এক নাইজেরীয় ও তিন নারীসহ গ্রেপ্তার ১০-১৩০০ গ্রাম হেরোইন, ৩০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার

রাজধানীতে আলাদা অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গত বৃহস্পতিবার রাতে উত্তরা ও রামপুরায় অভিযান চালিয়ে এক কেজি ৩০০ গ্রাম হেরোইন,
তিন হাজার ১০০ জাল ডলার নোট, ১৪৪ ক্যান বিয়ার, দুই বোতল বিদেশি মদ, একটি প্রাইভেট কারসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেন র‌্যাব ১-এর সদস্যরা। গ্রেপ্তারকৃত দলের প্রধান হলো নাইজেরিয়ার নাগরিক অনিকা গডসন বামালো (৩৪)। তার সহযোগী হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পায়েল বেগম (২৮) ও নীলিমা লাবণ্য (২৮) নামের দুই বাংলাদেশি তরুণীকে। আবুল কাশেম (৫২) নামের এক গাড়িচালককেও গ্রেপ্তার করা হয়। র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারকৃতরা আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্য। নাইজেরীয় নাগরিক আফগানিস্তান থেকে ওই হেরোইন বাংলাদেশে নিয়ে আসে। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে এসব হেরোইন চীনে পাচারের চেষ্টা চলছিল।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ওই দিন রাত ২টা পর্যন্ত রাজধানীর চকবাজার, কমলাপুর ও বনশ্রী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। গ্রেপ্তারকৃতদের একজন ম্যানিলা চৌধুরী (২২) ঢাকার একটি কলেজের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, সে বর্তমানে শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের একজন। সে পারমিতা ছদ্মনাম ধারণ করেছে। গ্রেপ্তার হওয়া ম্যানিলার সহযোগীরা হলো কুলসুম (৩২), আবু তাহের (৪৮), জানে আলম (৪৫), আব্দুল খালেদ (৩০) ও আসিফ হোসেন (২৪)।
র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলন : গতকাল শুক্রবার দুপুরে উত্তরার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব ১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কিসমত হায়াত জানান, বৃহস্পতিবার রাতে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডের ৭ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে নাইজেরিয়ার নাগরিকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। চক্রটি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে চীনে হোরোইনের চালান পাঠাচ্ছিল। রামপুরা থেকে তাদের ওই চালান আটক ও বাসায় অভিযান চালিয়ে মোট এক কেজি ৩০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করেছে র‌্যাব। অভিযানকালে বাসায় আরো পাওয়া গেছে তিন হাজার ১০০ জাল ডলার নোট, ১৪৪ ক্যান বিয়ার ও দুই বোতল মদ। গ্রেপ্তার হওয়া নাইজেরিয়ান গডসন বামালো বাসাটি ভাড়া নিয়ে থাকত বলে জানা গেছে।
কিসমত হায়াত আরো জানান, ওই হেরোইন পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ভারত হয়ে বাংলাদেশে আনা হয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে গ্রেপ্তারকৃতরা। গ্রেপ্তারকৃত দুই নারী দীর্ঘদিন ধরে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। পায়েলের স্বামী একজন নাইজেরিয়ান, যে আগেই বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছে। আবুল কাশেম তাদের গাড়িচালক, সে দীর্ঘ সময় ধরে মাদক পরিবহনের কাজে সহায়তা করে আসছে।
র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, আসামিরা গত বৃহস্পতিবার কুরিয়ার সার্ভিস ডিএইচএলের রামপুরা শাখা থেকে কাপড়ের বাক্সের মাধ্যমে হেরোইনের একটি চালান চীনে পাঠানোর চেষ্টা করে। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে র‌্যাব চালানটি না পাঠানোর জন্য ডিএইচএলকে অনুরোধ করে। পরে র‌্যাব কাপড়ের বাক্সটি উদ্ধার করে ভেতরে ৪৩টি আন্ডারওয়্যারের প্যাকেট পায়। প্রতিটি আন্ডারওয়্যারের প্যাকেটের মধ্যেই হেরোইন পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বামালোর উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের বাসায় অভিযান চালিয়ে একই রকম ৫৭টি হেরোইন লুকানো আন্ডারওয়্যারের প্যাকেট পাওয়া যায়। হেরোইন প্রক্রিয়াজাত করার কিছু সরঞ্জামও পাওয়া যায়। বাসা থেকে তিন হাজার ১০০ জাল ডলারও উদ্ধার করা হয়। বামালো জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তার এই চক্রের সঙ্গে আরো কয়েকজন নাইজেরিয়ান জড়িত। তারা জাল ডলারের ব্যবসাও করে। এ ঘটনায় গতকাল উত্তরা-পশ্চিম থানায় মামলা দায়েরের পর আসামিদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে র‌্যাব।
পুলিশের সংবাদ সম্মেলন : গতকাল সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (জনসংযোগ) দপ্তরে গ্রেপ্তারকৃতদের উপস্থিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, 'ইয়াবা রানি' হিসেবে কুখ্যাত ম্যানিলা চৌধুরী তিতুমীর কলেজের ফিন্যান্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। সে সংঘবদ্ধ মাদক ব্যবসায়ী চক্রের সদস্য। এই চক্রে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চাকরিজীবী, আড়তদার, পরিবহন সেক্টরের লোক ও বিভিন্ন পণ্য আমদানিকারক রয়েছে। তাদের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। রোজা ও ঈদ সামনে রেখে মাদক সিন্ডিকেট তাদের মজুদ বাড়াচ্ছে।
ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মশিউর রহমান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে চকবাজার থানার নাজিমুদ্দিন সড়কের হোটেল নীরবের সামনে থেকে জানে আলম ও আসিফকে আটক করা হয়। তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। এ সময় জানে আলমের কাছ থেকে পাঁচ হাজার এবং আসিফের কাছ থেকে চার হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। তাদের তথ্য অনুযায়ী সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রামপুরার বনশ্রী এলাকায় অভিযান চালিয়ে কুলসুম নামের অন্য একজনকে চার হাজার ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গ্রেপ্তার করা হয়। কুলসুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কমলাপুরে অভিযান চালিয়ে গভীর রাতে ম্যানিলা চৌধুরী, আবু তাহের ও খালেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। ম্যানিলার কাছ থেকে ৯ হাজার, আবু তাহেরের কাছ থেকে পাঁচ হাজার এবং খালেদের কাছ থেকে আরো তিন হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। তারা টেকনাফ ও মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে ইয়াবা এনে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে থাকে। ম্যানিলা এর আগে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১০ মাস কারাগারে ছিল। জানে আলম ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দিত। কুলসুম গাজীপুর এলাকার বিভিন্ন লোকের কাছে ইয়াবা সরবরাহ করে। ম্যানিলা, তাহের ও জানে আলম কাজ করত আব্দুস শুক্কুর ওরফে শাকুর হয়ে। শাকু মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার হয়ে ইয়াবা চট্টগ্রামে নিয়ে আসে এবং সারা দেশে সরবরাহ করে। সে ২০০৭ সালে শুক্রাবাদে ব্র্যাক ব্যাংকে ডাকাতি সংঘটিত করেছিল। তাকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে বলে জানান ডিবি কর্মকর্তারা।

No comments

Powered by Blogger.