগণ ভালোভাবে নেয়নি। যার ফলে ব্যালট বাক্সে তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। এই নির্বাচনে বিএনপির নিরঙ্কুশ বিজয়ের ফলে তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির বিষয়টি আরও জোরালো হয়েছে। কেননা জনগণ যেহেতু বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের নতুনভাবে নির্বাচিত করেছে। সুতরাং জনগণ বিএনপির দাবিগুলোকে যৌক্তিক হিসেবেই ধরে নিয়েছে।
তাই এ নির্বাচনের ফল থেকে সরকার শিক্ষা না নিলে তা ভবিষ্যতে তাদের জন্য মহাবিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সরকারের উচিত তাদের মেয়াদের বাকি সময়টায় হৃত জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা। আর সে জন্য প্রয়োজন হবে দেশকে সুশাসন উপহার দেওয়া। অন্যদিকে বিএনপিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আরও ভালো করতে হলে তাদের উচিত হবে বাকি সময়ে একটি যথার্থ দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের পরিচয় দেওয়া। অযৌক্তিক হরতাল ও সহিংসতার রাজনীতি থেকে অবশ্যই তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। জনগণ বিএনপির প্রতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে আস্থা স্থাপন করেছে তাদের উচিত হবে তার যথাযথ মূল্যায়ন করা।
য় মো. মেফতাউল ইসলাম :শিক্ষার্থী
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.